শিশুর পাতলা পায়খানা ও বমি হলে করণীয় কি?বিস্তারিত
সাধারণত বিভিন্ন ধরনের রোগ-জীবাণু পেটে গেলে পাতলা পায়খানা ও বমি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পাতলা পায়খানা বেড়ে গেলে অর্থাৎ তিন দিনের বেশি থাকলে ডায়রিয়া বলে ধরা হয়।
সাধারণত
কোন কারনে পাতলা পায়খানা ও বমি হয়ে থাকে এটা
না জানতে পারলেও পাতলা পায়খানা ও বমি হওয়ার
বেশ কিছু কারণ লক্ষ করা যেতে
পারে।
আসুন জেনে নেই,
কী কী কারণে পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হয় ?
১.বিভিন্ন ধরনের ওষুধ রয়েছে যেগুলোর
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ফলে পাতলা পায়খানা
ও বমি হতে পারে।
২.খাদ্যের বিষক্রিয়া। খাদ্যের বিষক্রিয়ার ফলে অনেক সময়
পাতলা পায়খানা ও বমি হওয়ার
সম্ভাবনা থাকে।
৩.কোন খাবারে এলার্জি
থাকলে সেই খাবার খাওয়ার
ফলে পাতলা পায়খানা ও বমি হতে
পারে।
৪.পাকস্থলীতে জীবাণুর প্রবেশের ফলে পাতলা পায়খানা
হতে পারে।
৫.নরো ভাইরাসের আক্রমণে
পাতলা পায়খানা ও বমি হতে
পারে।
৬.এডিনো ভাইরাসের আক্রমণের ফলে পাতলা পায়খানা
ও বমি হতে পারে
তাছাড়াও,
গর্ভ অবস্থা মাইগ্রেনের ব্যথা ধরনের ইনফেকশন অতিরিক্ত গ্যাসের সমস্যা ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কানের ভিতরে ইনফেকশন ইত্যাদি কারণে বমি হতে পারে।
এছাড়া
পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মত অনুযায়ী হাত
না ধুয়ে খাবার খেলে বা দূষিত
পানি পান করলে পাতলা
পায়খানা হতে পারে।
আমরা
অনেক সময় পাতলা পায়খানা
ও বমি হলে ভয়
পেয়ে যায়। এখানে ভয়ের কিছুই নেই। সঠিক পরিচর্যা
ও সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে
অতি দ্রুত সুস্থ হয়ে যাওয়া সম্ভব।
বাসায় বসে ও রোগীর
সেবা করতে পারেন।
পাতলা পায়খানা হলে করণীয় --
১.যেহেতু পাতলা পায়খানা হলে শরীরের পানি
বেরিয়ে আসে অসুরের পানিশূন্য
হয়ে পড়ে তাই প্রথমে পানিশূন্যতা
রোধে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি ও তরল
জাতীয় খাবার খেতে হবে। যেমন
চিড়ার পানি, ভাতের মাড়, ডাবের পানি ইত্যাদি।
২.যে কোন সময়
খেতে পারবেন মনে হলে তখনই
খেয়ে নিতে হবে।
৩.নির্দিষ্ট কোন খাবারের দরকার
নেই। যেমন ধরেন ধারণা
করা হয় পাতলা পায়খানা
হলে কাচ
কলা ও ভাত খেতে
হবে। তাছাড়া অন্য কিছু খাওয়া
যাবেনা। এটা সঠিক নয়।
৪.বাড়িতে থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে
বিশ্রাম নিতে হবে।
৫.দুই বছর বয়সী
শিশুদের 50 থেকে 100 মিলি তরল পানীয়
এবং দুই থেকে 10 বছরের
শিশুদের 200 মিলি তরল পানীয়
এবং 10 বছরের বেশি ও বড়দের
তরল পানীয় খেতে পারেনা ততটুকুই
খেতে দিতে হবে।
৬.শক্ত বা ফর্মুলা
খাবার খায় এধরনের শিশুদেরকে
খাওয়ানোর মাঝে মাঝে পানি
পান করাতে হবে।
৭.অনেকেই আপনারা শিশুদের পাতলা পায়খানা হলে বুকের দুধ
খাওয়ানো বন্ধ করে দেন।
এমনটা কোনভাবেই করা যাবে না।
পাতলা পায়খানা হলে বুকের দুধ
বা ফর্মুলা দুধ যাই হোক
না কেন শিশুকে খাওয়াতে
হবে। খেতে না চাইলে
বা বমি আসলে অল্প
অল্প খাওয়াতে হবে।
৮.যে বাচ্চারা ফর্মুলা
দুধ খায় তাদেরকে ফর্মুলা
অনুযায়ী দুধ বানিয়ে খাওয়াতে
হবে বেশি পাতলা বা
ঘন করা যাবে না।
৯.শিশুকে তিন-চার ঘণ্টা
পরপর খাওয়াতে হবে বেশি না
খেতে পারলে অল্প অল্প করে
খাওয়াতে হবে।
১০.প্রত্যেকবার পাতলা পায়খানা হওয়ার পর খাবার স্যালাইন
খাওয়াতে হবে। অনেকেই দেখা
বাচ্চা ছিলেন খেতে চায় না
বলে অল্প পানির মাঝে স্যালাইন
গুলিয়ে তা বাচ্চাকে
খাওয়ান।মনে রাখতে হবে যে খাবার
স্যালাইন সাধারণ কোন খাবার নয়
যে আপনি আপনার ইচ্ছা
মত খাবেন। এটা কোনভাবেই করা
যাবে না। বাচ্চা যতটুকুই খেতে পারো না
কেন প্যাকেটের নির্দেশনা অনুযায়ী পর্যাপ্ত
পরিমাণ পানিতে স্যালাইন গুলাতে
হবে।
১১.National
Library of medicine এর
তথ্য অনুসারে পাতলা পায়খানা ও বমি হলে উচ্চ
পটাশিয়াম জাতীয় খাবার যেমন কলা, আলু
ফলের রস খাওয়া যাবে।
১২.প্রতিবার পায়খানা হওয়ার পর তরল খাবার
খেতে হবে।
১৩.চামড়া ছাড়া মুরগী, পিনাট
বাটার পাতলা পায়খানা কমাতে সাহায্যে করে। ফলে এগুলো
খাওয়া যেতে পারে।
১৪.বিশুদ্ধ পানি পান করতে
হবে, দরকার হলে পানি ফুটিয়ে
খাওয়াতে হবে।
এছাড়া এ সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা ও সুস্থ হতে গুরুত্বপূর্ণ। হাতমুখ সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে প্রত্যেকবার পায়খানার পর অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। নিয়মিত গোসল করতে হবে ।চলুন জেনে নেয়া যাক ঘরে থাকা কোন কোন খাবার পাতলা পায়খানা ও বমি হলে খাওয়ানো যেতে পারে ও দ্রুত সুস্থ করতে সাহায্য করে -
পাতলা পায়খানা ও বমি হলে কি কি খাওয়া যেতে পারে ?
পানি :
পানির
অপর নাম যেমন জীবন
তেমনি পাতলা পায়খানা থেকে মুক্তির প্রথম
ও প্রধান উপায় হল বেশি বেশি
পানি পান করা তবে
শুধু পানি নয় বিশুদ্ধ
পানি হতে হবে।যেহেতু পায়খানা
হলে শরীর থেকে পানি
বেরিয়ে যায় ফলে শরীর
পানিশূন্য হয়ে পড়ে এতে
শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়ে তাই
পাতলা পায়খানা কমাতে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে
হবে আর পানিত আমাদের
সকলের ঘরে সব সময়
থাকে।
কলা :
কলার
রয়েছে উচ্চমাত্রার পটাশিয়াম যা আমাদের হজম
শক্তির ঔষধ। পেটে ব্যথা
কমাতে সাহায্য করে, শরীর থেকে
বেরিয়ে যাওয়া পুষ্টি ও পানির ভারসাম্য
বজায় রাখে। তাই পাতলা পায়খানা
হলে কলা খাওয়া যেতে
পারে।
দই :
দইয়ের
প্রবায়টিকস পেট ঠাণ্ডা করতে
সাহায্য করে। দুয়ের মধ্যে
থাকা ব্যাকটেরিয়া জাপাকে পায়খানা ও বমি রোধে
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে পাতলা
পায়খানা হলে দই খাওয়া
ভালো।
ফলের
রস :
শরীরে পানিশূন্যতা কমানোর জন্য পানির সাথে বিভিন্ন ধরনের ফলের রস যেমন তরমুজের জুস ডালিমের জুস ইত্যাদি পান করা যেতে পারে।
কিভাবে খাবার স্যালাইন তৈরি করবেন
ঘরে থাকা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে ঝটপট বানিয়ে নিতে পারেন খাবার স্যালাইন। খাবার স্যালাইন বানানোর জন্য প্রয়োজন হবে লবন,চিনি বা গুড়,বিশুদ্ধ পানি ও পরিষ্কার পাত্র।
খাবার স্যালাইন প্রস্তুত
প্রনালি :
আধা
লিটার ফুটানো ঠান্ডা পানিতে এক চিমটি লবন
ও এক মুট গুড়
বা ৩ চামচ চিনি
দিয়ে ভালো করে মিসিয়ে
ছাকনি দিয়ে ছেকে নিন।
হয়ে গেলো ঘরে তৈরি
খাবার স্যালাইন।
পাতলা পায়খানা ও বমি হলে যে সকল খাবার খাবেন না
ফ্যাট
যুক্ত ও তৈলাক্ত খাবার :
পাতলা
পায়খানা ও বমি হলে
ফ্যাট যুক্ত খাবার ও তৈলাক্ত খাবার
এটিয়ে চলা উচিত।কেননা এ
সময়ে ফ্যাট ও তৈলাক্ত খাবার
খেলে পায়খানা বেশি হওয়ার সম্ভাবনা
থাকে।
দুধ
ও দুদ্ধজাত খাবার :
পাতলা
পায়খানা ও বমি হলে
দুধ ও দুধজাত খাবার
খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
এতে শরীরের ল্যাকটোজ অসহনীয় হয়ে পড়ে।তাই এসময়
দুধ ও দুদ্ধজাত খাবার
না খাওয়ায় ভালো।
বীজ :
পাতলা
পায়খানা ও বমি হলে
সব ধরনের ডাল ও সব
ধরনের বীজ যেমন শিমের
বীজ ইত্যাদি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
কেননা এতে গ্যাস সৃষ্টি
হয়।
চিনিযুক্ত
খাদ্য :
চিনিযুক্ত
খাদ্য হজমে বাধা সৃষ্টি
করে। ফলে পেট ফাপা
হয়ে থাকে এবং পাকস্থলীর
সমস্যা বাড়িয়ে তোলে।তাই এসময় চিনিযুক্ত খাদ্য
না খাওয়ায় ভালো ।
ফল
ও শুকনো ফল :
শুকনো
ফলে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে ফলে শুকনো
ফল কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য
করে। এইজন্য শুকনো ফল যেমন কিসমিস
আলুবোখারা ইত্যাদি পাতলা পায়খানা হলে না খাওয়া
উচিত।
অন্যদিকে
একই কারণে উচ্চ ফাইবার যুক্ত
ফল যেমন নাশপাতি, আ্যপেল
ইত্যাদি পাতলা পায়খানা ও বমি হলে
না খাওয়া ভালো।খেলে পায়খানা বেশি হতে পারে।
শাকসবজি :
শাক
সবজির মধ্যে কিছু শাক সবজি
আছে যেমন ব্রোকলি, বাঁধাকপি,
ফুলকপি ইত্যাদি পাতলা পায়খানা হলে না খাওয়া
ভালো।খেলে গ্যাসের সমস্যা তৈরি হয় ও
পেটে ব্যথার সৃষ্টি হতে পারে।
ডিম :
পাতলা
পায়খানা ও বমি হলে অনেকেই চিন্তা
করে ডিম খাওয়া যাবে
কি যাবে না? বা
খেলে কিভাবে খাওয়া যাবে। যারা মনে করেন
এসময় ডিম খাওয়া একদমই উচিত নয়। তাদের
ধারণা ভুল এসময় ডিম
খাওয়ার যেতেই পারে। তবে ডিম একটি
জটিল প্রক্রিয়া যা ধীরে ধীরে
হজম হয়। এই কারনে
পাতলা পায়খানা ও বমি হলে
ডিম না খাওয়া ভালো।
তবে যদি কেও খেতে
চাই খেতে পারে।তবে অবশ্যই
ডিম পরিপূর্ণ
ভাবে রান্না করতে হবে। এই
সময় কোনভাবে কাচা ডিম খাওয়া
যাবে না।
ক্যাফেইন :
ক্যাফেইন পাকস্থলীর ভিততের প্রাচিরকে উদ্দপিত করে তোলে ফলে মল বৃদ্ধি পায়।এই জন্য কাফেইন জাতীয় পানীয় যেমন কফি,চা এমনকি গ্রিন টি ও পান করা উচিত নয়।আ্যলকোহল ও ধুমপান থেকে নিজেকে ধুরে রাখুন।
ফল
ও শুকনো ফল :
শুকনো
ফলে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে ফলে শুকনো
ফল কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য
করে। এইজন্য শুকনো ফল যেমন কিসমিস
আলুবোখারা ইত্যাদি পাতলা পায়খানা হলে না খাওয়া
উচিত।
অন্যদিকে একই কারণে উচ্চ ফাইবার যুক্ত ফল যেমন নাশপাতি, আ্যপেল ইত্যাদি পাতলা পায়খানা ও বমি হলে না খাওয়া ভালো।খেলে পায়খানা বেশি হতে পারে।
পাতলা পায়খানা ও বমি ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে যা যা করণীয়
১.খাবার তৈরি করার আগে
অবশ্যই ভালো করে হাত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন
করে নিতে হবে।
২.সকল ধরনে ফলমূল,
কাচা শাক-সবজী ভালো
করে ধুয়ে নিতে হবে।
৩.খাবার তৈরির জায়গা অবশ্যই খাবার তৈরির আগে ও পরে
পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে নিতে হবে।
৪.সকল খাবার ১৬০
ডিগ্রি তাপমাত্রায় রান্না করে নিতে হবে।
৫.বেচে যাওয়া খাবার
অতি তাড়াতাড়ি সংরক্ষণ করতে হবে।
৬.পায়খানা ও বমি কমে
গেলে বা সুস্থ হয়ে
গেলে কমপক্ষে
২-৩ দিন বাড়ির
বাইরে যাওয়া যাবেনা।
৭.পায়খানা বা বমি হয়েছে
এমন জায়গা,জামাকাপড় ও বিছানা সবকিছু
গরম পানি করে ডিটারজেন্ট
দিয়ে ধুতে হবে।
আরও পড়ুন:
শিশুর পেটের গ্যাস কমাতে যা করণীয়
পাতলা পায়খানা ও বমি হলে কখন ডাক্তার দেখাবেন ?
১.স্যালাইন খাওয়ার পর ও ৩
দিনে যদি না কমে
পাতলা পায়খানা তখন ডাক্তার দেখানো
উচিত।
২.বাচ্চা বুকের দুধ কম খেলে।
৩.শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিলে।
৪.বমির মাত্রা বেড়ে
গেলে এবং ২-৩ দিনের মধ্যে বন্ধ না হলে ।
৫.বমির সাথে রক্ত
আসলে বা বমির রঙ
সবুজ,হলুদ বা কালচে
হলে।
৬.শরীর দুর্বল হয়ে
গেলে বা শিশু নেতিয়ে
গেলে।