গর্ভ অবস্থায় বুক জ্বালাপোড়া দূর করার উপায় বিস্তারিত জেনে নিন-
গর্ভাবস্থায়
বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।তেমনি এই
বুক জ্বালাপোড়াকেও একটি সাধারণ সমস্যা
বলা যেতে পারে।এই বুক
জ্বালাপোড়ার সময় কয়েক মিনিট
থেকে কয়েক ঘন্টাও হতে
পারে।শুধু যে নির্ধারিত কোন
কারনেই এমন হয় তা
নয়।বিভিন্ন কারনে এই বুক জ্বালাপোড়া
হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় কখন বুক জ্বালাপোড়া হয় ?
বুকে
জ্বালাপোড়া বা বদহজমের সমস্যা
নির্ধারিত কোন সময়ে নয়
বরং গর্ভাবস্থার যেকোনো সময়ে হতে
পারে। কিন্তু সাধারণত গর্ভকাল বাড়ার সাথেই অ্যাসিডিটির সমস্যা বেসি হতে থাকে।
বিশেষ করে ২৭তম সপ্তাহের
পর থেকেই গর্ভবতী নারীরা বুক জ্বালাপোড়ায় বেশি
ভুগেন।সাধারণত দেখা যায় খাবার
খাওয়ার পর বা পানীয়
পান করার পর অথবা
খাওয়ার অল্প কিছুসময়ের ভিতর
শুলে অ্যাসিডিটির লক্ষণ দেখা যায়। কিন্তু
কখনো কখনো আবার খাবার
খাওয়ার কিছুসময়
পরেও বুক জ্বালাপোড়া
হতে পারে। বুক জ্বালাপোড়ার অনুভূতি
কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘন্টা
পর্যন্ত থাকতে পারে।
গর্ভাবস্থায় বুক জ্বালাপোড়ার কারন-
সাধারণত
গর্ভাবস্থায় শরীরের বিশেষ কিছু হরমোন৷ তুলনামূলক
আগের থেকে বেশি পরিমাণে
সৃষ্টি হয়। এই হরমোনগুলোর
পকারনে পাকস্থলী থেকে গলায়
উঠে আসতে পারে এসিড
। এই অবস্থায় হলে
বুক জ্বালাপোড়া হয়।
শুনতে
একটু অদ্ভুত
লাগলেও এক গবেষণায় দেখা
গিয়েছে , গর্ভাবস্থায় যেসকল নারীরা বুকে
বেশি জ্বালাপোড়া
অনুভব করেছেন, সেই সকল নারীদের
গর্ভের শিশুর চুল তুলনামূলকভাবে
অনেক বেশি নিয়ে
জন্মেছে। এ থেকে ধারণা
করা হয়, যে সকল হরমোনের
ফলে বুক জ্বালাপোড়া বেশি
হয় , সেই সকল হরমোনে
গর্ভের শিশুর চুল বড় থাকার
পেছনে বড় ভূমিকা রাখে।
কিন্তু এই
বিষয়ের নিশ্চিত কোন প্রমাণ
পাওয়া যায়নি এখনো
অন্যদিকে
গর্ভে বাড়ন্ত শিশুর কারনে পাকস্থলীতে চাপের ফলে এসিড
ওপরে উঠে যায় বলে
ধারণা করা হয়। এটাও
বুক জ্বালাপোড়া বেশি করে দিতে
পারে তার সাথে সাথে বাড়ন্ত
শিশু পরিপাক নালীতে চাপ বাড়িয়ে দেওয়ার
ফলে হজমের গতি কমে যায়।এতে
ও বুক জ্বালাপোড়া হতে
পারে।
এছাড়াও
গর্ভাবস্থায় আরো কিছু কারন
রয়েছে যেগুলোর ফলে বুক জ্বালাপোড়া
হতে পারে। সেগুলো হলো -
১.প্রয়োজনের চেয়ে খাবার বেশি
খাওয়া
২.তেল মশলাযুক্ত খাবার
খাওয়া।
৩. বাইরের
খোলা, অস্বাস্থ্যকর খাবার এবং মুখরোচক খাবার
বেশি খাওয়া
৪. খাবার খাওয়ার সাথে সাথেই শোয়া
।
৫. মানসিক
দুশ্চিন্তায় থাকা।
৬.টকজাতীয় খাবার খাওয়ার ফলে।
৭.কফি পান এবং
চকলেট খেলে।
৮ অতিরিক্ত ওজন এর ফলে।
৯.গর্ভাবস্থার আগেই বদহজমের
সমস্যা থাকার কারনে।
১০.ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ফলে।
১১.আগের কোনো গর্ভকালীন
সময় বুক জ্বালাপোড়া করলে।
১২.তৈলাক্ত খাবার বেশি খেলে।
১৩.পানি কম খেলে।
১৪.খাবার চিবিয়ে না খাওয়া।
১৫.চলাফেরা কম করা।
বুক জ্বালাপোড়ার লক্ষন-
- পেট ভরা ভরা লাগা।
- বুকে ব্যাথা হওয়া।
- গালে টক স্বাদ আসা।
- বমি বমি অনুভব হওয়া বা বমি হওয়া।
- গলায় খাবার উঠে আসা এবং গলা জ্বলা।
প্রথম সিজারের কত দিন পর দ্বিতীয় সন্তান নেয়া নিরাপদ ?
গর্ভাবস্থায় বুক জ্বালাপোড়া দূর করার কিছু ঘরোয়া উপায়
১.পানি বেশি পান
করুন
কথায়
আছে পানির অপর নাম জীবন।
তবে এটা শুধু কথার
কথা নয়।পানি হচ্ছে সুস্থ থাকার সবচেয়ে ভাল উপশম। চেষ্টা
করুন বেশি বেশি পানি
পান করার। দিনে কম করে
হলেও আট থেকে দশ
গ্লাস। শুধু যে পানিই
খেতে হবে এমন নয়।পানির
পরিবর্তে আপনি তরল জাতীয়
খাবার খেতে পারেন যেমন
-যে কোন ফলের রস
( কমলা, আঙ্গুর, , আপেল, ডাব ইত্যাদি) পান
করুন।
তবে খেয়াল রাখবেন খাবার খাওয়ার সময়ে আবার পানি বেশি খাবেন না। এতে পেট বেশি ভরে উঠে। এই জন্য খাওয়ার ভিতর পানি খাওয়ার পরিবর্তে খাওয়ার কিছুসময় আগে বা কিছু সময় পরে পানি খাবেন।
২.অল্প করে হলেও
বার বার খান
গর্ভাবস্থায়
কখনোই যে কোনো
ধরনের খাবার
একবারে বেশি পরিমাণে খেতে
ইচ্ছা করে না ।
আবার ভরপেট খেলেও বুক জ্বালাপোড়ার সমস্যা
বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ।তাই দৈনিক
তিনবেলা খাবার খাওয়ার পরিবর্তে খাবারগুলোকে সারাদিনে
ভাগ করে অল্প অল্প করে
তিনবেলার জায়গায় ছয়
বেলা খেতে পারেন।
এতে কিছুক্ষণ পর পর খাওয়ার ইচ্ছাটা পূরণ হয়,তার পাশাপাশি অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা রোধ করা সম্ভব ।
৩. সোজা হয়ে বসুন
এবং খাবার
চিবিয়ে খান
খাওয়ার
সময় সবসময় সোজা হয়ে বসে
খান। তাতে পাকস্থলীর ওপর
চাপ কমবে। এতে বদহজম প্রতিরোধ
হয়।
খাবার
যদি ভালো করে চিবিয়ে
খান তাহলে পাকস্থলীতে গিয়ে খাবার হজম
প্রক্রিয়া কিছুটা হলেও সহজ হবে।
তাছাড়া দ্রুত খাবার খেলে ও কথা
বললে খাবারের সাথে সাথে বাতাস
মুখে ঢুকে । তাতে
পেটে বেশি গ্যাস সৃষ্টি
হয়। তাই মনোযোগ
সহকারে সময় নিয়ে খাবার চিবিয়ে
খান। এতে বদহজম এবং
অ্যাসিডিটি কিছুটা
কমবে।
৪.ঘুমানোর আগেই খাবেন না
সাধারণত
রাতে খাওয়ার
পর পরই সবাই ঘুমাতে
যায়।এমনটা করা যাবে না।
ঘুমাতে যাওয়ার কমপক্ষে তিন
ঘন্টা আগে রাতের খাবার
খান। তাছাড়া দিনের বেলা খাওয়ার সাথে
সাথে শুয়ে
পড়বেন না। খাওয়ার সাথে
সাথে শুয়ে পড়লে বুক
জ্বালাপোড়া বেশি হতে পারে।
৫..
কিছু খাবার এড়িয়ে যান
যেসকল খাবার
খেলে বা পানীয় পান
করলে বুক জ্বালাপোড়া বেশি
হয় বুঝবেন, সেগুলো এড়িয়ে চলুন। পারে কফি, চকলেট,
কোমল পানীয়,লেবুজাতীয় ফল, টমেটো ইত্যাদি
৬..
ঘুমের সময় মাথার অবস্থান
ঠিক করুন
ঘুমানোর
সময় ঘাড় ও মাথা
শরীর থেকে প্রায়
ছয়–আট ইঞ্চি উঁচু
করে ঘুমানোর চেষ্টা করুন। তোষক বা খাটের
নিচে শক্ত কিছু দিয়ে
উঁচু করে নিন। সেদিকে
মাথা ও ঘাড় রেখে
ঘুমান। তাতে পাকস্থলীর এসিড
ওপরের দিকে ওঠার সম্ভাবনা
কিছিটা কম হয়।
কিন্তু
মাথার নিচে একাধিক বালিশ
দেবেন না। এতে বুক
জ্বালাপোড়া কমা করতে তেমন কোন
সাহায্য করে না।
৭.ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন
একজন
নারীর ওজন গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিক
এর চেয়ে১১.৫ কেজি–১৬
কেজি বাড়লে
তাকে স্বাভাবিক ধরা হয়।এই জন্য
গর্ভকালীন সময় আপনার ওজন
এর চেয়ে যেন বেশি
না বাড়ে, সেই দিকে লক্ষ
রাখুন। অতিরিক্ত ওজনের ফলে বুক জ্বালাপোড়া
হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৮.গর্ভকালীন সময়ে ঢিলেঢালা পোশাক বেছে
নিন। আঁটসাঁট পোশাক পরলে পেটে চাপ
সৃষ্টি হয়।
তাতে বুক
জ্বালাপোড়া অনুভূত হতে পারে।
৯. মানসিক চাপের ফলেও অনেক
সময় বুক জ্বালাপোড়া তৈরি
হতে পারে।তাই সবসময় চাপমুক্ত থাকার জন্য
চেষ্টা করবেন।
১০. এমন
কিছু যোগব্যায়াম এবং মেডিটেশনের রয়েছে
যেগুলোর মাধ্যমে গর্ভাবস্থায়
মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে
সেগুলো করার চেষ্টা করুন।
১১.আপনি যদি মদ
বা সিগারেট অথবা বিভিন্ন নেশা
জাতীয় জিনিসে আসক্ত হয়ে থাকেন,
তাহলে অবশ্যই এইসকল অভ্যাস দ্রুত ত্যাগ করুন। এগুলোর অনেক ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে।তার
মাঝে একটি
হলো বুক জ্বালাপোড়া করা।
এছাড়া মদ
এবং সিগারেট আপনার
গর্ভের অনাগত সন্তানের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
১২.
চুইংগাম বা এই জাতীয়
খাবার এড়িয়ে চলুন।কেননা চুইংগাম চিবালে
পেটে বাতাস যেতে
পারে, যা থেকে আপনার
পেট ফাঁপা এবং হজমের সমস্যা
দেখা দেয়।
১৩.আদা চা – আপনার
উষ্ণ গলাকে
আরাম দিতে আশ্চর্যভাবে কাজ
করে থাকে। শুধু যে
জন্যই এটি সাহায্য করে
তা কিন্তু নয়, পাকস্থলীর অ্যাসিড
কমাতেএবং গলার ব্যথায় আরামও
দিয়ে থাকে। আদা বমি বমি
ভাব কাটাতে সাহায্য করে। তবে
যদি কোন রক্তপাত হয়
তাহলে সতর্কতার সাথে পান করুন,
কেননা এটি রক্ত জমাট
বাঁধার যে প্রক্রিয়া
তাকে ধীর করে তোলে।
১৪.ক্যামোমাইল চা আপনার হজমে
সাহায্য করে এবং উদ্বেগকে
হ্রাস করে সাথে পাকস্থলীর
অ্যাসিডের বিস্তারকে নিয়ন্ত্রণ এবং পরিচালন করতে
সাহায্য করে। তবে, ক্যামোমাইল
চা জাগ্রত
রাখে বলে পরিচিত।যদি ,অনিদ্রার
সমস্যা থাকে তাহলে এটি এড়িয়ে
চলাই উত্তম ।
১৫.গ্রেপসিড, পাতিলেবু,কমলা লেবু, ল্যাভেন্ডার, রোজমেরি ও
নেরোলি তেলের মতো এসেনশিয়াল তেল
শরীরের উপর শান্ত
প্রভাব নিয়ে আসে। এটি
সাধারণত শরীরের সকল ক্রিয়াকলাপকে সহায়তা
করে ও বিভিন্ন
অবস্থার নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশাল ভূমিকা
পালন করে, এর মধ্যে একটি বুকজ্বালাপোড়া।
১৬.
দই বুক জ্বালাপোড়া কমাতে
সাহায্যে করে। চাইলে দই
খেতে পারেন।
১৭.
প্রতিদিন নিয়মিত কমপক্ষে ৩০মিনিট হাঁটুন। তাতে যে শুধুমাত্র
খাবার হজম বা বুক
জ্বালাপোড়া কমবে তা কিন্তু
নয় , এরসাথে
মাংসপেশী সচল রাখে।
তাছাড়া
মেথির পানি,কাঠবাদাম, ডাবের
পানি,ভাতের মাড়,অ্যালোভেরার জুস,
অ্যাপেল সিডার ভিনেগার,গাজর এবং পালং
শাকের রস এফুলো খেলে
বুক জ্বালাপোড়া কমে।তবে সমস্যা বেশি হলে বা
না কমলে অবশ্যই
ডাক্তারের পরামর্শ নিন।