রোজায় ডায়াবেটিস রোগীরা খেতে পারেন যেসব খাবার বিস্তারিত জেনে নিন-
জানিয়ে রাখা ভালো যে,জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের একটি জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশের মোট ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় এক কোটি ১০ লাখ। এদের ভিতর ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সী মানুষের সংখ্যা ২৬ লাখ এবং ৩৫ বছরের বেশি বয়সী ৮৪ লাখ।
সাধারণত রমজান মাসে সকলেরই খাদ্য গ্রহণের সময় এবং খাদ্য তালিকা বদলে যায়। ইফতার এবং সাহ্রির ভিতরেই অল্প সময়েই পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার খেতে হয়। তাছাড়া ঐতিহ্যগতভাবেই বেশ কিছু ধরনের খাবার খাদ্যতালিকায় যুক্ত হয় নতুন করে।
এগুলোর ভিতর
কোনো কোন
খাবার আবার রক্তে গ্লুকোজ
বাড়িয়ে তোলে।
এই জন্যই ডায়াবেটিস
রোগীদের ক্ষেত্রে এই সময়
প্রায়ই দেখা
যায় রক্তে গ্লুকোজের আধিক্য তৈরি হয়। অন্যদিকে
আবার দীর্ঘ
সময় না খাওয়ার কারণে
দেখা দেয় গ্লুকোজের
ঘাটতি।
এছাড়া
ডায়াবেটিস রোগীদের রোজার
সময় ওষুধ খাওয়ার সময়
বদলে যায়। যার ফলে
কিছু ওষুধ এবং ইনসুলিনের মাত্রা নতুনভাবে ঠিক করে নিতে
হয়। এ জন্য রোজার
শুরুতেই উচিত
খাদ্য এবং ওষুধ খাওয়ার
জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ খুবই জরুরি।
গাইডলাইন
তৈরির সাথে জড়িত একজন ডা.
শাহজাদা সেলিম বলে, ''ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে কঠোর
নিয়ম মেনে খাবার এবং
ওষুধ গ্রহণ করলেও তারা রোজা রাখার
চেষ্টা করেন। তবে অনেকেই আবার হাইপো কিংবা
বিভিন্ন সমস্যায় পড়েন।
'' দেখা যায় যে রোজার সময়, অনেক ডায়াবেটিক রোগী অসুস্থ হন। তারা সঠিক চিকিৎসা পান ও অন্যান্য ডিসিপ্লিনের জন্য চিকিৎসকরা যেন তাদেকে সঠিক চিকিৎসা দেন, এই জন্য রোজার সময় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার এই গাইডলাইনটি সৃষ্টি করেছি,'' তিনি বলেন।
ডায়াবেটিকস রোগী রোজা রাখার সময় সবথেকে বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে খাদ্য ব্যবস্থাপনায়।
রোজা রাখলে ডায়াবেটিকস রোগিদের কি কি ঝুঁকি রয়েছে-
১.পানিশূন্যতা।
২.ওজনের তারতম্য।
৩.রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।
৪.রক্তে গ্লুকোজ এর পরিমান কমে যেতে
পারে।
৫.অল্পতেই রেগে যাওয়া।
৬.বমি বমি ভাব।
৭.মাথা ঘোরা।
৮.পানি পিপাসা বেড়ে
যাওয়া।
৯.ক্লান্তি বেড়ে যায়।
ডায়াবেটিস রোগীর রোজা রাখার উপকারীতা-
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্যে করে।
- শরীর থেকে বিষাক্ত সকল পদার্থ বের করে।
- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
- বীপাকিয় কাজের উন্নতি করে।
রোজায় ডায়াবেটিস রোগী কি করবেন-
★প্রথমেই সেহরির খাবার সেহরির শেষের অল্প কিছু সময় আগে খাওয়া উচিত।
★ ইফতারে বেশি পরিমাণে মিষ্টি এবং চর্বি জাতীয় খাবার না খাওয়ায় ভালো ।
★ ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত।কোনভাবেই যেন পানিশূন্যতায় না ভোগেন।
★খাদ্যের ক্যালরি সঠিক রেখে খাবার পরিমাণ ও ধরন ঠিক রাখতে হবে। সঠিক সময়ে সঠিক খাবার খাওয়া প্রয়োজন।
★ ইফতারের অতি ভোজন ও শেষ রাতে কম আহার পরিহার করুম, বরং উল্টোটা করতে পারেন।
★রোজার আগে যে পরিমাণ ক্যালরি খাবার খেতেন, রোজার সময় ক্যালরির পরিমাণ ঠিক রেখে খাওয়ার সময় ও ধরন পাল্টাতে হবে।
★ রোজা রাখা অবস্থায় সুগার বেশি হলে বা কমলে সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
★ রোজার সময় নিজে নিজে ডায়াবেটিসের ওষুধ সমন্বয় করা উচিত নয় , তাতে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। এর জন্য অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
★ রোজা
রাখা অবস্থায় দিনের বেলা অতিরিক্ত ব্যায়াম
করবেন না । এতে
হাইপোগ্লাইসেমিয হতে
পারে।
★ রোজার সময় রাতে পর্যাপ্ত পানি পান করতে পারেন , এর সাথে কম মিষ্টি রসালো ফল খেতে পারেন। পুষ্টিকর খাবার অবশ্যই খাওয়া উচিত।তবে যাদের দুধ খাওয়ার পর হজমের সমস্যা হয়, তারা দুধ না খাওয়াই উচিত।
ডায়াবেটিকস রোগীর রোজায় কি খাবেন-
১.ইফতার কি খেতে পারে
- একজন ডায়াবেটিস রোগী ইফতারে বুট ভুনা ১/২ কাপ বা ২৫ গ্রাম কাঁচা বুট খেতে পারে
- ২ টা বড় পেঁয়াজু খেতে পারে।
- ২ টা মাঝারি বেগুনি তবে বেসনের পরিমান হবে ১০ গ্রাম।
- মুড়ি ২ কাপ ২৫ গ্রাম পরিমাণ।
- যে কোনো একটি মিষ্টি ফল।
- ডাবের পানি,শশা, ক্ষীরা, আমড়া, পেয়ারা, লেবুর পানি, (চিনি ছাড়া) এবং টক ফল যতটা ইচ্ছা খেতে পারেন।
২.সন্ধ্যা রাতে কি খাবে-
- রুটি ২টা ছোট পাতলা করে এবং ভাত হলে১.৫ কাপ।
- মাছ অথবা মাংস ২ টুকরা।
- ডাল মাঝারি ঘন করে ১ কাপ পরিমাণ।
- দুধ ১ কাপ সর ছাড়া। তবে হজমে সমস্যা হলে বাদ দেবেন।
- সবজি আলু বাদে যতটা ইচ্ছা খেতে পারেন।
৩.সেহরি কি খাবে-
- ভাত ২ কাপ ২৪০ গ্রাম পরিমাণ।
- মাছ অথবা মাংস ২ টুকরা করে।
- ডাল মাঝারি ঘন করে ১ কাপ পরিমাণ।
- সেঘেরিতেও দুধ খেতে পারেন তবে হজমে সমস্যা না হলে সর ছাড়া ১ কাপ।
- সবজি একই আলু বাদে ইচ্ছামতো খেতে পারবেন।
ডায়াবেটিস রোগীর ওষুধের সময়
দিনে ১ বার
যাদের ডায়াবেটিসের ওষুধ খান, তারা ইফতারের
প্রথমেই অর্থাৎ রোজা ভাঙার সময়
খাবেন সেই ওষুধ টা,
আর যাদের দিনে একাধিকবার এই
ওষুধ খেতে হয় তারা
সকালের ওষুধ ইফতারের
প্রথমে এবং রাতের ওষুধ
অর্ধেক পরিমাণে সেহরির খাওয়ার আধা ঘণ্টা আগে
খেতে পারেন।
যেসকল
রোগী ইনসুলিন নেন , তাদের ক্ষেত্রে
রমজানের আগে থেকেই ইনসুলিনের
ধরন এবং মাত্রা ঠিক
করাটা অতি জরুরি। সাধারণত
দেখা যায় রমজানের সময়
দীর্ঘ মেয়াদি যে ইনসুলিন
সেটা নেওয়াটা ভালো। দীর্ঘ মেয়াদি ও কম
ঝুঁকিপূর্ণ ইনসুলিন দিনে
এক বার করে নিতে
হয়, এতে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার
আশঙ্কা কম। আর যারা
রোজার আগে সকালের এবং
রাতের খাবার আগে-২ বার
ইনসুলিন নিতেন, তাদের ক্ষেত্রে সকালের
ডোজ সমপরিমাণেই ইফতারের আগে নিতে পারেন,এবং রাতের ডোজের
অর্ধেক ইফতারের আগে নিন।
চিনির
তৈরি মিষ্টি জাতীয় খাবার, ময়দা-জাতীয় খাবার বা
ভাজাপোড়ার পরিবর্তে তন্তু-জাতীয়,শাকসবজি, শর্করা,
গোটা শস্যদানা, ফলমূল ইত্যাদির স্থান দিতে হবে।
এই বিষয়ে প্রশ্ন থাকলে আপনারা কমেন্ট করে অথবা আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন আমরা যথাসাধ্য সঠিক তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ ।