ব্লক কী ? হার্ট ব্লক দূর করার প্রাকৃতিক উপায় বিস্তারিত
হার্ট
ব্লক দূর করার আগে
আমাদের অবশ্যই জানা দরকার হার্ট সম্পর্কে
হার্ট কি ?
হার্ট হচ্ছে অধিকাংশ প্রানিদেহে পেশীবহুল অঙ্গ যা সারা
দেহে পাম্পের মতো করে সংকোচন ও প্রসারনের
মাধ্যমে রক্ত সরবরাহ করে
থাকে তাকে
হৃদপিন্ড বা হার্ট বলে।
মলাস্কা,এনিলিডা, ও আর্থ্রোপোডা পর্বের
প্রাণীর দেহে অনুরূপ অঙ্গ
বিদ্যমান থাকে।
ব্লক কী ?
আমাদের
পুরো দেহে
ছড়িয়ে ছিটিয়ে
রয়েছে দুই ধরনের রক্তনালি-যার একটি হলো ধমনী
এবং অন্যটি হলো শিরা।
ধমনীর কাজ অক্সিজেন সমৃদ্ধ
রক্তকে হৃৎপিণ্ড
থেকে পুরো দেহে
ছড়িয়ে দেয়া। ধমনীর এই প্রবাহপথ
যদি কোন কারণে সরু
অথবা বন্ধ হয়ে যাওয়ার
ফলে রক্ত
প্রবাহে যে বাধা তৈরি
হয় এই বাধাকে ‘ব্লক’ বলা হয়।
হার্ট ব্লক কাকে বলে ?
হৃৎপিণ্ডে
যে রক্তনালী রয়েছে তা সংকুচিত হয়ে
গেলে বা রক্তনালিতে কোলস্টেরল
জমার ফলে রক্ত চলাচল
করতে যে বাধার
সৃষ্টি হয় তাকেই হার্ট ব্লক বলা হয়।
অন্যভাবে
বলতে গেলে চর্বি জাতীয়
পদার্থ রক্তনালীর মধ্য জমা হতে
হতে রক্ত
প্রবাহিত হওয়ার যে পথ
তা সম্পূর্ণভাবে
বা আংশিকভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়াকে
বলা হয় হার্টে ব্লক।
ব্লক কি কারনে হয় ?
ব্লকের
মূল কারণ হিসেবে ধরা
হয় কোলেস্টেরল কে। যা প্রতিনিয়ত
আমাদের খাবারের
সাথে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে থাকে এবং
রক্তের মাধ্যমে ধমনীর
ভেতরে জমা হয়ে ব্লকের
সৃষ্টি হয়। তবে আমরা
অনেক সময় ব্লকের প্রধান ও একমাত্র কারণ হিসেবে
বিবেচনা করি কোলেস্টেরলকে কিন্তু
এটা একদম সঠিক নয়।হার্ট
ব্লকের আরো প্রধান কারন
রয়েছে সেগুলোর মাঝে অন্যতম উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও
ধূমপান।
হার্ট ব্লক বোঝার উপায়
ব্লক
বোঝার অনেকগুলো লক্ষনবা উপসর্গ রয়েছে করোনারি ধমনীতে যখন ব্লক থাকে
তখন কিছু নিচের
উপসর্গগুলো দেখা দেয়-
- বুকের মাঝখানে বা বামপাশে এক ধরনের ব্যথা অনুভব হয়।
- নিচের দাঁতের চোয়ালে বা পাশে এক ধরনের ব্যাথা বা অস্বস্তি হতে পারে।
- প্রায় সময় বাম হাতের ভেতর অস্বস্তি অনুভব হয়।
- নিচের দিকে ঝুকে কিছু করতে গেলে বা একটু ভারী কিছু নেওয়ার সময় সময় কষ্ট হয়।
- নিশ্বাস নিতে ও ছাড়তে কষ্ট হয়ে থাকে।
- কপাল,গলা, এবং মাথায় ঘাম হওয়া।
- বুকের ভেতর জ্বালাপোড়া করা ও বুক ধড়ফড় করা।
- খাদ্য গ্রহনের পর হজম না হওয়া ও অস্বস্তি লাগা।
ব্লকের থেকে কিভাবে হার্ট অ্যাটাক হয় ?
যদি
হার্টে ব্লক থাকে তাহলে
নিয়মিত চিকিৎসা না নেওয়া হলে তা
হার্ট অ্যাটাকের কারন হয়ে উঠতে
পারে। হার্ট অ্যাটাকের কারনে হৃৎপেশি মারা যাওয়া শুরু করে দেয়
ফলে বুকে
অধিক ব্যথা হয়।সাথে সাথে বমিও অধিক
ঘাম হয়। হার্ট অ্যাটাকের
পরিণতি খুবই করুণ হয়।
যার ফলে রোগীর মৃত্যু
ও হতে পারে।
আরও পড়ুন:
নিয়মিত ব্যায়াম করলে ডায়াবেটিস থাকবে নিয়ন্ত্রণে
নিরব
হার্ট অ্যাটাক
কিছু
কিছু রোগীর বুকে ব্যথা, ঘাম,
বমি এসব উপসর্গ ছাড়াও
হার্ট অ্যাটাক হতে পারে যাকে
সাইলেন্ট বা নীরব হার্ট
অ্যাটাক বলে। সাধারণত যারা
দীর্ঘদিন ডায়াবেটিকস রোগে ভুগছেন তাদের
এই সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক বেশি দেখা দেয়।
হার্ট ব্লক
অবশ্যই বিপজ্জনক
তবে যতই বিপদজনক হোক না কেন
অন্যান্য কঠিন ও জটিল
আরো রোগের মতোই এই রোগের
ও চিকিৎসা আছে, প্রাথমিক পর্যায়
ওষুধের মাধ্যমে হার্ট ব্লকের চিকিৎসা করা
সম্ভব। মারাত্মক ব্লক হলে সেক্ষেত্রে প্রথমেই অ্যানজিওগ্রাম পরীক্ষার মাধ্যমে ব্লকের
স্থান এবং তীব্রতাকে নির্ধারণ
করা হয় । এরপর
সম্ভব হলে কাঁটাছেঁড়া না
করেই রিং
বসিয়ে ব্লক ছাড়ানোর চেষ্টা
করতে হবে। চিকিৎসা বিজ্ঞান
অনুযায়ী এই
পদ্ধতির নাম হলো পারকিউটেনিয়াস
করোনারি অ্যানজিওপ্লাস্টি।যাকে সংক্ষেপে পিসিআই বলে। তবে ব্লক
যখনই সংখ্যায় বেশি হয়ে যায়,
তখন রিং বসানো সুবিধাজনক
না হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, এক্ষেত্রে বাইপাস অপারেশন এর প্রয়োজন হয়।
শরীরের ভালো খারাপের কথা চিন্তা করলে প্রথনেই আসে খাবারের কথা।খাদ্য ছাড়া যেমন শারীরিক বৃদ্ধি,শক্তি,বেচে থাকা সম্ভব নয়। তেমনি শারীরিক সকল সমস্যার মূল কারন হয়ে দাঁড়ায় খাদ্য।সাধারণত ভুল বা অতিরিক্ত মুখরোচক খাদ্যাভাসের কারনেই সমস্যা গুলো হয়ে থাকে তাই সবার প্রথমে সঠিক খাদ্যাভ্যাস করতে হবে।
হার্ট ব্লক দূর করার ঘরোয়া উপায় / হার্ট ব্লক হলে করনীয়
হার্ট
ব্লক দূর করতে অবশ্যই
ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত।তবে
যদি আকস্মিক ঘটনা ঘটে যায়
সেক্ষেত্রে আগে ঘরোয়া উপায়
গুলো প্রয়োগ করা উচিত। নিচে
হার্ট ব্লক দূর করার
ঘরোয়া উপায় দেয়া হলো
-
১.রসুন:
রসুন
শরীরের থেকে বর্জ্য পদার্থ
দূর করে।প্রতিদিন রসুন
খেলে কোলেস্টেরল মাত্রা একেবারে কমে যায়। প্রতিদিন পানির
সাথে রসুনের
দু বা এক কোয়া
খেলে অনেক উপকার হয়।
রসুনে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা হার্ট ব্লকের
সমস্যা দূর করে।
২.লেবু পানি:
লেবুতে
রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা হার্ট ব্লকের
ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।তাই প্রতিদিন অবশ্যই লেবু পানি পান
করতে হবে এতে করে
শরীরে থাকা কোলেস্টেরল দূর
হয়।
৩.আমলকী ও দুধঃ
হার্টের
সমস্যার সমাধানে আমলকী খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
পালন করে। নিয়মিত
এক গ্লাস দুধের সাথে আমলকীচূর্ন মিশিয়ে
খেলে হার্টের সমস্যা কমে যায়।
৪.লাউঃ
হার্টের
জন্য লাউ অনেক উপকারি
সবজির। লাউ সিদ্ধ করেনিয়ে তাতে
ধনিয়াগুঁড়ো, হলুদ এবং ধনিয়াপাতা
মিশিয়েপ্রত্যেক সপ্তাহে
অন্তত দুইবার খেলে হার্ট ভালো
থাকে।
হার্টের
রোগীকে ডায়েট ম্যানেজমেন্ট, যোগব্যায়াম, স্ট্রেস ফ্রি টেকনিক, প্রাণায়াম,
মেডিটেশন, নিউরোবিক, আকুপ্রেশার এবং ইসিপি চিকিৎসা
হয় এখন উন্নত বিশ্বে।
হার্টের রোগীদের খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের সাথে সাথে নিয়ম করে কিছু
যোগব্যায়াম আছে তা করালে
হার্টের সমস্যা সমাধানের সম্ভবনা রয়েছে।
অন্য
আর একটা বিষয় তা
হলো অনেকের
আবার প্রশ্ন থাকে যে ঠিক
কোন ধরণের পরিশ্রম কতটা করলে হার্টকে
সুস্থ রাখার সম্ভব ?
এই বিষয়ে ডাঃ নূরুল আলম
ধারনা দেন হার্ট সুস্থ
রাখতে সপ্তাহে প্রায় পাঁচদিন ৩০ মিনিট ধরে
হাঁটা উচিত।
তবে
যদি কারও
তেমন সময় না হয়
বা সুযোগ না থাকে তবে
তার বাসায় বা কাজেরস্থানেই হাটা,
অফিস অথবা বাসাতেই হাঁটা
বা অফিস থেকে আসার
সময় কিংবা বাসায় যাওয়ার সময়ে গাড়ী দুরে রেখে হেটে
গাড়ি পর্যন্ত যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।