শিশুর ওজন বৃদ্ধি না হওয়ার অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, আপনি যদি আপনার শিশুর ওজন বৃদ্ধি না হওয়া লক্ষ্য করেন, তাহলে দেরি না করে একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
শিশুর ওজন বৃদ্ধি না হওয়ার কিছু সাধারণ কারণ:
- খাবারের
পরিমাণ ও গুণগত মান: শিশুকে যথেষ্ট পরিমাণ এবং পুষ্টিকর
খাবার না দেওয়া হলে তার ওজন বাড়বে না।
- পরিপাকতন্ত্রের
সমস্যা: কোনো ধরনের পরিপাকতন্ত্রের
সমস্যা যেমন, ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা, সিলিয়াক রোগ ইত্যাদি শিশুর ওজন বৃদ্ধিতে বাধা দিতে পারে।
- রোগ: কোনো ধরনের দীর্ঘস্থায়ী রোগ যেমন, হৃদরোগ, কিডনি রোগ, থাইরয়েড সমস্যা ইত্যাদি শিশুর ওজন বৃদ্ধি না হওয়ার কারণ হতে পারে।
- জিনগত
কারণ: কখনো কখনো শিশুর জিনগত কারণে ওজন বৃদ্ধি ধীরগতিতে
হতে পারে।
- দুধ
চুষতে সমস্যা: শিশু যদি দুধ চুষতে সমস্যা করে তাহলেও তার ওজন বৃদ্ধি হতে পারে না।
- অন্যান্য
কারণ: অতিরিক্ত
ঘামানো, অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম ইত্যাদিও শিশুর ওজন বৃদ্ধিতে বাধা দিতে পারে।
শিশুর ওজন বৃদ্ধি না হলে কী করবেন:
- ডাক্তারের
পরামর্শ নিন: শিশুর ওজন বৃদ্ধি না হলে সবচেয়ে ভালো হবে একজন শিশু রোগ বিশেষজ্ঞের
পরামর্শ নেওয়া।
- শিশুর
ওজন ও লম্বা নিয়মিত মাপুন: শিশুর ওজন এবং লম্বা নিয়মিত মাপুন এবং একটি চার্টে তা রেকর্ড করে রাখুন।
- শিশুকে
পুষ্টিকর খাবার দিন: শিশুকে বয়স অনুযায়ী
পুষ্টিকর খাবার দিন।
- শিশুকে
পর্যাপ্ত পরিমাণে দুধ খাওয়ান: শিশুকে তার বয়স অনুযায়ী
পর্যাপ্ত পরিমাণে মায়ের দুধ বা ফর্মুলা দুধ খাওয়ান।
- শিশুর
স্বাস্থ্যের যত্ন নিন: শিশুর স্বাস্থ্যের
যত্ন নিন এবং কোনো ধরনের অসুস্থতা হলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা করান।
শিশুর ওজন ও উচ্চতা বৃদ্ধির উপায়
শিশুর
স্বাভাবিক বৃদ্ধি
ও
বিকাশ
একজন
অভিভাবকের জন্য
সবচেয়ে বড়
আশা।
শিশুর
ওজন
ও
উচ্চতা
যদি
স্বাভাবিকভাবে না
বাড়ে ,তাহলে
তা
অনেকের
কাছেই
উদ্বেগের কারণ
হয়ে
দাঁড়ায়।
শিশুর ওজন ও উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপায়:
সুষম খাদ্য: মায়ের দুধ: শিশু জন্মের
পর
প্রথম
ছয়
মাস
শুধু
মায়ের
দুধই
তার
জন্য
সবচেয়ে পুষ্টিকর খাবার।
ঠোস খাবার: ছয় মাসের
পর
থেকে
শিশুকে
ধীরে
ধীরে
ঠোস
খাবার
দেওয়া
শুরু
করতে
হবে।
ফল,
সবজি,
দুধ,
দই,
মাছ,
মাংস
ইত্যাদি শিশুর
খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করুন।
পুষ্টিকর খাবার: শিশুকে বিভিন্ন ধরনের
পুষ্টিকর খাবার
খাওয়ানোর চেষ্টা
করুন।
ভিটামিন, খনিজ
লবণ
সমৃদ্ধ
খাবার
শিশুর
বৃদ্ধির জন্য
অত্যন্ত জরুরি।
পর্যাপ্ত ঘুম: শিশুকে তার
বয়স
অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে
দিন।
ঘুমের
সময়
শরীর
নিজেকে
মেরামত
করে
এবং
বৃদ্ধি
পায়।
শারীরিক কার্যকলাপ: শিশুকে খেলাধুলা করতে
উৎসাহিত করুন।
শারীরিক কার্যকলাপ শিশুর
হাড়
এবং
মাংসপেশির বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
স্বাস্থ্য পরীক্ষা: নিয়মিত শিশুর
স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান।
কোনো
রোগ
বা
সংক্রমণ থাকলে
তা
চিকিৎসা করান।
ধৈর্য:সব
শিশুর
বৃদ্ধির হার
একই
হয়
না।
কিছু
শিশু
তাদের
সমবয়সীদের চেয়ে
ধীরে
বৃদ্ধি
পায়।
তাই
ধৈর্য
ধরে
শিশুর
যত্ন
নিন।
কখন চিন্তিত হবেন?
- যদি আপনার শিশু তার বয়স অনুযায়ী
ওজন বা উচ্চতায় অনেক পিছিয়ে থাকে।
- যদি শিশু দুর্বল, অসুস্থ বা অন্ধকার দেখায়।
- যদি শিশুর ওজন কমতে থাকে।
ডাক্তারের পরামর্শ কেন জরুরি?
- শিশুর ওজন ও উচ্চতা বৃদ্ধির পিছনে কোনো গুরুতর সমস্যা থাকতে পারে।
- ডাক্তার শিশুর স্বাস্থ্য
পরীক্ষা করে সমস্যার সঠিক কারণ নির্ণয় করতে পারবেন।
- ডাক্তারের
পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিলে শিশুর স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে।
· বয়স অনুযায়ী বাচ্চার ওজন কত হওয়া উচিত
বয়স : ছেলেদের (আদর্শ): মেয়েদের (আদর্শ)
৬ মাস ৭.৮ কেজি ৭.২ কেজি
১ বছর ১০.২ কেজি ৯.৫ কেজি
২ বছর ১২.৩ কেজি ১১.৮ কেজি
৩ বছর ১৪.৬ কেজি ১৪.১ কেজি
৪ বছর ১৬.৭ কেজি ১৬ কেজি
৫ বছর ১৮.৭ কেজি ১৭.৭ কেজি
৬ বছর ২০.৬৯ কেজি ১৯.৫ কেজি
৭ বছর ২২.১ কেজি ২১.৯ কেজি
৮ বছর ২৫.৩ কেজি ২৪.৮ কেজি
৯ বছর ২৮ কেজি ২৬ কেজি
১০ বছর ৩২ কেজি ৩২ কেজি
১১ বছর ৩৬ কেজি ৩৫ কেজি
১২ বছর ৪৫ কেজি ৪৪ কেজি
জন্মের
সময়
শিশুর
ওজন
বিভিন্ন কারণের
উপর
নির্ভর
করে,
যেমন:
গর্ভকালীন মায়ের স্বাস্থ্য: মায়ের পুষ্টি,
স্বাস্থ্য সমস্যা,
এবং
গর্ভাবস্থার সময়কাল এই
বিষয়টিতে প্রভাব
ফেলতে
পারে।
শিশুর জাতি: বিভিন্ন জাতির
শিশুর
জন্মের
সময়
ওজনের
গড়
কিছুটা
ভিন্ন
হতে
পারে।
শিশুর লিঙ্গ: সাধারণত ছেলে
শিশুর
ওজন
মেয়ে
শিশুর
তুলনায় কিছুটা
বেশি
হয়।
জন্মের সময়: যদি শিশু
সময়ের
আগে
জন্ম
হয়,
তাহলে
তার
ওজন
সাধারণত কম
হতে
পারে।
সাধারণত, সুস্থ একটি শিশুর জন্মের সময় ওজন ২.5 থেকে 4 কিলোগ্রামের মধ্যে হওয়া উচিত। তবে এই
ওজন
একটি
আদর্শ,
সব
শিশুর
ওজন
এই
পরিসরেই হবে
এমন
নয়।
কেন জন্মের সময় শিশুর ওজন গুরুত্বপূর্ণ ?
- শিশুর স্বাস্থ্য:
- জন্মের সময় খুব কম বা খুব বেশি ওজন থাকলে, শিশুর স্বাস্থ্যের
জন্য বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- ভবিষ্যত স্বাস্থ্য:
- জন্মের সময় ওজন শিশুর ভবিষ্যত স্বাস্থ্যের
উপরও প্রভাব ফেলতে পারে।
জন্মের সময় শিশুর ওজন কম হলে কী করবেন ?
- চিন্তা
না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিন:
- ডাক্তার শিশুর ওজন কম হওয়ার কারণ খুঁজে বের করবেন এবং প্রয়োজনীয়
পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন।
- ডাক্তারের
নির্দেশ মেনে চলুন:
- ডাক্তার যদি কোনো বিশেষ খাদ্য বা ওষুধের পরামর্শ দেন, তা অবশ্যই মেনে চলুন।
- শিশুকে
বুকের দুধ খাওয়ান:
- বুকের দুধ শিশুর জন্য সবচেয়ে ভালো খাবার, এটি শিশুর ওজন বাড়াতে সাহায্য করবে।
মনে রাখবেন:
শিশুর ওজন
বৃদ্ধি
না
হওয়ার
কারণ
খুঁজে
বের
করে
তার
চিকিৎসা করা
খুবই
জরুরি।
দেরি
করলে
শিশুর
শারীরিক ও
মানসিক
বিকাশ
বাধাগ্রস্ত হতে
পারে।