টিটেনাস টিকা নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা
টিটেনাস হল একটি ব্যাকটেরিয়া ঘটিত সংক্রমক জনিত রোগ। যাকে আমরা ধনুষ্টংকার বলেও জানি। এই রোগ হলে মাংস পেশীতে খিঁচুনি দেখা দেয়। যা খুবই মারাত্মক। নারীদের ক্ষেত্রে যদি এই রোগ প্রেগন্যান্সি চলাকালীন সময়ে ধরা পড়ে তাহলে মা ও শিশু উভয়ের প্রাণের ঝুঁকি বেড়ে যাবে। অধিকাংশ নারীরাই দেখা যায় গর্ভাবস্থার আগে এই রোগ সম্পর্কে ঠিকমত না জানার কারণে এর ভ্যাকসিন নেন না। যার ফলে গর্ভাবস্থায় এই রোগে আক্রান্ত হন। সেজন্য আমাদের আজকের আর্টিকেলটিতে টিটেনাস টিকা দেওয়ার নিয়ম এবং এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বিস্তারিতআলোচনা করা হয়েছে।
এখন আসুন আমরা টিটেনাস টিকা দেওয়ার নিয়ম এবং এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই,
মেয়েদের টিটেনাস টিকা কেন নিতে হবে ?
মেয়েদের
টিটেনাস টিকা দেওয়ার কারণ
গুলো সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা
করা হলো –
খিঁচুনি
হওয়ার আশঙ্কা থাকে না :
প্রেগন্যান্সি কালীন সময় সবচেয়ে মারাত্মক একটি সমস্যা হল মাংস পেশীর খিঁচুনি। যা ধনুষ্টংকারের কারণে দেখা দিয়ে থাকে। এই খিঁচুনি প্রথমে চোয়ালে দেখা দেয় এবং তারপরে শরীরের বাকি অংশে ছড়িয়ে পড়ে। আর প্রতিটি খিঁচুনি কয়েক মিনিট স্থায়ী থাকে। এরকম করে প্রায়ই তিন থেকে চার সপ্তাহ ঘনঘন খিঁচুনি হতে থাকে। কখনো কখনো খিঁচুনির মাত্রা এতটাই তীব্র হয় যে তার কারণে দেহের হাড় ও ভেঙে যেতে পারে। এর ফলে মেয়েরা তাদের কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে পারে। কিন্তু যদি তারা এই রোগের ভ্যাকসিন আগের থেকে নিয়ে রাখে তাহলে এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না।
প্রাণ
ঝুঁকির আশঙ্কা কমে যাওয়া :
গর্ভাবস্থায় টিটেনাসের সংক্রমণ হলে খিঁচুনি ছাড়াও আপনার জ্বর, ঘাম, মাথাব্যথা, খাবার গিলতে সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া প্রভৃতি লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এই লক্ষণ গুলো সাধারণত সংক্রমণের তিন থেকে একুশ দিন পর প্রকাশ পায়। এসব লক্ষণের মাত্রা যদি তীব্র না হয় তাও আপনার সুস্থ হতে কয়েক মাস সময় লেগে যেতে পারে। তবে লক্ষণের মাত্রা যদি তীব্র হয় তাহলে মা ও শিশু উভয়ের প্রাণ ঝুঁকি আশঙ্কা বেড়ে যেতে পারে। তাই অন্তঃসত্ত্বা নারীদের গর্ভাবস্থায় টিটি টিকা নেয়া খুবই জরুরি।
রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়া :
টিটেনাস ভ্যাকসিন দেওয়ার ফলে মা ও শিশু উভয়ের দেহে ধনুষ্টঙ্কার রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা গড়ে উঠে। এছাড়াও প্রসবকালে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকলে, পরিচ্ছন্নতায় অসতর্কতা যেমন : নবজাতকের নাভী কাটার সময় নোংরা ছুরি, ব্লেড বা কাঁচি ব্যবহার করার ফলে নবজাতকের ধনুষ্টঙ্কার রোগ হতে পারে। সেজন্য এই রোগ প্রতিরোধ করতে হলে গর্ভাবস্থার আগেই সময়মত মেয়েদের টিটেনাস টিকা নিয়ে নেওয়া অবশ্যই জরুরি।
টিটেনাস টিকা কিভাবে নিবেন ?
টিটেনাস
টিকা দেবার নিয়ম গুলো সম্পর্কে
নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো –
টিটি টিকার মোট ৫টি ডোজ রয়েছে। এই ডোজ ৫ টি পুরোপুরি নিতে পারলে এর মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের সময় টিটেনাস প্রতিরোধ করা হয় এবং মা ও শিশু উভয়ের জীবন রক্ষা করা সম্ভব হয়। এই ৫ টি ডোজ দেওয়ার সময় হল –
টিটি
১ :
টিটি
টিকার ১ম ডোজটি আপনার
বয়স ১৫ বছর হলেই
দিতে পারবেন।
টিটি
২ :
টিটেনাস
ভ্যাকসিনের ২য় ডোজটি আপনি
১ম ডোজ দেওয়ার ২৮
দিন পর দিতে পারবেন।
টিটি
৩ :
টিটি
টিকার ৩য় ডোজটি আপনি
২য় ডোজ দেওয়ার ছয়
মাস পর দিতে পারবেন।
টিটি
৪ :
টিটেনাস
ভ্যাকসিনের ৪র্থ ডোজটি আপনি
৩য় ডোজ দেওয়ার ১
বছর পর দিতে পারবেন।
টিটি
৫ :
টিটেনাস
ভ্যাকসিনের ৫ম ডোজটি আপনি
৪র্থ ডোজ দেওয়ার ১
বছর পর দিতে পারবেন।
টিটেনাস টিকা কোথায় গিয়ে দিতে পারবেন ?
টিটেনাস ভ্যাকসিন আপনি নিকটস্থ ক্লিনিক বা হাসপাতাল যেমন : সূর্যের হাসি ক্লিনিক,মেরিস্টোপস ক্লিনিক, বড় হাসপাতাল, সরকারি হাসপাতাল, সরকারী বেসরকারী মেডিকেল কলেজ ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে দিতে পারেন। তবে আপনি যদি সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে এই ভ্যাকসিন নিতে চান তাহলে আপনাকে রবিবার সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৪ টার মধ্যে গিয়ে ভ্যাকসিন নিয়ে আসতে হবে।
টিটি টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
* আপনার যদি এলার্জির সমস্যা থাকে তাহলে ইনজেকশন দেওয়া স্থানে হালকা লালচে হয়ে ফুলে যেতে পারে। এর সাথে অল্প ব্যথা এবং জ্বলতে পারে।
* ভ্যাকসিনের কারণে অনেক সময় আপনার জ্বর চলে আসতে পারে। তবে এই টিকা দিলে হালকা জ্বর হয় যা সাধারণত দুই তিন দিন স্থায়ী হতে পারে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কোন কারন নেই।
* আর টিকা দেওয়ার পর বাহুর পেশিতে হাত দিয়ে ম্যাসাজ করতে থাকবেন। এছাড়াও আপনি যদি চান তাহলে বরফ ঘষে ৫-১০ মিনিট ভ্যাকসিন দেওয়া স্থানে লাগিয়ে রাখতে পারেন।
HPV ভ্যাকসিন কি?HPV Vaccine কেন দেয়া হয় ?
উপসংহার :
সুস্থ
মায়ের কোলে সুস্থ শিশু আমাদের সকলের
কাম্য। এ জন্য গর্ভাবস্থার
আগের থেকেই প্রতিটি
নারীকে
টিটেনাস ভ্যাকসিন নেওয়া উচিত। তাহলে দ্রুত নারীর শরীরে এই রোগের বিরুদ্ধে
লড়াই
করার
ক্ষমতা গড়ে উঠবে। এর
ফলে মা ও শিশুর
জীবন রক্ষা করা সম্ভব হবে।