শিশুর দাঁতের যত্ন কিভাবে নিবেন ? এ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন –
শিশুদের দুধ দাঁত থাকাকালীন সময় থেকেই তাদের দাঁতের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। সাধারণত বাচ্চারা ছোটবেলা থেকেই চকলেট, পেস্ট্রি, মিষ্টি প্রভৃতি জাতীয় খাবার খেতে বেশি পছন্দ করে। আর এই খাবার গুলো খাওয়ার পর যদি তাদের দাঁত ঠিক মত পরিষ্কার করা না হয় তাহলে কিন্তু দাঁতে নানা ধরণের সমস্যা যেমন : দাঁত ছোট-বড়, পোকা লাগা প্রভৃতি দেখা দিতে পারে। আর সে জন্যই ছোটবেলা থেকেই বাচ্চাদের দাঁতের যত্ন নেওয়া খুবই জরুরি।
এখন চলুন আমরা ছোট বাচ্চাদের দাঁতের যত্ন কিভাবে নেওয়া যায় সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই,
শিশুর দাঁতের যত্ন কিভাবে নিবেন ?
শিশুদের দাঁতের যত্ন যেভাবে নিতে হবে সে সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো –
নবজাতক শিশুর মুখ ও মাড়ি পরিষ্কার রাখা :
শিশুর প্রথম দাঁত ওঠে ছয় মাস বয়সে। প্রত্যেক বাবা-মায়েরই উচিত শিশুর দাঁত ওঠার আগে থেকেই তার মুখ ও মাড়ি পরিষ্কার রাখা। এ সময় যদি শিশুর মুখ ও মাড়ি পরিষ্কার না রাখা হয় তাহলে শিশুর মাড়িতে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে। আর পরবর্তীতে যখন দাঁত গজায় তখন তার দাঁতে ইনফেকশন হওয়ার চান্স বেশি থাকে। সে জন্য শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো শেষ হওয়ার পর সব সময় পরিষ্কার, জীবাণুমুক্ত ও পাতলা সুতি কাপড় অথবা তুলা দিয়ে তার মাড়ির ওপর থেকে দুধের আবরণ পরিষ্কার করে দিবেন। এতে করে শিশুর মাড়িতে ব্যাকটেরিয়া জন্মানোর আশঙ্কা কমে যাবে।
দুধ দাঁত গুলোর যত্ন নেয়া :
জন্মের পর বাচ্চার প্রথম যে দাঁত জন্মায় তাকে দুধ দাঁত বলে। সাধারণত এই দুধ দাঁত গুলো সাত থেকে এগারো বছর বয়স পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। এরপর এই দাঁত গুলো ধীরে ধীরে পড়ে গিয়ে আবার নতুন করে স্থায়ী ভাবে দাঁত জন্মায়। শিশুর দুধ দাঁত থাকাকালীন সময় থেকে যদি দাঁতের যত্ন না নেওয়া হয় তাহলে পরবর্তীতে তাদের স্থায়ী দাঁত উঠার সময় দাঁত ছোট-বড়, ত্যাড়া-ব্যাকা প্রভৃতি সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই বাচ্চার দুধ দাঁত থাকাকালীন সময়ে এই দাঁত গুলোর যত্ন নেওয়া খুবই জরুরি।
ফিডার ব্যবহার না করা :
অধিকাংশ মায়েরাই শিশুকে ফিডার দিয়ে দুধ খায়িয়ে থাকেন। কিন্তু বাচ্চাকে ফিডারে দুধ খাওয়ালে ফিডারের নিপলের চাপে তার মাড়ি উঁচু হয়ে যায়। এর ফলে তার দাঁত উঁচু নিচু হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। চিকিৎসক বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুকে ফিডার দিয়ে দুধ খাওয়ালে তার দুধ দাঁতে ক্যারিজ বা ক্ষয় হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। তাই শিশুদের সুস্থ্য দাঁতের বিকাশের জন্য তাদের ফিডার দিয়ে দুধ খাওয়ানো উচিত নয়। এর পরিবর্তে আপনি শিশুকে চামচ দিয়ে দুধ খাওয়াতে পারেন।
আবার দেখা যায়, অনেক সময় শিশুরা মুখে আঙুল দিয়ে থাকে। আঙুলের ময়লা মুখের ভেতর গিয়ে তাদের মুখে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কাকে অনেক বেশি বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই বাচ্চার হাত মুখ সব সময় পরিষ্কার পাতলা কাপড় দিয়ে মুছে দিবেন।
কোমল ও নরম ব্রাশ ব্যবহার করা :
আপনার শিশুর দাঁত ওঠার আগে থেকেই তার হাতে কোমল ও নরম একটা ব্রাশ তুলে দিন। আর ব্রাশটি যাতে আর্কষণীয় হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন। এতে তার ব্রাশ করার প্রতি আগ্রহ বাড়বে। আর বাচ্চাকে কখনই বড়দের টুথপেস্ট দিয়ে ব্রাশ করাবেন না। তার জন্য অবশ্যই বেবি জেল বা পেস্ট ব্যবহার করবেন। কারণ তা গিলে ফেললে ও কোন সমস্যা হবে না। আর বাচ্চা বড় হওয়ার সাথে সাথে তাকে সঠিক পদ্ধতিতে ব্রাশ করা শেখাবেন।
প্রতিদিন দাঁত ব্রাশ করা :
আপনার বাচ্চাকে প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে দাঁত ব্রাশ করিয়ে নিবেন। আর তা অবশ্যই খাবার গ্রহণের পরে হতে হবে। কারণ খাবার খাওয়ার পরে দাঁতের ফাকে অনেক সময় খাবার লেগে থাকে। যা পরিষ্কার না করা হলে পরবর্তীতে এগুলো পচে গিয়ে বাচ্চার দাঁতে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই খাবার খাওয়ার পরে অব্যশই বাচ্চাকে ব্রাশ করাবেন। আর ব্রাশ ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাচ্চাকে কখনোই এক ব্রাশ দুই থেকে তিন মাসের বেশি ব্যবহার করতে দিবেন না। কারণ দীর্ঘদিন এক ব্রাশ ব্যবহার করলে ব্রাশ শক্ত হয়ে যায়। আর এ জন্য অনেক সময় বাচ্চার ব্রাশ করতে গিয়ে তার দাঁত দিয়ে রক্ত পড়তে পারে।
দাঁতে সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা :
শিশুর দাঁতে যদি কোন সমস্যা যেমন : মুখে দুর্গন্ধ হওয়া বা দাঁতে কালো দাগ দেখা দিলে সাথে সাথে দন্ত বিশেষজ্ঞের কাছে পরামর্শ নিন। কারণ সাথে সাথে চিকিৎসা না করালে পরবর্তীতে শিশুর দাঁতে বড় ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই এ ধরনের সমস্যা দেখা দিলে তৎক্ষনাৎ ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
আরো জেনে নিন:
শরীরে আয়রনের ঘাটতি হলে বুঝবেন কিভাবে ?
বাচ্চা ছোট থাকতে যদি তার দাঁতের যত্ন নেওয়া যায় তাহলে তার দাঁত সবল হবে। এর পাশাপাশি দাঁতের মাঁড়ি এবং দাঁতের সুন্দর সেটিং হবে। তাই শিশুর দাঁত সুস্থ ভাবে বিকাশের জন্য উপরিউক্ত পদ্ধতি গুলো ঠিক মত অনুসরণ করুন। আর দাঁতে কোন প্রকার অসুবিধা দেখা দেয় তাহলে তৎক্ষনাৎ ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।