শিশুর পেটের গ্যাস কমাতে করণীয় কি? বিস্তারিত জেনে নিন-
সাধারণত আমরা ভাবি গ্যাস হয়তো শুধু বড়দেরই হয়ে থাকে।এই ধারনা কিন্তু পুরোটায় ভুল।কেননা
বড়দের
মতোই ছোটদের পেটে ও গ্যাস
হতে পারে বা হয়।
জন্মের পর
প্রথম তিন মাস শিশুর পরিপাকতন্ত্র আস্তে আস্তে সুগঠিত হয়। এই
সময় শিশুর
গ্যাসের সমস্যা দেখা
দেওয়া খুবই স্বাভাবিক বিষয়
। তারপর আবার ছয় মাস
থেকে শিশুকে বাড়তি
খাবার দেওয়া হয়।এমন অনেক
খাবার আছে যেগুলো খেলে
আপনার শিশুর গ্যাস হতে পারে।
শিশুর পেটে গ্যাস হওয়ার কারন কি কি?
১.শিশুর পেটে বাতাস গেলে
হয়তো আপনারা ভাববেন
যে শিশুর পেটে আবার বাতাস
কি করে যায়? মায়ের বুকের দুধ বেশি
হলে শিশু খুব তাড়াতাড়ি দুধ গিলতে থাকে, এই সময় শিশুর পেটে বাতাস যায়। অন্যদিকে শিশু যদি ফর্মুলা খায় তাহলে নিপলের ছিদ্র বড় থাকলেও বেশি দুধ আসে আর শিশু তাড়াতাড়ি গিলতে থাকে। এইভাবে শইশুর পেটে বাতাস ঢুকে। আবার মাঝে মাঝে বুকের দুধ কম হলে ও নিপলের ছিদ্র যদি বেশি ছোট হয় তাহলেও পেটে বাতাস যায় এবং গ্যাস সৃষ্টি হয়।
আরও জানুন -
শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর যে উপকারিতা
ফর্মুলা দুধ কি? খাওয়ার নিময় কি এবং ফর্মুলা দুধের চেয়ে বুকের দুধ কেন ভালো?
২.কিছু কিছু সবজি
খেলে
কিছু কিছু
সবজি রয়েছে যেগুলোতে
প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন পাওয়া যায় কিন্তু সেগুলো খেলে
আবার গ্যাস
হয়। যেমন : গাজর, বাঁধাকপি, ব্রকলি ইত্যাদি।
৩.শিশুর দুধে ফেনা হলে
অনেক
সময় শিশুর ফর্মুলা বানাতে গেলে বোতল ঝাঁকালে
যে ফেনা হয় সেটা না ঠিক
করেই শিশুকে খাওয়াতে শুরু করেন। এতে
শিশুর পেটে গ্যাস হওয়ার
সম্ভাবনা থাকে।
সাধারণত শিশুর বয়স ছয় মাসের থেকে
কম হলে অন্য কোনো
খাবার দেওয়া ঠিক নয়।কিন্তু
ছয় মাসের চেয়ে বেশি হলে দেওয়া যেতে পারে।প্রায়
শিশুই যারা
জুস খেলে পেটে গ্যাস
হয়ে যায়। এর কারণ হলো
জুসের ফ্রুক্টোস এবং সুক্রোস হজম হয় না
ঠিকমতো । কিন্তু সবারই ক্ষেত্রে
নয়।
৫. কম পানি খেলে
ছয় মাস পর শিশুকে বাড়তি খাবারের
সাথে পানি দেওয়া উচিত।
পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি
পান না করলে শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। এ থেকে
অনেক সময় পেটে ব্যাথা
ও গ্যাস হতে পারে।
এছাড়াও অন্য যেসব কারণে শিশুর পেটে গ্যাস হতে পারে
- অনেক সময় দুধের ভেতর থাকা কোনো প্রোটিনের কারনেও শিশুর পেটে গ্যাস হতে পারে।
- অধিক কান্নার কারনে শিশুরা খাওয়ার আগেই হাওয়া গিলে ফেলে। কোন কোন সময় অধিক কান্নার ফলেও গ্যাস তৈরী হতে পারে।
- শিশুর হজম কম হলে গ্যাস হতে পারে।
- অন্ত্রের মাঝে অবিকশিত ব্যাকটেরিয়া ফ্লোরাও কারনে শিশুদের গ্যাস হতে পারে।
- যারা মায়ের দুধ খায় তাদের ক্ষেত্রে মায়ের খাবার গ্রহণ করার ফলে গ্যাস হতে পারে। যেমনঃবাদাম,দুধ জাতীয় খাবার কফি, মটরশুটি ও মশলা জাতীয় খাবার মায়েরা খাওয়ার কারনেও শিশুদের গ্যাস হতে পারে।
- অতিরিক্ত খাবার খাওয়ানোর ফলেও গ্যাস হতে পারে।
শিশুর পেটে গ্যাস হলে বোঝার উপায়
শিশুর
পেটে যখন গ্যাস
হয় , তখন আপনি লক্ষ্য
করলে কয়েকটি উপসর্গ দেখতে পাবেন তার
শরীরে, যা দেখেই আপনি
বুঝতে পারবেন যে তার পেটে
গ্যাস হয়েছে-
- পেটে গ্যাস হলে শিশুরা অস্থির অস্তির করে।
- বার বার ঢেকুর তুলতে থাকে।
- শিশুর পেট ফোলা দেখা যায়।
- অন্য সময়ের তুলনায় বেশি কান্নাকাটি করে।
- বায়ু ত্যাগ করতে থাকে।
- শিশুর তলপেট শক্ত হয়ে যায়।
- শিশুর দুই পা তুলে রাখে উপরের দিকে।
- খাবারের চাহিদা তুলনামূলক কম হয়।
- শিশুর মেজাজ খিটখিটে থাকে।
- শুয়ে এপাশ ওপাশ করা,
- হাতকে মুষ্টি খোলা এবং বন্ধ করা।
- হাত পা জোরে জোরে ছোড়া।
শিশুর পেটে গ্যাস হলে করণীয় কি ?
- শিশুকে প্রতিবার খাওয়ানোর পরেই শুইয়ে রাখবেন না বরং খাওয়ানোর পর তাকে কোলে নিন সোজা করে।
- শিশুর পিছনে আপনার এক হাত রাখুন ২-৩ মিনিট প্রায়। এতে করে শিশুর হজম দ্রুত হতে , গ্যাস জমবে না পেটে।
- শিশুর পেটে গ্যাস হলে তাকে হালকা গরম বা কুসুম গরম পানি পান করাতে হবে। এমনকি কুসুম গরম পানিতে শিশুকে গোসল করাতে হবে। তাতে শিশুর শরীর ঠান্ডা হয়ে যায় আর গ্যাস বের হয়ে যায।
- ফর্মূলা দুধের কারনে গ্যাস হলে তা খাওয়ানো বন্ধ করুন বা দুধ পরিবর্তন করুন।
- শিশুর পেটে যদি গ্যাস হয়,তবে আলতোভাবে ঘষুন এবং আঙুল দিয়ে ম্যাসেজও করে দিতে পারেন পেট। এতে করে গ্যাস পরিপাকতন্ত্রের পথে প্রবাহিত হয় এবং শরীর এর থেকে বের হয়ে যায়।
- প্রতিদিন নিয়ম করে কয়েক মিনিট আপনার শিশুকে ব্যায়াম করান। যেমন- শিশুকে উল্টো দিক করে শুইয়ে কিছুসময় রাখুন। শিশুর হাত এবং পা ম্যাসেজ করে দিতে পারেন। এতে শিশুর পাকস্থলীয় ক্রিয়াকলাপ বৃদ্ধি পায়।
- ২-৫ বছর বয়সের শিশুদের ক্ষেত্রে গ্যাসের সমস্যা হতেই পারে সেক্ষেত্রে তাদের ভাজা-পোড়া জাতীয় খাবার থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করুন।
- শিশুদের খেলাধুলার অভ্যাস গড়ে তুলুন ।এতে পরিপাকতন্ত্র সচল হয়।ফলে গ্যাস জমতে পারেনা।
- শিশুকে সবসময় বসে খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন।কেননা শিশুকে শুইয়ে খাওয়ালে শিশুর মুখের ভেতর বাতাস প্রবেশ করতে পারে। এর ফলে শিশুর পেটে গ্যাস হয়।
- শিশুকে সোজা করে শুইয়ে দিন। এরপর হাঁটুর কাছ থেকে পা নিয়ে পেটের কাছে মুড়ে দিন। দুই পা এক সাথে পেটের কাছে নেবেন। ৫ সেকেন্ড সময় এভাবে রাখুন । তিন থেকে চার বার এই প্রক্রিয়ায় করুন। এতে করে বাচ্চাদের পেটে যে জমে থাকা গ্যাস আছে তা সহজে বেরিয়ে যাবে।
আরও পড়ুন :
শিশুর পাতলা পায়খানা ও বমি হলে করণীয় কি ?
শিশু তথা বাচ্চার পায়খানা শক্ত হওয়ার কারণ ও করণীয় কি ?
গ্রাইপ
জল:
শিশুদের
পেটে গ্যাসের সমস্যা দেখা
দিলে এবং পেট ব্যথা
হলে তা কমাতে কয়েক
দশক ধরেই মানুষ ব্যবহার করে আসছে গ্রাইপ জল। অনেকেই হয়তো
এই গ্রাইপ জল চেনেন না।
এটি হল সোডিয়াম বাইকার্বনেট,
তেল,চিনি এবং ডিল
(মৌরী জাতীয় গাছের) একসাথে
মিশিয়ে সরবতের মত করে
বানানো হয় এক ধরনের
পানীয়। এটি মাত্র
৫ মিনিট ও তার কম
সময়ে গ্যাস থেকে মুক্তি দেয়।
হিং:
হিং
আমরা মশলা হিসেবেই চিনে
থাকি।তবে আপনার শিশুর পেটের গ্যাস কমাতে এর ভূমিকা রয়েছে।
যদি গ্যাসের সমস্যা
বেশি হয় তাহলে সর্ষের
দানার মতো দুটি দানা
নিন এবং তা গরম
পানিতে মিশিয়ে শিশুকে খাওয়ান। তবে শিশুদেরকে বেশি আবার
খাওয়াবেন না।কেননা এটি মশলা জাতীয়
বেশি খেলে শিশুর ক্ষতি
হতে পারে।
হিশুদের
জন্য গ্যাসের কিছু ওষুধ রয়েছে।
যেমন-Flacol,Gasnil,Flatunil,pedicon,semecon
ইত্যাদি তবে অবশ্যই এগুলো
ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়াবেন
এতেও
যদি শিশুর গ্যাস না কমে বুজতে
পারেন তাহলে অবশ্যই চিকিৎসক এর পরামর্শ নিন।
শিশুরা খুবই স্পর্শকাতর হয়
এই জন্য তাদেরকে বেশিদিন
কোন রোগে ভোগানো উচিত
নয়।