শীতের মৌসুম
শুরু হোক বা গরম
এই সময় বেশি করেই দেখা
দেখা মেলে সর্দি-কাশির।
নাক বন্ধ ছাড়াও রয়েছে
কাশির অস্থিরতার মত সমস্যা।সর্দি লাগার
জন্য কখনোই কিন্তু শীতকাল বা গরমকাল মোটেই
দায়ী নয়। কেননা এটা
হলো এক
ধরনের ইনফেকশন যা কিনা ভাইরাসের
আক্রমণে হয়ে
থাকে । ২০০ এর ও
বেশি ভাইরাস
রয়েছে যার
আক্রমণের ফলে সর্দি এবং
কাশি হতে পারে।
শীতকালে সর্দি - কাশি হয় কেন?
সাধারণত
দেখা যায় রাইনো ভাইরাস
থেকে সর্দি হয়। এই ভাইরাস ঠাণ্ডা জলবায়ুতে সুস্থ ভাবে বেঁচে
থাকতে পারে। আমাদের শরীর ঋতুর-পরিবর্তনের
সাথে ইনফেকশন-ফাইটিং কোষ তৈরি করে‚
যার ফলে আমরা
তাড়াতাড়ি অসুস্থ হয়ে
পড়ি না। তবে
দুর্ভাগ্যবশত শীতকালের শুষ্ক আবহাওয়ার ফলে আমাদের নাকের
ভেতরে যে লাইনিং রয়েছে তা
শুকিয়ে যায়। আর এই
লাইনিং বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করা থেকে
আটকায়। আর এটি শুকিয়ে
যাওয়ার কারনে ভাইরাস
সহজেই শরীরে প্রবেশ করতে পারে।তাছাড়া শিতকালীন
আবহাওয়া ঠান্ডা হওয়ার কারনে সর্দি - কাশি হওয়ার সম্ভাবনা
থাকে।
প্রয়োজনে জেনে নিন :
শিশুর দাঁতের যত্ন কিভাবে নিবেন ?
জ্বর ঠোসা ( Cold Sore) কি ? কেন হয় এবং সারানোর উপায়
টাইফয়েড কি ? টাইফয়েড জ্বর হলে বুঝার উপায় এবং করণীয় কি ?
গরমকালে সর্দি -কাশি কেন হয়.?
শীতকালের
তুলনায় গরমকালে সম্পূর্ণ আলাদা ভাইরাসের আক্রমণে সর্দি হয়ে থাকে। শীতকালে রাইনোভাইরাসের আক্রমনে সর্দি
হলেও গরমকালে কিন্তু
এন্টেরোভাইরাসের আক্রমনে সর্দি হয়। এন্টেরোভাইরাস
এমন এক ধরনের ভাইরাসের
গ্রুপ যারা কিনা
আমাদের নাকে, গলা,চোখে এবং
ডাইজেস্টিভ সিস্টেমের টিস্যুকে আক্রমণ করে থাকে ।
এই বিশেষ ভাইরাসের
থেকে পোলিও ও হওয়ার সম্ভাবনা
রয়েছে। তবে
পোলিওর টিকা থাকার কারনে আজকাল
আর পোলিও হয় না বললেই
হয়। এন্টেরোভাইরাসের আক্রমণের কারনে অনেকের কোন ধরনের সমস্যা
হয় না আবার অনেকের
গলা খুসখুস‚কাশি, জ্বর‚ গায়ে ব্যথা এবং
বিভিন্ন ধরনের নিঃশ্বাস
সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দেয়।
তাছাড়া গরমকালে এ সির ভিতর থাকার ফলে অবশ্যই সর্দি -কাশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।কেননা বন্ধ ঘরে খুব তাড়াতাড়ি জীবাণু ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। এছাড়া বাইরের তাপমাত্রা এবং ঘরের ভেতরে যে তাপমাত্রায় পার্থক্য ঘটে তার ফলেও সর্দি -কাশি হতে পারে।অনেক সময় দেখা যায় গরমকালে অ্যালার্জির কারণে সর্দি -কাশি হয়ে থাকে ।
অনেকেই রয়েছে যারা কিনা জানেনই না যে তাদের সিজনাল অ্যালার্জির কারনে সর্দি-কাশি হয়। অ্যালার্জিকে অনেক সময় ঠাণ্ডা বা সর্দি হয়েছে বলে ভুল করে থাকি। একটা বিষয় খেয়াল করলে দেখা যায় সেটা 'কমন কোল্ড' না অ্যালার্জি। নাক ঝাড়ার সময়ে খেয়াল রেখে দেখতে হবে যে নাক থেকে যা বেরোচ্ছে তা প্রতিদিন রং বদলাচ্ছে কীনা। যদি প্রতিদিন একই রংয়ের হয় তবে বুঝতে হবে যে অ্যালার্জি থেকে হচ্ছে আর যদি রং পাল্টায় তবে বুঝবেন ঠাণ্ডা লাগার কারণে সর্দি হয়েছে।
তবে ঘন ঘন কাশি কিন্তু সাধারণত কোনও রোগের উপস্থিতির নির্দেশন করে থাকে।বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস ও ব্যাকটিরিয়া বিবর্তনীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কাশি সৃষ্টি করে রোগটিকে নতুন বাহকে ছড়িয়ে দিতে থাকে এবং তার মাধ্যমে তারা উপকৃত হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে , অনিয়মিত ভাবে কাশি হওয়া শ্বাস নালীর সংক্রমণের ফলে ঘটে তবে দম বন্ধ হওয়া , ধূমপান, বায়ুদূষণ,হাঁপানি, অনুনাসিকা থেকে ফোঁটা পড়া, ফুসফুসের টিওমার, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসনালির প্রদাহ মূলক ব্যাধি, ও এনজিওটেনসিনের-রূপান্তর-বাধাদায়ক এনজাইম ও কাশির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
গরম থেকে ঠান্ডা অথবা ঠান্ডা থেকে গরম পড়ার সময় টায় সর্দি-কাশি হওয়ার সমস্যা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। কিন্তু এর মাঝে সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় নাক বন্ধ হলে ও গলার ভেতর খুসখুস করে কাশি আসলে।নাক বন্ধ হওয়ার ফলে না হয় শুয়ে আরাম , না হয় মাথা ভার হয়ে থাকার ফলে দীর্ঘ সময় বসে থাকা । অন্যদিকে কাশির ফলে না ঘুমিয়ে শান্তি লাগে না জেগে থেকে। কাশতে কাশতে দম বন্ধ হয়ে আসে। কখনো কখনো তো আবার কাশতে কাশতে বমি ও হয়ে যায়, সাথে বুক, পিঠ, মাথা ব্যাথা হয়ে যায়।
সর্দি -কাশির সমস্যা থেকে মুক্তির উপায়
- বেশি বেশি পানি পান করা।এই সময়ে বেশি বেশি করে পানি পান করুন। কেননা শরীর শুষ্ক হলে কফ বসে যায়। তাই বেশি পানি পান করতে হবে।দিনে কমপক্ষে দুইবার হালকা গরম পানি পান করুন।
- প্রতিদিন গোসল করতে হবে।এতে শরীর ঠান্ডা থাকে সর্দি বা কাশি জমে থাকতে পারেনা। তাই প্রতিদিন গোসল করুন
- যারা ডায়েট করেন তাদের ডায়েটে অবশ্যই গরম দুধ, স্যুপ এবং তরল জাতীয় খাবার রাখুন।
- সর্দি কাশি কমাতে কপালে এবং নাকে গরম ভাঁপ দিতে হবে। গরম পানিতে সুতি কাপড় ভিজিয়ে গরম করে ভাঁপ নিন। তাছাড়া গরম পানি দিয়ে ভাঁপ নিতে পারেন। এতে সর্দি তরল হয়ে বেরিয়ে যায়, নাক ছেড়ে যায় , মাথা ভার থাকলে কমে যায়।
- সর্দি -কাশিতে লবন-পানি টানুন নাক বন্ধের মত সমস্যা দূর হবে।রাতে ঘুমানোর আগে কয়েক চামচ পানিতে সামান্য পরিমাণে লবন মিশিয়ে তা ড্রপার দিয়ে নাকে দিন। এরপর সেই পানি নাকে টানুন।
- কালোজিরের সাথে সামান্য পরিমান কাঁচা সরষের তেল দিয়ে মিশিয়ে দিন তারপর তা দিয়ে ভাত খান। এর ঝাঁঝের ফলে সর্দি কমে যায় খুব তাড়াতাড়ি ।
- সর্দি-কাশি সারাতে লেবু- মধুর জুড়ি মেলা ভার।কুসুম গরম পানির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে খান। এতে গলার খুসখুস ভাব কেটে যাবে কাশি কমে যাবে।
- দুধ-হলুদ সর্দি -কাশি সারাতে সহায়তা করে।দুধের সাথে সামান্য পরিমাণ হলুদ মিশিয়ে প্রতিদিন খান সর্দি-কাশির থেকে মুক্তি পাবেন।
- আমরা জানি তুলসিপাতার অনেক গুন রয়েছে।যা শরিরের অনেক রোগ সারাতে সহায়তা করে।তুলসিপাতার রস করে মধু বা চিনি মিশিয়ে খান।
- কাশি সারাতে বাসক পাতার রস মধু বা চিনি দিয়ে খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
- আনারসও কাশি কমাতে সাহায্যে করে।কাশি হলে আনারস কেটে খান। এভাবে খেতে ইচ্ছা না করলে জুস বানিয়ে ও খেতে পারেন এতে ফলাফল আরও বেশি ভালো পাবেন।
- আদা কাশির একটি যাদুকারি উপাদান হিসেবে কাজ করে । এক চিমটি লবনের সাথে খানিকটা আদা চিবিয়ে রস খান কাশি কমে যাবে। আদা দিয়ে চা বানিয়ে খান এতে ঠান্ডা -কাশি কমে যাবে।
অনেক
সময় দেখা যা কোন
কিছুতেই কাশি কমছেনা তখন গোলমরিচ
এবং মিশ্রি দুটি উপাদান আপনাকে
সাহায্য করবে কাশি
সারাতে গোলমরিচ গুঁড়া করে সাথে মিশ্রি
দিম গরম করে প্রতিদিন
দুইবার খান অতুলনীয়
কাজ করে।তবে
চাইলে শুধু মিশ্রি ও
গরম করে খেতে পারেন।