যেসব খাবার তথা ভিটামিন শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় বিস্তরিত
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর কথা বলতে গেলে প্রথমেই আসে খাবারের কথা। শিশুদের পেট ছোট তাই তাদের ক্ষুধা ও অল্প। এই কারনে তাদের অনেক খাবার খাওনো যায়না।তাই তাদেরকে সুষম খাবার খাওয়াতে হবে। যাতে তাদের এই অল্প খাবেরেই তারা সঠিক পরিমানে পুষ্টি পায়।আর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
কোন খাবারে শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে-
সুষম
খাবার :
রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বাচ্চাদের কে সুষম খাবার
দেয়া গুরুত্বপূর্ণ। সুষম খাবার বলতে
আমরা বুঝি যে খাদ্য
খাদ্যের ছয়টি উপাদান আমিষ, শর্করা, স্নেহ, ভিটামিন, খনিজ লবণ ও
পানি সঠিক পরিমাণে থাকে
তাকে সুষম খাদ্য বলে।সুষম
খাদ্য দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
বাড়ায় এবং দেহকে সুস্থ
রাখতে সাহায্য করে। তাই বাচ্চাদেরকে
প্রতিনিয়ত সুষম খাদ্য খাওয়ানো
উচিত। এতে বাচ্চাদের রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে ও বাচ্চারা
সুস্থ থাকবেন।
শিশুদের
পছন্দের খাবার :
খাওয়া
নিয়ে বায়না করাই যেন শিশুদের
প্রথম কাজ। হাতে গোনা
কয় এক জন বাদে
বেশির ভাগ শিশুই
খেতে চায়না।খাওয়ার প্রতি তাদের এই অনিহার জন্য
শরীরে পুষ্টির অভাব দেখা দেয়।
যার ফলে বিভিন্ন ধরনের
রোগে আক্রান্ত হতে পারে শিশুরা।
তাই প্রথমেই বুঝতে হবে আপনার শিশু
কোন খাবার খেতে পছন্দ করে।
তাকে তার পছন্দের খাবার
খেতে দিতে হবে।
পানি :
শিশুকে সঠিক খাদ্যাভ্যাসের প্রথম ধাপই হলো তাকে পানি পান করতে শেখানো।আপনার শিশু কে পানি খাওয়ানো শেখান।পর্যাপ্ত পরিমানে পানি পান করলে শরীর সুস্থ থাকে এবং শরীরের দূষিত পদার্থ বেরিয়ে আসে।তাই শিশুদের পর্যাপ্ত পানি পান করাতে হবে।
মিনারেলের ও ভিটামিনের প্রথম ও প্রধান উৎস হলো শাক-সবজি ও ফল।আর এই মিনারেল ও ভিটামিনের কাজ হলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো।শাক-সবজি যেমন-পালং
প্রটিন
প্রটিন
জাতীয় খাবার থেকে পাওয়া যায়
সেলেনিয়াম, ভিটামিন,জিং সহ অনেক
উপাদান। যা রোগ প্রতিরোধ
ক্ষমতা বাড়ানো বাড়াতে সাহায্য করে।তাই বাচ্চাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
বাড়াতে প্রটিন জাতীয় খাবার যেমন-দুধ,ডিম,মাছ,মাংসইত্যাদি খাওয়াতে
হবে।
অন্যদিকে,
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে কোন ভিটামিন ?
আমেরিকান
জার্নাল অফ ক্লিনিক্যাল নিউস্টিশনে
এক গবেষণায় প্রকাশিত" শিশুর শারীরিক বেড়ে ওঠার সম্পর্ক রয়েছে
খাদ্যের সাথে"আর মাংস, দুধ,ডিম বিভিন্ন প্রানিজ
খাবার শিশুর শরীর বেড়ে উঠতে
সাহায্য করে।
ভিটামিন
-এ জাতীয় খাবার
ভিটামিন-এ বাইরের আবরণের
কোষ,দাত,অস্থি ও
ত্বকের গঠন তৈরি করে।তাছাড়া
ভিটামিন এ বিভিন্ন ধরনের
সংক্রামক রোগ থেকে দেহকে
রক্ষা করে। ।ভিটামিন -এ
শরীরে থাকলে শরীরে প্রাপ্ত লৌহের ব্যবহারের
ঘাটতি থাকে না সেই
কারনে শরীরে রক্তশূন্যতা দূর হয়।তাছাড়া ভিটামিন-এ এর ভাবে
রাতকানা রোগ হয়।
ক্যারোটিন
সমৃদ্ধ শাকসবজি, নানা ধরনের রঙিন
ফলমূলে ভিটামিন-এ পাওয়া যায়। লালশাক,
পালংশাক, টমেটো,লাউ,ব্রোকলি গাজর,
, বীট, ফুলকপি, মিষ্টি আলু ইত্যাদিতে
রয়েছে ভিটামিন-এ
তাছাড়া
মাছের ভেতর মলা, ঢেলা, কড
মাছের যকৃতের তৈল ইত্যাদি।
পাকা
পেঁপে, আম, আপেল, কলা,
কাঠাল,তরমুজ,বেল ইত্যাদি ফলে
রয়েছে ভিটামিন-এ। তাই ভিটামিন-এ এর অভাব
জনিত রোগ কমাতে ও
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বাচ্চাদের ভিটামিন-এ জাতীয় খাবার
খাওয়াতে হবে।
ভিটামিন
বি জাতীয় খাবার
ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ভিটামিন বি পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন গুলোর মধ্যে একটি।ভিটামিন বি কোষ বিপাকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।ভিটামিন -বি কে আবার ৮ ভাগে ভাগ করা হয়।এগুলোকে একেত্রে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স বলে। ভিটামিন বি এর অভাবে ডিপ্রেশন, টিস্যু ফুলে যাওয়া,স্নায়ু জনিত সমস্যা,গালে ঘা ইত্যাদি রোগ হতে পারে।
তাই শিশুদের ভিটামিন বি জাতীয় খাবার যেমন-মাছ,মাংস, গম,ব্রকোলি,মাশরুম,দুই ভুট্টা ফুলকপি বাঁধাকপি তরমুজ,আলু,কলা,সবুজ শাকসবজি, দই, দুধ জাতীয় খাদ্য, বীটরুট ইত্যাদি খাওয়াতে হবে।
ভিটামিন
সি জাতীয় খাবার
ভিটামিন
সি এর অভাবে স্কার্ভি
রোগ হয়। তাছাড়া ভিটামিন
সি এর অভাবে ত্বক
শুষ্ক হয়ে যায় দাঁত
ও মাড়ি থেকে রক্ত পড়ে
ও ইত্যাদি রোগ হয়।
শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন সি এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে াফলে ভিটামিন সি রয়েছে তবে টক জাতীয় ফল ভিটামিনসিএরউৎস।যেমন-লেবু,কমলা, আমলকি,আমড়া,স্ট্রবেরি, ইত্যাদি। তাই বাচ্চাদের খাদ্যতালিকায় ভিটামিন সি জাতীয় খাবার রাখা উচিত ।
ভিটামিন
-ডি জাতীয় খাবার
ভিটামিন ডি এর অভাবে শিশুদের রিকেটস রোগ হয়। তাছাড়া ভিটামিন ডি এর অভাবে দুর্বলতা বেড়ে যায়,রক্তচাপ বেড়ে যায়,হাড় ও দাঁতের সমস্যা হয়, বিষন্নতা দেখা যায় ইত্যাদি।এমনকি ক্যান্সারের মতো ভয়ঙ্কর রোগ নিরাময়ে সাহায্য করে ভিটামিন ডি।
শরীরে
ভিটামিন ডি বাড়ানোর জন্য
প্রথমেই যা করতে হবে
তা হল প্রতিদিন খাদ্য
রুটিনে একটি করে ডিম
রাখতে হবে। এছাড়া সামুদ্রিক
মাছ, মাশরুম, দুধ, লিভার বা
যকৃৎ ইত্যাদিতে রয়েছে ভিটামিন ডি। উক্ত খাবারগুলো
বাচ্চাদের খাওয়ানো উচিত। তাছাড়া ভিটামিন ডি এর ভালো
মাধ্যম হলো সূর্যের আলো
সূর্যের আলোর ভিটামিন ডি-এর অভাব দূর
করে। তাই বাচ্চাদেরকে কিছু
সময় সূর্যের আলোয় রাখা ভালো। এতে
করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
আরও বৃদ্ধি পাবে।
ভিটামিন
-ই জাতীয় খাবার
ভিটামিন ই এর অভাবে পেশির ক্লান্তির পড়ে।যার কারণে বাচ্চাদের চলাফেরা করতে অসুবিধা হয়,হিমোগ্লোবিন কমে যায়,ইত্যাদি রোগ হয়।অন্যদিকে ভিটামিন ই এর অভাবের কারণে অ্যাটাক্সিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।এছাড়াও লিভারের সমস্যা,অগ্নাশয়ে প্রদাহ ইত্যাদি রোগ হতে পারে।
তাই
ভিটামিন ই যুক্ত খাবার
যেমন-সবুজ শাক-সবজি,(কাচা শালগম,বাধা
কপি,ব্রকলি,মটরশুঁটি, মরিচ ইত্যাদি) উদ্ভিজ্য
তেল(সয়াবিন,সূর্যমুখী ইত্যাদি), বিভিন্ন ধরনের বাদাম(চিনাবাদাম,বাদাম আখরোট, কাঠবাদাম ইত্যাদি), চর্বিবিহীন মাছ,ডিম,স্যালমন
মাছ ইত্যাদি খাওয়াতে হবে।
ভিটামিন
কে জাতীয় খাবার
শরীরে
ভিটামিন কে এর অভাবে
হলে হাড়ে খনিজের সল্পতা,হাড় দুর্বল,দাতের
ক্ষয়,রক্ত জমাট না
বাধা,রক্তপাত ইত্যাদি রোগ হয়।তাই শিশুদের
ভিটামিন কে জাতীয় খাবার
যেমন -পালং শাক, লেটুস
পাতা,ব্রকলি,সয়াবিন,গাজর, বেদেনা ইত্যাদি খাওয়াতে হবে।
শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায়
পর্যাপ্ত
ঘুম
খাবারের পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্যে করে ঘুম।বাচ্চাদের শরীর সুস্থ রাখতে তাদেরকে পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুমাতে দিতে হবে।এক গবেষণায় দেখা গেছে পর্যাপ্ত না ঘুমানোর ফলে শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।তাই নবজাতকের জন্য ১৬ ঘন্টা,১-২ বছর বয়সী শিশুদের ১১-১৪ ঘন্টা ও৪-৫ বছর বয়সী শিশুদের ১০ থেকে ১২ ঘন্টা এবং পাপ্তবয়স্কদের ৮-১০ অবশ্যই ঘুমাতে হবে।
সূর্যের
আলো
সূর্যের
আলোই আছে ভিটামিন ডি।
যা আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধোক হিসেবে
কাজ করে।তাই শিশুদের প্রতি সপ্তাহে ২-৪ দিন
বারান্দায় বা ছাদে নিয়ে
২০ থেকে ৩০ মিনিট
সূর্যের আলোতে রাখতে হবে।
মায়ের
দুধ
মায়ের
দুধ শিশুকে ইনফেকশন, ডাইরিয়া,নিউমুনিয়া,মূত্র জাতীয় সমস্যা , এলার্জী,মুত্রনালীর সমস্যা ইত্যাদি রোগ হতে রক্ষা
করতে পারে তাই প্রতিটি
শিশুকে প্রথমেই মায়ের দুধ দিতে হবে।
আরও জানুন:
ফর্মুলা দুধ কি? খাওয়ার নিময় কি এবং ফর্মুলা দুধের চেয়ে বুকের দুধ কেন ভালো?
টিকা:
রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো জন্য খাবারের পাশাপাশি
টিকা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।টিকা দেয়ার
ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
বাড়ে। তাই শিশুদের সময়
মত টিকা দিতে হকবে
জেনে নিন-বাচ্চাকে কখন কিসের টিকা দিতে হয় ?
পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা
রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হলে খাবারের সাথে
সাথে শিশুদের পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে,তারা যেখানে
বসে,খায়,খেলাধুলা করে
সেই জায়গায় ও পরিস্কার রাখতে
হবে।শিশুকে নিয়মিত গোসল করাতে হবে।এতে
তাদের শরীরে রোগ জীবাণু কম
থাকবে।