কি কি কারনে গর্ভপাত হতে পারে এবং করণীয়

 গর্ভপাতের কারণ ও করণীয়

গর্ভপাত হওয়ার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে, গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে গর্ভপাত হয় এবং এর প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে:

গর্ভপাতের কারণ ও করণীয়

ভ্রূণের সমস্যা :

ক্রোমোসোমাল অস্বাভাবিকতা: বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গর্ভপাতের কারণ হল ভ্রূণের ক্রোমোসোমাল অস্বাভাবিকতা। এটি ভ্রূণের বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় জিনগত তথ্যের অসামঞ্জস্যের কারণে হয়।

ভ্রূণের বিকাশজনিত সমস্যা: বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গর্ভপাতের পেছনে ভ্রূণের কোনো বিকাশজনিত সমস্যা থাকে। যেমন, ক্রোমোসোমের অস্বাভাবিকতা, জিনগত সমস্যা ইত্যাদি।

ভ্রূণের হৃদয়, মস্তিষ্ক বা অন্যান্য অঙ্গের বিকাশের সমস্যাও গর্ভপাতের কারণ হতে পারে।

মায়ের শারীরিক সমস্যা:

হরমোনজনিত সমস্যা: থাইরয়েড গ্রন্থি, ডায়াবেটিস বা অন্যান্য হরমোনজনিত সমস্যা গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

গর্ভাশয়ের সমস্যা: গর্ভাশয়ের আকার, আকৃতি বা অবস্থানের সমস্যা গর্ভধারণ বজায় রাখতে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

সংক্রমণ: : গর্ভাবস্থায় কিছু ধরনের সংক্রমণ, যেমন ক্লামাইডিয়া, গনোরিয়া, রুবেলা ইত্যাদি গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

অটোইমিউন রোগ: লুপাস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস ইত্যাদি অটোইমিউন রোগ গর্ভপাতের কারণ হতে পারে।

শারীরিক আঘাত: গর্ভাবস্থায় কোনো ধরনের শারীরিক আঘাত গর্ভপাতের কারণ হতে পারে।

জীবনযাত্রার কারণ:

ধূমপান, মদ্যপান, অতিরিক্ত ক্যাফিন সেবন, অপুষ্টি, অতিরিক্ত ওজন, অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম ইত্যাদি জীবনযাত্রার কারণ গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে

আরও পড়ুন:

গর্ভপাত বা Miscarriage এড়াতে যে সব সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত ? 

গর্ভপাত (Miscarriage) কেন হয় ?জেনে নিন ,গর্ভপাতের লক্ষণ সমূহ কি কি ?

অন্যান্য কারণ:

গর্ভাশয়ের গলার সমস্যা: গর্ভাশয়ের গলা ঠিকভাবে বন্ধ না হলে ভ্রূণ বের হয়ে যেতে পারে।

আঘাত: পেটে কোনো ধরনের আঘাত গর্ভপাতের কারণ হতে পারে।

অনাকাঙ্ক্ষিত যৌন সম্পর্ক: অনাকাঙ্ক্ষিত যৌন সম্পর্কের ফলে হওয়া আঘাত গর্ভপাতের কারণ হতে পারে।

এছাড়াও,

গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম ,অনিয়মিত মাসিক,উচ্চ রক্তচাপ,খুব কম বয়সে বা খুব বেশি বয়সে গর্ভধারণ করলে গর্ভপাতের ঝুঁকি বেশি থাকে।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গর্ভপাতের কোন নির্দিষ্ট কারণ পাওয়া যায় না।একটি গর্ভপাত ভবিষ্যতে সফল গর্ভধারণের সম্ভাবনাকে কমিয়ে দেয় না।যদি আপনার বারবার গর্ভপাত হয়, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

আরও পড়ুন:

গর্ভাবস্থায় পেটে টান টান বা শক্ত অনুভূত হওয়ার কারণ ও করণীয়

গর্ভপাতের লক্ষণ: 

গর্ভপাতের সাধারণ লক্ষণগুলি হল:

  • যোনী থেকে রক্তপাত: গর্ভপাতের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হল যোনী থেকে রক্তপাত। এই রক্তপাত হালকা থেকে ভারী পর্যন্ত হতে পারে এবং এর সাথে জমাট বা টিস্যু বের হতে পারে।
  • পেটে ব্যথা: পেটে ক্র্যাম্প, ব্যথা বা চাপ অনুভূতি হতে পারে। এই ব্যথা সাধারণত পিরিয়ডের ব্যথার মতো হতে পারে।
  • পিঠ ব্যথা: পিঠে ব্যথাও গর্ভপাতের একটি লক্ষণ হতে পারে।
  • যোনিতে স্রাব: যোনিতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি স্রাব হতে পারে।
  • গর্ভাবস্থার লক্ষণগুলি হারিয়ে যাওয়া: বমি বমি ভাব, বমি, বুকের ব্যথা, ক্লান্তি ইত্যাদি গর্ভাবস্থার লক্ষণগুলি হারিয়ে যেতে পারে।

যদি আপনি উপরের কোনো লক্ষণ অনুভব করেন, তাহলে অবিলম্বে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।

গর্ভপাত হলে কী করবেন:

ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন: গর্ভপাতের লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।

বিশ্রাম নিন: শারীরিক মানসিকভাবে বিশ্রাম নিন।

পরিবার বন্ধুদের সাথে কথা বলুন: আপনার অনুভূতিগুলি তাদের সাথে ভাগ করে নিন।

মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলুন: প্রয়োজনে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলুন।

এই তথ্য শুধুমাত্র তথ্যের উদ্দেশ্যে এবং এটি কোনো ধরনের চিকিৎসা পরামর্শ নয়। কোনো স্বাস্থ্য সমস্যার ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

আপনার যদি আরো জানার প্রয়োজন হয়, তাহলে আপনি নিম্নলিখিত সংস্থাগুলোর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন:

Miscarriage Association: www.miscarriageassociation.org.uk

NHS Choices: www.nhs.uk/conditions/miscarriage

আশা করি ,এই তথ্য আপনার উপকারে আসবে।

গর্ভপাত প্রতিরোধে কী করণীয়?

গর্ভপাত প্রতিরোধ: গর্ভপাত হল একটি কষ্টকর অভিজ্ঞতা। যদিও অনেক ক্ষেত্রে এটি এড়ানো সম্ভব না হয়, তবে কিছু পদক্ষেপ নিয়ে গর্ভপাতের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।

  • স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন:
    • সুষম খাদ্য গ্রহণ: ফল, সবজি, শস্যদানা সমৃদ্ধ খাবার বেশি করে খান।
    • নিয়মিত ব্যায়াম করুন: চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হালকা ব্যায়াম করতে পারেন।
    • ধূমপান মদ্যপান এড়িয়ে চলুন: এগুলো গর্ভপাতের ঝুঁকি অনেক বৃদ্ধি করে।
    • ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় সীমিত করুন।
    • চাপ কমানোর চেষ্টা করুন: যোগ, ধ্যান ইত্যাদি করতে পারেন।
  • প্রসবপূর্ব যত্ন:
    • গর্ভধারণের আগে পরে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
    • ফোলিক অ্যাসিডের ট্যাবলেট খান: এটি ভ্রূণের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
    • যেকোনো সংক্রমণের চিকিৎসা করান।
    • যদি আপনার কোনো দীর্ঘস্থায়ী রোগ থাকে, তবে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে ওষুধ সেবন করুন।
  • স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখুন:
    • অতিরিক্ত ওজন বা কম ওজন গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
  • গর্ভাবস্থায় যৌন সম্পর্কের সময় সতর্কতা অবলম্বন করুন:
    • যদি আপনার কোনো যোনী সংক্রমণ থাকে, তবে যৌন সম্পর্ক এড়িয়ে চলুন।

কখন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করবেন?

  • যদি আপনি গর্ভবতী হওয়ার পরিকল্পনা করছেন।
  • যদি আপনার পূর্বে গর্ভপাত হয়ে থাকে।
  • যদি আপনার কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে।
  • যদি আপনি গর্ভাবস্থার কোনো লক্ষণ অনুভব করেন এবং চিন্তিত হন।

মনে রাখবেন:

  • সব গর্ভপাতই প্রতিরোধ করা যায় না। অনেক ক্ষেত্রে, ভ্রূণের ক্রোমোসোমাল সমস্যার কারণে গর্ভপাত হয়।
  • যদি আপনার গর্ভপাত হয়, তাহলে নিজেকে দোষারোপ করবেন না।
  • একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলুন।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

Post a Comment

Previous Next