কী কারণে নাকের পলিপ হয়? নাকের পলিপ স্থায়ীভাবে দূর করার উপায়? বিস্তারিত
নাকের পলিপাস হলে কি কি সমস্যা হয় ? নাকের পলিপাস কমানোর উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন –
ন্যাসাল পলিপাস হল নাকের বা সাইনাসের আস্তরণে নরম, ব্যথামুক্ত, ননক্যানসেরাস বৃদ্ধি। এটি আমাদের সবার কাছে খুবই কমন একটি সমস্যা। সাধারণত দীর্ঘদিন ধরে যদি কোন ব্যক্তি বিভিন্ন ধরনের পঞ্চ ইন্দ্রিয়গত সমস্যা যেমন : জ্বর, সর্দি, কাঁশি প্রভৃতিতে ভোগেন এবং এসব রোগের জন্য উপযুক্ত চিকিৎসা না পান তাহলে এর থেকে পরবর্তীতে নাকে পলিপের সমস্যা দেখা দিতে পারে। আবার কারও যদি মারাত্মক রকম এলার্জির সমস্যা থাকে তাহলে ও কিন্তু ন্যাসাল পলিপাস হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যেতে পারে। আর সময় মতো যদি এই অসুখের চিকিৎসা না করা হয় তাহলে পরবর্তীতে এটি আরও বেশি জটিল সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। সে জন্য আমাদের আজকের আর্টিকেলটিতে ন্যাসাল পলিপাস কমানোর ঘরোয়া উপায় গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
নাকের পলিপাস হলে কি কি সমস্যা হতে পারে ?
নাকের পলিপাস হলে বেশ কয়েকটি উল্লেখ যোগ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। সমস্যা গুলো সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো –
সর্দি জ্বর হওয়া :
প্রাথমিক অবস্থায় ন্যাসাল পলিপাস ধরা পড়লে সাধারণত আপনার হালকা নাক বন্ধ ও সর্দি জ্বর ভাব থাকতে পারে। আর সর্দিতে আঠালো ভাব বেশি দেখা যায় তাই সহজে পরিষ্কার হতে চায় না। অবস্থা খারাপ হলে দুই নাকই বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
হাঁচি-কাশি হওয়া :
নাকের ভেতর মাংস বৃদ্ধি পেলে আপনার নাকে যদি অল্প ধুলাবালি বা ধোঁয়া যায় তাহলে প্রচণ্ড হাঁচি-কাশি হতে পারে। এছাড়া ও অনেক সময় দম বন্ধ বন্ধ ভাব দেখা দিতে পারে।
ঘ্রাণ শক্তি কমে যাওয়া :
আপনার নাকে পলিপ যদি বৃদ্ধি পায় তাহলে এর কারণে ধীরে ধীরে নাকের ঘ্রাণ শক্তি অনেকাংশে কমে যেতে পারে।
মাথা ব্যথা করা :
প্রাথমিক অবস্থায় যদি আপনার ন্যাসাল পলিপাসের সমস্যা দেখা যায় তাহলে প্রথমে মাথা ব্যথা করতে পারে। পলিপের অবস্থা বেশি খারাপ হয়ে গেলে এক পর্যায়ে হঠাৎ করে এই ব্যথা গায়েব হয়ে যেতে পারে।
কানে ব্যথা করা :
নাকের মাংস বেড়ে গেলে আপনার কানের ভিতরে মাঝে মধ্যে হালকা ব্যাথা বা কামড়াতে পারে। এছাড়া কানের ভেতরে শোঁ শোঁ আওয়াজ হতে পারে।
পলিপাস দূর করার ঘরোয়া উপায়
নাকের পলিপাস ঘরোয়া উপায়ে নিরাময় করার উপায় গুলো সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো –
ঘর ও আসবাবপত্র সব সময় পরিষ্কার পরিছন্ন রাখা :
ন্যাসাল পলিপাস দূর করার সর্বোত্তম উপায় হল ঘর বাড়ি এবং আমাদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র গুলো সব সময় পরিষ্কার রাখা। কারণ ঘরে ধুলাবালি বেশি হয়ে গেলে এলার্জি হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যাবে। আর এলার্জির কারণেই মূলত পলিপের সমস্যা বৃদ্ধি পায়। তাই ঘরে প্রয়োজনের তুলোনায় বেশি জিনিস রাখবেন না এবং কখনই ঘরের মেঝেতে কার্পেট বিছিয়ে রাখবেন না। আর রাখলে ও তা নিয়মিত পরিষ্কার করবেন। আর বিছানার চাদর, বালিশের কভার সব সময় পরিষ্কার রাখবেন এবং লেপ, কাথা, ২-১ দিন পর পর রোদে দিবেন। ঘরে ময়লা জমতে দিবেন না এবং ঘরে যেন পর্যপ্ত আলো বাতাস ঢুকতে পারে সে বিষয়ে লক্ষ রাখবেন।
ঠান্ডা পানীয় বা খাবার খাওয়া যাবে না :
আপনি যদি ঠান্ডা পানীয় বেশি পান করেন বা ফ্রিজে রাখা খাবার গরম না করে খান তাহলে ও কিন্তু আপনার নাকের পলিপ বৃদ্ধি পেতে পারে। কারণ ঠান্ডা খাবার বা পানীয় গরম না করে খেলে এতে জীবাণু সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে এবং এর থেকে পরবর্তীতে আপনার নাকে পলিপ হতে পারে। আর ঠান্ডা খাবার বেশি খেলে এটি এক সময় আপনার টনসিল বৃদ্ধির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। সে জন্য আপনাকে সকল প্রকার ঠান্ডা জাতীয় খাবার যেমন: ফ্রিজে রাখা খাবার, আইসক্রিম, কোল্ড ড্রিংক প্রভৃতি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
আদা :
আমরা সবাই জানি, আদা বহু গুণে গুণাণ্বিত একটি খাবার। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, আদাতে রয়েছে এমন কিছু অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল জাতীয় উপাদান যা আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের জীবাণুর সংক্রমণ ছড়াতে বাধা দিবে। আর তাছাড়া ও আদা খাওয়ার ফলে আপনি নানা ধরনের ব্যথা থেকে মুক্তি পাবেন কারণ এই খাবারে রয়েছে সকল ধরনের স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং এর কোন ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। এটি আপনার নাকের পলিপের সমস্যা নিয়ন্ত্রনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সে জন্য রান্নার সময় আদার গুড়ো বা আদা কুচি ব্যবহার করতে পারেন। যদি আপনি সকাল-বিকাল আদা চা বানিয়ে খেতে পারেন তাহলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাবেন।
কাঁচা হলুদ :
কাঁচা হলুদ বা হলুদে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান সমৃদ্ধ গুণ রয়েছে। যা আমাদের শরীরকে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ জনিত রোগ থেকে বাঁচাতে সাহায্য করার পাশাপাশি এলার্জি কমাতে ও সাহায্য করবে। আর ন্যাসাল পলিপাস হওয়ার মূল কারণ হলো এলার্জি । সেজন্য হলুদ খেতে পারলে আপনার এলার্জি হওয়ার আশঙ্কা অনেকাংশে কমে যাবে। এর ফলে ন্যাসাল পলিপাস হওয়ার চান্স দূর হয়ে যাবে। এই সমস্যা দূর করার জন্য আপনি হলুদ দিয়ে চা বানিয়ে খেতে পারেন। এছাড়াও আপনি একটি পাত্রে অল্প পরিমাণ পানি নিয়ে তা ভাল করে ফুটিয়ে এর মধ্যে কিছু পরিমাণ হলুদ গুড়ো এবং ২-৩ ফোঁটা মধু মিক্সড করে খেতে পারেন। এতে করে আপনার এলার্জি জনিত সমস্যা কমে যাবে এবং এর পাশাপাশি পলিপাসের প্রবলেম থেকেও মুক্তি পেয়ে যাবেন।
রসুন :
রসুনর ও অনেক উপকারী গুণ রয়েছে। এটি মুলত আমাদের দেহে অ্যান্টোবায়েটিক হিসেবে কাজ করে থাকে। এর ফলে শরীরে কোন রোগ জীবাণু প্রবেশ করলে তা ধ্বংস হয়ে যাবে। অর্থাৎ রসুন আপনার দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং দেহের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। নাকের পলিপের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রসুন অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। নাকের পলিপের সমস্যা দূর করার জন্য আপনি কাঁচা রসুন খেতে পারেন। এতে ভাল কাজ দিবে এবং এটি স্বাস্থের জন্য বেশ উপকারী। এছাড়াও রসুন আপনার খাদ্যনালী বা পাকস্থলির কার্য ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে। এর ফলে খাদ্যনালীতে আগত খাদ্যবস্তু গুলো দ্রুত হজম হবে। এর পাশাপাশি রসুন আপনার শরীরের জন্য ব্যাথা নাশক হিসেবে ও কাজ করবে। তাই নিজেকে সুস্থ রাখার জন্য খাবার তালিকায় প্রতিদিন রসুন রাখার চেষ্টা করবেন।
আরও জানুন:
মাথা ব্যথার কারণ কী? মাথাব্যথা হলে কি করবেন?
সাইনুসাইটিস (Sinusitis) কি? এবং সাইনুসাইটিস হওয়ার কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে
কিভাবে নাকের পলিপ স্থায়ীভাবে নিরাময় করা যায় ?
শেষ কথা :
নাকের পলিপ সামান্য সমস্যা মনে হলে ও যদি এটিকে সময় মতো চিকিৎসা করা না হয় তাহলে পরবর্তীতে এটি আপনার জন্য মারাত্মক যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই এই সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই উপরিউক্ত পদ্ধতি গুলো অনুসরণ করুন এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের কাছ থেকে এ বিষয়ে পরামর্শ গ্রহণ করুন।