শিশুকে বুকের দুধ ছাড়াতে করনীয় কি বিস্তারিত জেনে নিন-
শিশুকে বুকের দুধ ছাড়াতে করনীয় |
আমরা
জানি মায়ের দুধ শিশুর জন্য কতটা উপকারি। মায়ের দুধ খাওয়ার ফলে শিশুর
শারীরিক ও মানষিক বিকাশ পরিপূর্ণ হয়, বুকের দুধে রয়েছে অ্যান্টিবডি, এনজাইম
ও ভিটামিন, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, বিভিন্ন সংক্রামক রোগ
যেমন: ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, মেনিনজাইটিস ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধে সাহায্য
করে,এতে থাকা লিনোলেনিক এসিড, ওমেগা-৩ সহ বিভিন্ন উপাদান শিশুর মস্তিষ্ক
গঠনের কাজে সাহায্য করে শিশুকে করে তোলে মেধাবী এবং বুদ্ধিমান।
তাছাড়া মায়ের শাল দুধ শিশুর জন্য প্রথম প্রাকৃতিক টিকার কাজ করে।
মাতৃত্বের
প্রধান বিশেষত্ব হচ্ছে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো। জন্মের পর থেকে প্রথম
ছয় মাস শিশুকে শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো উত্তম। তারপর আস্তে আস্তে
অন্য খাবারের চাহিদা সৃষ্টি হয়। আর তখন সে খাবার থেকে সব ধরনের পুষ্টি
পেয়ে থাকে। প্রায় দুই বছর বয়স পর্যন্ত শিশু মায়ের দুধের সাথে অন্যান্য
খাবার খায়।একপর্যায়ে দেখা যায় শিশুর শরীরের চাহিদার পুষ্টিগুন তার বাহিরের
সকল খাবার থেকে পাওয়া সম্ভব হয়। ওই সময় আর মায়ের দুধের প্রয়োজন হয় না।আর
তখন প্রয়োজন হয় মায়ের বুকের দুধ ছাড়ানো।তাছাড়া বাচ্চাদের দুধ খাওয়ার
সময়সীমা দুই বছর। তবে যদি কোন বাচ্ছা না ছাড়তে চাই তাহলে বেশি হলে আড়াই
বছর। তবে হঠাৎ করে করা যাবেনা তাহলে শিশুর ক্ষতি হতে পারে।
হঠাৎ দুধ ছাড়ালে কি অসুবিধা হতে পারে -
- হঠাৎ দুধ ছাড়ালে কোন কোন সময় শিশু মেনে নিতে পারেনা ফলে সে খাওয়া বন্ধ করে দিতে পারে।
- অতিরিক্ত কান্নাকাটি করতে পারে।
- না খাওয়ার ফলে অসুস্থ হতে পারে।
শিশুকে বুকের দুধ ছাড়াতে করনীয় -
১.সঠিক সময়:
শিশুকে
বুকের দুধ ছাড়াতে হলে অবশ্যই প্রথমে সময় নির্বাচন করাটা খুবই জরুরি। এই
বিষয়ে প্রথমে মাকে মনস্থির করতে হবে এবং তারপর শিশুকে সেই অনুযায়ী
প্রস্তুত করতে হবে। এক্ষেত্রে এমন সময় বেছে নিন যে সময়টা শিশুর জীবনে অন্য
কোনো ধরনের নতুন পরিবর্তন না আসে। যেমন, নতুন শিশুর আগমন,বাসা পরিবর্তন
বা পটির অভ্যাস করানো ।তবে এই কাজে অবশ্যই পরিবারের সকলের সহযোগিতাও খুব
জরুরি।
২.বিকল্প খাবার দিন
শিশুকে
বুকের দুধ ছাড়ানোর আগে অবশ্যই তাকে বিকল্প খাবার দিন। হতে পারে সেটা
হালকা কোন নাস্তা, গরুর দুধ, সয়ামিল্ক ইত্যাদি। তাছাড়া কাপে করেও ফর্মুলা
দুধ এবং পানি দেয়া যেতে পারে। তবে খেয়াল রাখবেন শিশু কোনো খাবার না খেতে
চাইলে তাকে সেই খাবার খাওয়ানোর জন্য জোর করবেন না।
৩.সময় নিয়ে দুধ ছাড়ানো
হঠাৎ
করে শিশুকে বুকের দুধ দেওয়া বন্ধ করা থেকে বিরত থাকুন। ধীরে ধীরে সময়
নিয়ে ও কয়েক বারে দুধ দেওয়া কমিয়ে আনুন। দিনের বেলায় এবং পরে রাতের বেলায়ও
দেওয়া বন্ধ করুন। এর ফলে মায়েরও সুবিধাই হবে, বুকে দুধ জমে থাকবেনা এ থেকে
ব্যথা বা ঘা হওয়ারও কোন সম্ভাবনা থাকবেনা।
৪. অন্যদিকে মনোযোগী করে তোল :
শিশুকে
বুকের দুধ ছাড়ানোর সময় তার মনোযোগ ঘুরিয়ে দিন অন্য দিকে যাতে বুকের দুধ
খাওয়ার কথা সে মনে না আনে। এক্ষেত্রে গল্পের বই,খেলনা, ছড়ার বই দিতে পারেন
বা বাইরে ঘুরতে নিয়ার কথা বলে শিশুর মনোযোগ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে পারেন
সহজেই ।
৫.রুটিন পরিবর্তন করুন
শিশুর
প্রতিদিনের রুটিন আগে যেভাবে ছিল তার থেকে পরিবর্তন আনুন। যেই সময়টাতে
শিশুকে বুকের দুধ দিতেন, ওই সময়টাতেই তাকে অন্য ভাবে ব্যস্ত রাখুন। যেমনঃ
আগে সকালে ঘুম ভেঙেই শিশুর দুধ খাওয়ার অভ্যাস থাকলে, তাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে
নিয়ে নাস্তা খেতে বসুন। দুপুরের দিকে বা বিকালের দিকে শিশুকে খেলনা দিয়ে
বসিয়ে দিন বা বাইরে থেকে ঘুরে আসুন তাকে নিয়ে। রাতে পরিবারের অন্য কেউ বা
বাবাকে দিয়ে শিশুকে ঘুম পাড়ান।
৬. দুধ খাওয়া থেকে নিরুৎসাহিত করুন
শিশুকে
দুধু খেতে নিরুৎসাহিত করুন।দুধে তেতো জাতীয় কিছু লাগিয়ে রাখুন বা রঙ জাতীয়
কিছু লাগিয়ে রাখুন।এতে সে দুধ খেতে গেলে তেতো পাবে তখন আর খেতে
চাইবেনা।অন্যদিকে রঙ দেয়া থাকলে ভয় বা ঘৃনায় খাবে না ।
৭.নিজের ইচ্ছায় খাওয়াবেন না
শিশুকে
কখনোই নিজের থেকে বুকের দুধ খাওয়াতে চাইবেন না।এতে সে আবার খেতে চাইবে।
অন্যদিকে আবার যদি শিশু খেতে চায় তাহলেও তাকে না করবেন না।
৮.নির্দিষ্ট সময় দিন
শিশুকে
নির্দিষ্ট সময় বেধে দিন। যেমনঃতাকে বলুন যে তোমার আগামী জন্মদিন এর আগেই
তুমি দুধ খাওয়া বাদ দেবে।বা সামনে কোন ভালো দিন দেখিয়ে বলুন অই দিনের আগেই
দুধ খাওয়া বাদ দেবে।
৯.শিশুকে বোঝান
শিশুদের
বুঝিয়ে বললে অনেক সময় তারা বোঝে।তাদের বলবেন যে বাচ্চারা বড় হলে দুধ আর
খেতে হয় না।এতে সবাই খারাব বলে,দুধ খেলে তুমি অসুস্থ হয়ে যাবা, বুকের দুধ
পচা ইত্যাদি।
৮. শিশুকে বাড়তি আদর দিন
শিশুরা
বুকের দুধ শুধু মাত্র পেট ভরানোর জন্যই খায় না।এটা সে আদর এবং ভরসার জায়গা
মনে করে খায় । এই জন্য বুকের দুধ ছাড়ানোর পর তাকে বাড়তি আদর এবং সময় দিন।
তার সাথে গল্প করুন, সময় কাটান, খেলা করুন।
আরও জানুন :
লক্ষ রাখতে হবে-
শিশুকে
দুধ খাওয়ানো চাড়ানোর সাথে সাথে মায়ের শরীরের হরমোনের ফলে মুড সুইং হতে
পারে,এর ফলে মন খারাপ হতে পারে,ভালো না গাগতে পারে সবকিছু। এসবের জন্য
প্রস্তুত থাকুন।
শিশুকে
দুধ ছাড়ানোর পরই অনেক মা সঠিক সময় পুষ্টিকর খাবার খেতে চায়না। ভাবে এখন তো
আর বাচ্চা দুধ খায় না তাই এগুলো খাওয়ার দরকার নাই।এমন ভাবনা ভুল। শিশুকে
দুধ ছাড়ানোর পর অবশ্যই পুষ্টিকর খাদ্যাভাস বজায় রাখতে হবে।
শিশুর দুধ ছাড়াতে অভিজ্ঞ মায়েদের কাছে পরামর্শ নিতে পারেন।
শিশু
দুধ ছাড়লে দুধ জমে থাকতে পারে এতে স্তন ব্যাথা হতে পারে। তখন গরম পানির
সেক দিতে পারেন।তাতেও ব্যাথা না কমলে এই অবস্থাই কোন ভাবেই চিকিৎসকের
পরামর্শ নেওয়ায় দ্বিধা করবেন না।
তাছাড়া এই বিষয়ে কোন রকম সমস্যা দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সেবা নিন।
Tags:
Babycare