HPV ভ্যাকসিন হল একটি প্রোটেক্টিভ ভ্যাকসিন যা হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (HPV) থেকে রক্ষা করে। এইচপিভি একটি সাধারণ ভাইরাস যা যৌন সংক্রমণের মাধ্যমে ছড়ায়। এটি বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সার, যেমন জরায়ুমুখ, যোনি, যোনিমুখ, পায়ু, মুখ এবং গলার ক্যান্সার এবং যৌনাঙ্গে ঘা এবং সিলিয়াড টারকোটাইস (পিপিভি) এর কারণ হতে পারে।
এইচপিভি ভ্যাকসিন দেওয়ার কারণ
জরায়ুমুখ ক্যান্সার, যোনি ক্যান্সার, যোনিমুখ ক্যান্সার, পায়ু ক্যান্সার, মুখ এবং গলার ক্যান্সার এবং যৌনাঙ্গে ঘা এবং সিলিয়াড টারকোটাইসের ঝুঁকি কমাতে।
HPV সংক্রমণ এবং এর ফলে সৃষ্ট অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা, যেমন যৌনাঙ্গে ঘা, সিলিয়াড টারকোটাইস এবং পায়ু ক্যান্সার প্রতিরোধে।
এইচপিভি ভ্যাকসিন সাধারণত 9 থেকে 26 বছর বয়সী মেয়েদের এবং ছেলেদের দেওয়া হয়। এটি 6 মাসের মধ্যে 2 বা 3 টি ডোজে দেওয়া হয়।
এইচপিভি ভ্যাকসিন অত্যন্ত কার্যকর। এটি জরায়ুমুখ ক্যান্সার, যোনি ক্যান্সার, যোনিমুখ ক্যান্সার এবং পায়ু ক্যান্সারের 90% পর্যন্ত ঝুঁকি কমাতে পারে।
এইচপিভি ভ্যাকসিনের কিছু সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হল:
ইনজেকশনের স্থানে ব্যথা, লালভাব এবং ফোলাভাব
- ক্লান্তি
- মাথাব্যথা
- পেশী ব্যথা
- জ্বর
এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি সাধারণত হালকা এবং কয়েক দিনের মধ্যে চলে যায়।
এইচপিভি ভ্যাকসিন একটি নিরাপদ এবং কার্যকর উপায় যা জরায়ুমুখ ক্যান্সার এবং অন্যান্য HPV-সম্পর্কিত স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি কমাতে পারে।
HPVএর লক্ষণ:
এইচপিভি সংক্রমণের লক্ষণগুলি প্রায়শই অস্পষ্ট বা অনুপস্থিত থাকে। অধিকাংশ লোক যারা এইচপিভি সংক্রমিত হয় তারা কখনই জানে না যে তাদের এটি রয়েছে। যাইহোক, কিছু লোকের এইচপিভি সংক্রমণের সাথে যুক্ত কিছু নির্দিষ্ট লক্ষণ থাকতে পারে।
প্রয়োজনে আরও জানুন:
যৌনাঙ্গে আঁচিল হল এইচপিভি সংক্রমণের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ। যৌনাঙ্গে আঁচিল হল ছোট, নরম, ফোলাভাব যা যৌনাঙ্গের অঞ্চলে বা মলদ্বারে দেখা দিতে পারে। তারা সাধারণত গোলাকার বা ডিম্বাকৃতির হয় এবং সাদা, গোলাপী বা বাদামী হতে পারে। যৌনাঙ্গে আঁচিল সাধারণত ব্যথাহীন হয়, তবে তারা চুলকানি বা অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে।
জরায়ুমুখের অস্বাভাবিক কোষ হল এইচপিভি সংক্রমণের আরেকটি লক্ষণ যা প্রায়শই অস্পষ্ট বা অনুপস্থিত থাকে। জরায়ুমুখের অস্বাভাবিক কোষগুলি সাধারণত কোন লক্ষণ বা উপসর্গ সৃষ্টি করে না। যাইহোক, তারা জরায়ুমুখের ক্যান্সারে পরিণত হতে পারে।
অন্যান্য লক্ষণ যা এইচপিভি সংক্রমণের সাথে যুক্ত হতে পারে তার মধ্যে রয়েছে:
- মুখের আঁচিল
- পায়ু আঁচিল
- মুখ এবং গলার ক্যান্সার
- পায়ু ক্যান্সার
এইচপিভি ভ্যাকসিন নিবন্ধন কিভাবে করব
বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে একটি জাতীয় এইচপিভি টিকাদান কর্মসূচি চালু রয়েছে। এই কর্মসূচির আওতায়, ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী সকল মেয়েকে বিনামূল্যে এইচপিভি টিকা দেওয়া হয়।
এইচপিভি টিকা নিবন্ধনের জন্য, আপনার নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করতে হবে:
- আপনার বাচ্চার জন্ম নিবন্ধন নম্বর নিন। যদি আপনার বাচ্চার জন্ম নিবন্ধন নম্বর না থাকে, তাহলে আপনি অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন করতে পারেন।
- আপনার বাচ্চার স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করুন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক আপনাকে এইচপিভি টিকাদান কর্মসূচির জন্য নিবন্ধন করতে সাহায্য করবেন।
- আপনার বাচ্চার জন্ম নিবন্ধন নম্বর, স্কুলের নাম এবং শ্রেণির নাম দিয়ে এইচপিভি টিকাদান কর্মসূচির ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করুন।
ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করতে, নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করুন:
- এইচপিভি টিকাদান কর্মসূচির ওয়েবসাইটে যান।
- "নিবন্ধন" ট্যাবে ক্লিক করুন।
- আপনার বাচ্চার জন্ম নিবন্ধন নম্বর, স্কুলের নাম এবং শ্রেণির নাম প্রবেশ করুন।
- "নিবন্ধন" বোতামে ক্লিক করুন।
নিবন্ধন সম্পন্ন হলে, আপনার বাচ্চার স্কুলের প্রধান শিক্ষক আপনাকে টিকাদান তারিখ এবং সময় সম্পর্কে জানান।
আপনি চাইলে, আপনার বাচ্চার জন্য এইচপিভি টিকাদান কর্মসূচির আওতায় নিবন্ধন করতে এইচপিভি টিকাদান কর্মসূচির হটলাইন নম্বর 16263-এ কল করতে পারেন।
এইচপিভি টিকাদান কর্মসূচির আওতায়, মেয়েদের ০, ২, এবং ৬ মাস পর তিনটি ডোজ এইচপিভি টিকা দেওয়া হয়।
জরায়ু মুখের ক্যান্সারের টিকা কোথায় দেওয়া হয়
বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই)র আওতায় জরায়ু মুখের ক্যান্সারের টিকা দেওয়া হয়। ২০২৩ সালের ১৫ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই কর্মসূচির প্রথম ধাপে ঢাকা বিভাগে এই টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে তিন ধাপে বাংলাদেশের আট বিভাগে এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে।
আপনি যদি বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের বাসিন্দা হন, তাহলে আপনি আপনার স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, ক্লিনিক বা হাসপাতাল থেকে এই টিকা পেতে পারেন। এছাড়াও, আপনার এলাকায় যদি কোনও টিকাদান ক্যাম্পেন চলতে থাকে, তাহলে আপনি সেখান থেকেও এই টিকা পেতে পারেন।
জরায়ু মুখের ক্যান্সারের টিকা দেওয়ার জন্য আপনার বয়স ১০ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে হতে হবে। এই বয়সে এই টিকা দুটি ডোজ দেওয়া হয়। প্রথম ডোজ দেওয়ার ছয় মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়।
জরায়ু মুখের ক্যান্সারের টিকা নেওয়ার ফলে জরায়ু মুখের ক্যান্সারের ঝুঁকি ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। তাই এই টিকা নেওয়া জরায়ু মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এপ্যাপিলোমা ভাইরাসের কোন দুইটি জিন ক্যান্সার তৈরির জন্য দায়ী
এই জিনগুলিকে লক্ষ্য করে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য গবেষণা চলছে।
প্রয়োজনে আরও পড়তে পারেন:
পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে,
আপনি যদি এইচপিভি সংক্রমণের লক্ষণগুলি অনুভব করেন তবে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা গুরুত্বপূর্ণ। আপনার ডাক্তার আপনার লক্ষণগুলি মূল্যায়ন করতে এবং প্রয়োজনে সঠিক চিকিৎসা দিতে সক্ষম হবেন।