শিশুকে শাল দুধ খাওয়ানোর উপকারিতা
শাল দুধ কি? কেন শিশুকে শাল দুধ খাওয়াবেন?
শাল দুধ কিভাবে চিনবেন ?
শিশুর জন্মের পরপর অধিকাংশ মায়েরাই দুধ ঠিক মত আসছে না বলে চিন্তিত থাকেন। আর এই ভেবে তারা শিশুকে দুধ খাওয়াতে চান না। এর প্রধান কারণ হল তারা শাল দুধ চিনতে পারেন না। তাই চলুন শাল দুধ কিভাবে চিনবেন সে সম্পর্কে জেনে নেই,
* নবজাতক শিশু জন্মের কিছুক্ষন পর মায়ের স্তনবৃন্ত দিয়ে যে হলুদাভ ঘন, আঁঠালো দুধ বেরিয়ে আসে তাকে শাল দুধ বলা হয়। মায়ের এই শাল দুধ ১ থেকে ১২ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়। আর এই ১২ দিনের মধ্যে বাচ্চা জন্মের প্রথম ১২ ঘন্টার ভিতরে বাচ্চাকে যে দুধ খাওয়ানো হয় তাকে বলা হয় Transitional Milk এবং বাচ্চার জন্মের পরের তিন দিনের ভিতরে যে দুধ খাওয়ানো হয় তাকে Mature Milk বলা হয়।
* ১২ দিনের মধ্যে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো বাদ দিবেন না। কারণ এই ১২ দিন শিশুর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত শাল দুধ পরিমাণে খুব কম থাকে বলে মায়েরা চিন্তিত থাকেন। কিন্তু যতটুকুই আসুক না কেন তা একজন সদ্য জন্ম নেয়া শিশুর চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট থাকে। সে জন্য কোন অবস্থাতেই শিশুকে এই দুধ খাওয়া থেকে বিরত রাখা যাবে না।
কেন শিশুকে শাল দুধ খাওয়াবেন ?
শিশুকে শাল দুধ খাওয়ানো হলে সে যে ধরনের উপকার পাবে সে সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করাহলো –
প্রথম ভ্যাকসিন হিসেবে কাজ করা :
চিকিৎসক বিশেষজ্ঞ দের মতে, মায়ের শাল দুধ একজন নবজাতক শিশুর জন্য এতটাই উপকারি যে, এটিকে তার জীবনের First vaccine বা প্রথম টিকা হিসাবে গন্য করা হয়ে থাকে। সে জন্যই ডাক্তাররা বাচ্চা জন্মের এক ঘন্টার মধ্যেই বাচ্চাকে তার মায়ের শাল দুধ খাওয়াতে বলেন। এতে করে শিশু মৃত্যু ঝুঁকি অনেকটাই হ্রাস পায়। সে জন্য বাচ্চা জন্মের এক ঘন্টার মধ্যেই তাকে বুকের দুধ খাওয়াতে চেষ্টা করবেন।
দ্রুত বুকে দুধ আসা :
আপনার বাচ্চার জন্মের পরপর যদি তাকে শাল দুধ খেতে দেন তাহলে সে খুব দ্রুতই বুকের দুধ টেনে খেতে শিখে যাবে। আর এর সাথে সাথে প্রোল্যাক্টেন হরমোনের নিঃসরণ ও বৃদ্ধি পেতে থাকবে। এর ফলে ১২ দিন পর থেকে স্বাভাবিক ভাবেই দ্রুত স্তনে প্রচুর দুধ আসতে শুরু করবে। তাই জন্মের পর থেকে প্রথম ১২ দিন পর্যন্ত বুকের দুধ কম আসছে বলে ঘাবড়ে যাবেন না। বরং এ সময় শিশুকে শাল দুধ খাওয়া চালিয়ে যাবেন।
এন্টিবডি তৈরি করতে সাহায্য করা :
শাল দুধ আপনার শিশুর শরীরে এন্টিবডি তৈরি করতে সাহায্য করবে। যা শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির সাহায্য করবে। মায়ের শাল দুধ ছাড়া অন্য কোন খাবারে খুব বেশি পরিমাণে এন্টিবডি পাওয়া যায় না। তাই শিশুর প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলার জন্য অবশ্যই তাকে শাল দুধ খেতে দিবেন।
পুষ্টির চাহিদা পূরণ করা :
মায়ের শাল দুধ অন্যযে কোন খাবারের তুলনায় অধিক পুষ্টিকর। আর এই দুধে সকল পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান থাকে। সে জন্য এ সময় বাচ্চাকে আলাদা করে বাড়তি খাবার দেওয়ার প্রয়োজন পড়বে না। এই দুধ যদি আপনি বাচ্চাকে ঠিক মত পান করাতে পারেন তাহলে আপনার বাচ্চার পুষ্টিতে কোন ঘাটতি থাকবে না।
জন্ডিস প্রতিরোধ করা :
অধিকাংশ শিশুর জন্মের পরে কিছু দিনের মধ্যেই তাদেরকে জন্ডিসে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব শিশুরা জন্মের পরে ঠিক মত শাল দুধ পান করে না তাদের ক্ষেত্রে এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। কিন্তু আপনি যদি বাচ্চার জন্মের পরে ঠিক মত শাল দুধ পান করান তাহলে বাচ্চার শরীরে এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য এন্টিবডি তৈরি হবে। এর ফলে শিশুর জন্ডিস হবে না।
কালো পায়খানা বের করতে সাহায্য করা :
বাচ্চার জন্মের পর তার শরীর থেকে যে প্রথম পায়খানা বের হয় তা কালো রঙের হয়। অনেক বাচ্চার ক্ষেত্রে এই পায়খানা বের হতে দেরি হতে পারে। কিন্তু শাল দুধ খেলে দ্রুতই বাচ্চার শরীর থেকে কালো পায়খানা বের হয়ে যাবে।
নিয়মিত পায়খানা হওয়া :
শাল দুধ পান করার ফলে আপনার শিশুর খাবারের চাহিদা পূরণ হবে এবং পেট ভরা থাকবে। এর পাশাপাশি এই দুধ প্রয়োজনীয় তরলের চাহিদা পূরণ করবে। এতে করে বাচ্চার শরীর কড়া হবে না। এর ফলে আপনার বাচ্চার নিয়মিত পায়খানা হবে।
ভিটামিনের অভাব পূরণ করা :
শাল দুধে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ থাকে। যা ছোট বাচ্চাদেরকে রাতকানা রোগ হওয়া থেকে রক্ষা করবে। তাই আপনার বাচ্চার জন্মের পর তাকে নিয়মিত এই দুধ পান করাবেন।
শিশুকে উষ্ণ রাখা :
আমরা সবাই জানি, শিশুদের শীত শীত অনুভূতি একটু বেশি থাকে। তবে যদি শিশুকে শাল দুধ খাওয়ান তাহলে এ সময় সে মায়ের গায়ের সাথে লেগে থাকবে। এর ফলে মায়ের শরীর থেকে শিশু উষ্ণতা পাবে। এতে করে শিশুর ঠান্ডা লাগার আশঙ্কা কমে যাবে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে শাল দুধের ভূমিকা
আপনার বাচ্চা শাল দুধ পান করলে এটি তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করবে। এতে করে শিশুর শরীরে যদি কোন জীবণু প্রবেশ করে তাহলে এর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য প্রয়োজনীয় এন্টিবডি তৈরি হবে। যার ফলে শিশু প্রয়োজনীয় সংক্রমক রোগ যেমনঃ ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, সেপসিস প্রভৃতি হওয়া রোধ করবে।
আরও জানুন:
শিশুর বয়স এক বৎসর পার না হলে কোন কোন খাবার দেওয়া যাবে না?
আমাদের পরামর্শ:
প্রত্যেক মা ই চান তার সন্তান যেন সুস্থ ও স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে উঠে। আর শিশুকে ঠিক মত শাল দুধ খাওয়ানো হলে অধিকাংশ মায়ের এই আকাঙ্খাই পূরণ হয়ে যাবে। তাই আমাদের উচিত শিশুকে শাল দুধ খাওয়ানোর তাৎপর্য সম্পর্কে জনা এবং উপরিউক্ত বিষয় গুলো মাথায় রেখে শিশু যেন ঠিক মত মায়ের শাল দুধ খেতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখা।