শরীরে আয়রনের ঘাটতি হলে বুঝবেন কিভাবে ? বিস্তারিত জেনে নিন-
আমরা জানি,মানবদেহের অতি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান হলো আয়রন । কারণ আয়রন ছাড়া দেহে লোহিত রক্ত কণিকা উৎপাদন হয় না অর্থাৎ লোহিত রক্তকণিকা তৈরির প্রধান কাঁচামাল হলো আয়রন ।এই লোহিত রক্ত কণিকা দেহের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন সরবরাহ করে থাকে । তাই দেহে আয়রনের ঘাটতি হলে দেহে অক্সিজেন সরবরাহে ঘাটতি পরে ফলে নানাবিধ সমস্যা দেখা দিতে পারে ।
আয়রন কী ?
আমাদের
শরীরে অতিপ্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান হলো
আয়রন। রক্তে
লোহিত কনিকা তৈরিতে আয়রন প্রয়োজন।আয়রনের অভাবে
রক্তে লোহিত কনিকা তৈরি হতে পারে
না তাই একে রক্ত
লোহিত কনিকা তৈরির কাঁচামালও বলা হয়।
আয়রনের ঘাটতি কেন হয় ?
শরীরে আয়রনের অবস্থা স্বাভাবিক অপেক্ষা কম থাকলে শরীরে আয়রনের অভাব হচ্ছে বলে মনে করা হয়। আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের উৎপাদনের জন্য আয়রন অবশ্যই প্রয়োজনীয়। আয়রনের অভাবে হিমোগ্লোবিন কম উৎপাদিত হলে লোহিত রক্ত কনিকার উৎপাদন বাধা পায়। রোগ জীবানুর হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা।আয়রনের অভাব হলে এই ইমিউন সিস্টেম এর ক্ষতি হয়। আয়রন ঘাটতির সর্বশেষ স্তর কে রক্তশূন্যতা বা এনিমিয়া বলা হয় ।
আয়রনের অভাব হলে যেসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে
অস্বাভাবিক ক্লান্তিঃ
কোনো বিশেষ কারণ
ছাড়া এবং বিশেষ পরিশ্রম
ছাড়া শরীরে ক্লান্তির অনুভব আয়রনের অভাবে হতে পারে। আয়রনের
অভাবে এই ক্লান্তি অনুভব
হওয়াটা খুব সাধারণ কারণ।
এই ক্লান্তির প্রধান কারন হিমোগ্লোবিনের অভাব।হিমোগ্লোবিন
রক্তের মধ্য দিয়ে অক্সিজেন
পরিবহন করে এবং আমাদের
সুস্থ রাখে।
শ্বাসকষ্টঃ
রক্তের মধ্যে থাকা হিমোগ্লোবিন অক্সিজেন
পরিবহন করে। আয়রনের অভাব
হলে হিমোগ্লোবিন কম উৎপন্ন হয়
ফলে রক্ত কম পরিমানে
অক্সিজেন পরিবহন করতে পারে।আবার অক্সিজেন
না পেলে আমাদের পেশিতে
শক্তির অভাব হয় ফলে
সাধারণ কাজ করতে গিয়ে
আমরা হাপিয়ে উঠি। অক্সিজেনের অভাব
মেটাতে বাড়ে বাড়ে শ্বাস
নিতে হয়।শ্বাস নিতে কষ্ট হলে
দেহে আয়রনের অভাব হচ্ছে কিনা
দেখা প্রয়োজন।
ফ্যাকাশে ত্বকঃ
শরীরে আয়রনের অভাবের অন্যতম লক্ষন হলো ত্বকের রঙ
ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া। বিশেষ
করে চোখের পাতার নিচের দিকে লালচে রঙ
না থাকলে নিশ্চিত ভাবে বলা যায়
আয়রনের অভাব হচ্ছে এবং
শরীরে হিমোগ্লোবিন এর পরিমাণ কম
আছে। রক্তে হিমোগ্লোবিন এর পরিমাণ স্বভাবিক
হলে রক্তের রঙ লাল হয়।
আয়রনের অভাব হলে হিমোগ্লোবিন
এর পরিমাণ কমে যায় এবং
ত্বক ফ্যাকাশে দেখায়। মুখমন্ডল,দাঁতের মাড়ি, ঠোঁটের ভেতর দিক,নক
ইত্যাদির রঙ ফ্যাকাশে হয়ে
গেলে বুঝতে হবে দেহে আয়রনের
অভাব হচ্ছে।
মাথা ব্যথাঃ
বিভিন্ন কারনে মাথা ব্যথা হতে
পারে এর মধ্যে অন্যতম
একটি কারণ হলো আয়রনের
অভাব। আয়রনের অভাব হলে হিমোগ্লোবিন
এর অভাব হয় আর
হিমোগ্লোবিন এর অভাব হলে
মাথার মধ্যে অক্সিজেন কম পৌছায় ফলে মাথা ব্যথা
হয়।মাঝে মাঝে মাথা ব্যথা
হলে অবশ্যই সচেতন হতে হবে।
বুক ধড়ফড়ঃ
শরীরে অক্সিজেনের অভাব হলে বুক
ধড়ফড় করে।আয়রনের অভাবেও এটি হতে পারে।আয়রনের
অভাবে যেহেতু রক্তে অক্সিজেন পরিবহন কমে যায় তাই
অক্সিজেন এর সরবরাহ স্বাভাবিক
রাখতে হৃদয় পিন্ডকে বেশি
কাজ করতে হয়। ফলে
হৃদপিণ্ডের ধড়ফড়ানি বেড়ে যায়।এমন কি
হৃদপিণ্ডে স্পন্দন অনিয়মিত হয়ে যেতে পারে।ফলে
হার্টের রোগের সূচনা হতে
পারে।
জিব্বা ফুলে যাওয়াঃ
আয়রনের অভাবে জিব্বা ফুলে যেতে পারে।
এছাড়াও জিব্বা ফ্যাকাশে, মসৃন হওয়া এবং
মুখের মধ্যে জ্বালা অনুভূতি হতে পারে।
চুল পড়াঃ
আয়রনের অভাব হলে রক্তে
অক্সিজেন পরিবহনকারী হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে
যাওয়ার ফলে চুলের বৃদ্ধি
ঘটায় এমন কোষগুলোতে অক্সিজেনের
অভাব হয়। অক্সিজেনের অভাবের
কারনে চুল শুষ্ক ও
দুর্বল হয়ে পড়ে। আয়রনের
অভাব চুল পড়ে যাওয়ার
অন্যতম কারণ।
হতাশার অনুভুতিঃ
দেহে আয়রনের অভাব
হলে হতাশা ও মানসিক চাপ
সৃষ্টি হতে পারে।
ঠান্ডা হাত ও পাঃ
যেকোনো
ঋতুতে হাত-পা ঠান্ডা
হয়ে থাকা আয়রনের অভাব
জনিত সমস্যা হতে পারে। কম
অক্সিজেন সরবরাহের কারণে এই সমস্যার সৃষ্টি
হতে পারে।
ঘন ঘন জীবাণু সংক্রামনঃ
শরীর বেশির ভাগ সময় অসুস্থ
থাকলে অর্থাৎ
শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
কমে যাওয়ার ফলে শরীর ঘনঘন
নানা রকম জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হতে দেখা যায়।
এই সমস্যাটি আয়রনের অভাবে হয়ে থাকে।
আয়রনের ঘাটতি পূরণের উপায়
আয়রনের অভাব জনিত বিষয়ে আমাদের সচেতন হতে হবে। খুব সহজেই সাধারন খাবার দিয়ে শরীরে আয়রনের অভাব পূরণ করা যায়। সেজন্য যেসব খাবারে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে সেগুলো প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় রাখতে হবে যেমন-
মাছ-মাংস:
গরুর মাংস, খাসির মাংস এবং কলিজা এ সকল খাবারে প্রচুর আয়রন রয়েছে। আবার মাছেও আয়রন রয়েছে যারা মাংস খেতে পারেন না সেক্ষেত্রে খাদ্যতালিকায় মাছ রাখতে পারেন। মাছের যে অংশে কলিজা থাকে সেই অংশে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। আমরা সবাই জানি যে বড় মাছে বেশি পরিমাণে আয়রন থাকে। বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে ।
ডিম :
ডিমের কুসুমে ও প্রচুর পরিমাণে আয়রন পাওয়া যায়।
ডাল :
সেকেন্ড ক্লাস প্রোটিন যেমন ডাল, বিচ ইত্যাদি খাবারে আয়রন রয়েছে। কিন্তু এই খাবারগুলো গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খেতে হবে।
বিভিন্ন রকম শাক সবজি:
বিভিন্ন রকম শাকসবজি যেমন- কচু শাক, লাল শাক, পালং শাক, পুঁই শাক ইত্যাদি খাবারেও আয়রন আছে। তবে সবচেয়ে বেশি আয়রন বহন করে আনার, কলা, আপেল ইত্যাদি ফলগুলো। তাই এই ফলগুলো গ্রহণে শরীরে ভিটামিন সি এবং আয়রন দুটোই একসঙ্গে পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন:
গর্ভাবস্থায় হাত পা ফুলে গেলে বা পানি জমলে কি করবেন ?
এছাড়াও খেজুর , কিসমিস ইত্যাদি খাবারে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে। তাই অন্যান্য খাবার গ্রহণের পাশাপাশি যদি আয়রন ও ভিটামিন সি যুক্ত ফলগুলো গ্রহণ করা যায় তাহলে রুচির পরিবর্তন হয় এবং খুব সহজেই আয়রনের অভাব পূরণ করা যায়।