কিভাবে বুঝবেন আপনি গর্ভবতী দেখে নিন লক্ষন সমূহ


গর্ভধারনের সবচেয়ে প্রচলিত তাৎপর্যপূর্ন লক্ষন হলো  পিরিয়ড বা ঋতুস্রাব হয়ে যাওয়া।প্রতি মাসের

একটা নির্দিষ্ট সময়ে নারীদের পিরিয়ড হয়ে থাকে (সাধারনত ২৮ থেকে ৩২ দিন পর পর) সেক্ষেত্রে  খেয়াল রাখুন আপনার পিরিয়ড ঠিক সময়ে হচ্ছে কিনা। যদি  ২৮ থেকে ৩২ দিন পর পিরিয়ড না হয় তাহলে হয়ত আপনি গর্ভধারন করেছেন।গর্ভধারনের প্রথম  মাস মায়েরা বুঝতেই পারেন না যে তারা গর্ভধারন করেছেন কোনো নারীর পিরিয়ডের প্রথম দিন থেকে গর্ভকালের শুরু হিসেবে ধরা হয়।

কিভাবে বুঝবেন আপনি গর্ভবতী কিনা দেখে নিন লক্ষন সমূহ।


গর্ভধারনের লক্ষণগুলো কি কি? 

গর্ভধারনের সুনির্দিষ্ট  কোনো লক্ষন থাকে না।তবে গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়েদের শারীরিক  কিছু  লক্ষন

দেখা যায়।গর্ভধারনের অন্যান্য লক্ষনের সাথে আপনার শারীরিক লক্ষন গুলো মিলিয়ে নিতে পারেন।গর্ভধারনের লক্ষনগুলো সম্পর্কে  জেনে নিন-

খাবারে অনীহা:

যদি আপনি নতুন গর্ভবতী হন তাহলে স্বাভাবিক ভাবে কিছু কিছু খাবারের প্রতি আপনি অনীহা বোধ করবেন বা আপনার রুচি কমে যাবে।এ সময় আপনি বিভিন্ন খাবারের ব্যাপারে গন্ধ অনুভব করতে

পারেন। যদিও এর কারন নিশ্চিত ভাবে জানা যায়নি, এটা হয়ত আপনার দেহে দ্রুত এস্ট্রোজেন হরমোন বৃদ্ধির কারণে হয়ে থাকে এছাড়াও পূর্বে যে যে খাবার গুলো আপনি পছন্দ করতেন তা হঠাৎ করেই একেবারে অসহ্য লাগতে পারে। গর্ভধারনের পর দিনে বা রাতে যে কোনো সময় খাবার খাওয়ার ইচ্ছা জাগতে পারে।

মানসিক পরিবর্তন :

গর্ভাবস্থায় মানসিক পরিবর্তন একটি সাধারণ বিষয়। আংশিকভাবে এর কারণ হরমোনের পরিবর্তন যা আপনার নিউরোট্রান্সমিটারের মাত্রাকে প্রভাবিত করে।হরমোনের আধিক্যের কারনে রাগ,দুঃখ, অবসাদ হয়ে থাকে। আবার কোনো কারণ ছাড়াই আনন্দিত হওয়া, গর্ভাবস্থায় এমন মুড সুইং হতে দেখা যায়। গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহে যে লক্ষন গুলো দেখা যায় তার মধ্যে এটি অন্যতম।প্রত্যেকেই এই পরিবর্তনে আলাদা ভাবে সাড়া প্রদান করে থাকে।মা হতে যাওয়া অনেকেই এমন উচ্চ মাত্রায় আবেগ প্রবন হতে পারেন যা ভালো বা মন্দ উভয় রকমের হতে পারে।আবার অনেকে সময় বিষন্নতা বা দুচিন্তায় ভুগে থাকেন। 

পেটে গ্যাস হওয়া বা ফোলা ভাব:

গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে অধিকাংশেরই পেটে গ্যাস তৈরি হয় এবং তা নির্গত হওয়ার প্রবনতা দেখা যায়।এছাড়াও পেট ফাপার অনুভূতি হতে পারে যা অনেকটা পিরিয়ড শুরুর  পূর্ব লক্ষনের মতো।এটিও হয় হরমোনের পরিবর্তনের কারণে। কারনে পেট অনেক সময় ফোলা বা মোটা মনে হতে পারে যদিও আপনার জরায়ুতে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি।

ঘন ঘন প্রসাব হওয়া:

হরমোনগত পরিবর্তনের কারনে শরীরে যে কয়েকটি পরিবর্তন ঘটে  তার একটি হলো রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি। হরমোনের পরিবর্তনের কারণে আপনার দেহের কিছু ধারাবাহিক প্রক্রিয়া দ্রুত হয় যা আপনার কিডনিতে রক্ত প্রবাহের হার বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে আপনার মূত্র থলি আরও দ্রুত পূর্ণ হয়ে যায়। যার ফলে আপনার আরও বেশি বার মূত্র ত্যাগ করার প্রয়োজন হয়। গর্ভধারনের প্রথম দুই তিন মাস ঘন ঘন প্রসাব হওয়া খুব স্বাভাবিক যতই আপনার গর্ভাবস্থা এগিয়ে যেতে থাকে সমস্যাটি আরও জটিল হয়।

ক্লান্ত লাগা:

হঠাৎ ক্লান্ত বোধ করা বা ক্লান্তিতে ভেঙে পড়া গর্ভধারনের লক্ষন।কেউ এটা নিশ্চিত করে জানেন না যে ঠিক কি কারনে গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে এই ক্লান্ত ভাব দেখা দেয়। তবে সম্ভবত প্রজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি আপনার ঘুম ঘুম ভাবের জন্য দায়ী। এছাড়াও মর্নিং সিকনেস রাতে ঘন ঘন প্রসাব হওয়ার কারনেও আপনার ক্লান্তি ভাব বাড়াতে   পারে।

স্তনের পরিবর্তন:

গর্ভবতী হওয়ার প্রথম দিকের একটি লক্ষন হলো সংবেদনশীল বা স্পর্শকাতর স্তন। যা হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধির কারণে হয়ে থাকে। অনেক সময় পিরিয়ড শুরুর পূর্বে অনেকের স্তনে এক ধরনের স্পর্শ কাতরতা বা ব্যথা হয়ে থাকে,গর্ভাবস্থায় রকম বা আরও প্রকট ভাবে ব্যথা অনুভূত হয়ে থাকে।

হাল্কা রক্তপাত বা স্পটিং:

কিছু কিছু নারী গর্ভবতী কি না তা জানার আগেই হাল্কা স্পটিং লক্ষ করে থাকেন।অনেকে এটিকে পিরিয়ড বলেও ধারণা করে থাকেন।এটা ওভুলেশন

এর প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে হতে পারে। এটাকে ইমপ্ল্যান্টনেশন বলে কারণ জরায়ুতে ভ্রূন

স্থাপিত হওয়ার সময় রক্তপাত ( হালকা বাদামি রঙের)হতে পারে। প্রক্রিয়াটি ডিম্বাণু নিষিক্ত হওয়ার দিনের মধ্যেই শুরু হয়।এটাও গর্ভবতী হওয়ার লক্ষন হতে পারে।

বমি বমি ভাব:

গর্ভধারন করার থেকে সপ্তাহ পর থেকে সকালে ঘুম থেকে উঠে ক্লান্ত ভাব বমি বমি ভাব হওয়ার প্রবনতা দেখা দেয় বমি বমি ভাব শুধু সকালেই নয় এমনকি দুপুরে রাতেও হতে পারে। গর্ভধারনের সপ্তাহ পর থেকে এই সমস্যাটি দেখা দেয়। কিন্তুু এটা

কখনো কখনো সপ্তাহ থেকে শুরু হতে দেখা যায়। পরবর্তী এক মাস ধরে সমস্যাটি আরও বেশি খারাপের দিকে যেতে থাকে।অনেকের ক্ষেত্রে মাস পরে সমস্যাটি ঠিক হয়ে যায়। আবার কারো কারো  ক্ষেত্রে এটি  ঠিক হতে আরও এক মাস লাগতে পারে। তবে গর্ভাকালের পুরো সময়টা জুরে  বমি বমি ভাব দেখা দিতে  পারে।

শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি:

যদি আপনি আপনার দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা লিপিবদ্ধ করে রাখেন  এবং দেখেন যে আপনার দেহের তাপমাত্রা অন্তত ১৮ দিন ধরে স্বাভাবিকের চাইতে বেশি আছে, তবে তা গর্ভবতী হওয়ার লক্ষন হতে পারে।

মাথা ধরা:

গর্ভধারন করলে মাথার যন্ত্রণা হতে পারে। গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহের শুরুতেই মাথা ব্যথা শুরু হতে পারে। শরীরে হরমোন মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারনেই সমস্যা হয়।

 কোষ্ঠকাঠিন্য:

গর্ভাবস্থায় হরমোনের মাত্রার তারতম্যের কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যে হয়ে  থাকে। হরমোনের বৃদ্ধির কারণে শরীরে হজম প্রক্রিয়ার গতি কমে যায় যার  ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে পিরিয়ড মিস করার পর যদি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দেয় তাহলে এটি গর্ভধারনের লক্ষন হতে পারে।

পিরিয়ড মিসের কতদিন পর প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে হয়?

যদি আপনি কোনো  মাসের পিরিয়ড মিস করেন এবং ওই মাসে কোনো অরক্ষিত মিলন করে থাকেন অর্থাৎ কোনো জন্মনিরোধক ব্যবহার না করে মিলনে আবদ্ধ হন সেক্ষেত্রে আপনি যখনি পিরিয়ড মিস করবেন বা যদি আপনার পিরিয়ডের নির্দিষ্ট সময় চলে যায় তখনি আপনি পিরিয়ড টেস্ট করে নিতে পারেন। এছাড়াও পিরিয়ডের নির্দিষ্ট তারিখ জানা না থাকলে অরক্ষিত মিলনের ২১ দিন পরে টেস্ট করে আপনি জেনে নিতে পারেন আপনি গর্ভধারন করেছেন কিনা।

প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিভাবে করবেন? 

গর্ভবতী হওয়ার লক্ষন দেখা দেওয়ার পর আপনি বাসায় বসেই প্রেগন্যান্সি টেস্ট করে নিতে পারেন। ফার্মেসিতে যেসব টেস্টিং কিট পাওয়া যায় সেগুলোতে প্রসাবের নমুনা নিয়ে  প্রেগন্যান্সি টেস্ট করা হয়।প্রেগন্যান্সি  মিস হওয়ার অন্তত এক সপ্তাহ পরে টেস্ট করে দেখতে পারেন।  যদি পিরিয়ড মিস হওয়ার এক সপ্তাহ পর আপনি প্রেগন্যান্সি টেস্ট করেন এবং নেগেটিভ রেজাল্ট পান তবে কিছু দিন অপেক্ষা করে আবার টেস্ট করুন। এছাড়াও হাসপাতাল এবং গাইনি চিকিৎসকের চেম্বারে গিয়েও প্রেগন্যান্সি টেস্ট করা যায়।

গর্ভবতী হলে করনীয় কি?

আপনি গর্ভবতী কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার পরে  আপনার প্রথম করনীয় হবে একজন স্বাস্থ্য কর্মী বা গাইনি চিকিৎসকের কাছে চেকআপ করিয়ে নিশ্চিত হওয়া এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা।গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়েদের যেসকল পরামর্শ দেওয়া হয় তা  জেনে নিন-

গর্ভবতী হওয়ার প্রথম তিন মাস নিয়মিত ফলিক এসিড ট্যাবলেট আকারে খেতে হবে।

গর্ভাবস্থায় কাচা ফলমূল শাকসবজি ভালো করে ধুয়ে খেতে হবে। কারন সময় নানান ইনফেকশনের ঝুঁকি থাকে  অপরিষ্কার  কাচা ফলমূল থেকে জীবাণু সংক্রামিত হতে পারে।

প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার  যেমন - দুধ,ডিম, মাছ,মাংস ইত্যাদি পর্যাপ্ত পরিমাণে খেতে হবে।

প্যাকেট,  টিনজাত জ্যাংক ফুড ইত্যাদি  খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস ভারী কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

প্রতিদিন ১০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন ডি সেবন করতে হবে।

গর্ভের বাচ্চার সুস্থতা বজায় রাখতে ধূমপান, কোল ডিংকস্,  অতিরিক্ত চা- কফি পান , মদ্য পান করা থেকে বিরত থাকুন।

শাক সবজি, মাছ - মাংস সঠিক তাপে রান্না করে জীবাণু মুক্ত করতে হবে।

গর্ভকালের প্রথম তিন মাস এবং শেষের দুই মাস দূরে ভ্রমন করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

গর্ভবতী মায়ের অবশ্যই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে মাঝে মাঝে চেক আপ করাতে হবে।

গর্ভাবস্থায় ঘন ঘন প্রসাব হওয়ার কারনে শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দিতে পারে। তাই  পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে এবং পানীয় জাতীয় খাবার খেতে হবে।

 সতর্কতা

গর্ভাবস্থায় বাচ্চা মায়ের সুস্থতা নিশ্চিত করার জন্য কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। গর্ভবতী মায়ের সবসময় বাচ্চার নড়াচড়ার দিকে খেয়াল রাখতে হবে।  গর্ভাবস্থা অতিরিক্ত ভারী কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। হাল্কা কাজ করা যেতে পারে। এছাড়াও ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত কোনো রকম ঔষধ সেবন করা থেকে বিরত থাকতে হবে যদি গর্ভকালীন অবস্থায় হাল্কা রক্তপাত বা স্পটিং বেশি পরিমানে দেখা যায় সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অতিরিক্ত মাথা ব্যথা,চোখে ঝাপসা দেখা ইত্যাদি হলে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যেতে হবে।

Post a Comment

Previous Next