শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর যে উপকারিতা

শিশুকে বুকের দুধ কেন খাওয়াতে হবে ? শিশুকে বুকের দুধ খেলে কি ধরনের উপকার পাবেন ? বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন


মা তার শিশুকে দুধ খাওয়াচ্ছে 

একজন নবজাতক শিশুর জন্মের পরে পরিপূর্ণ সুস্থতা তার মায়ের কাছ থেকেই পায়। আর এই সুস্থতা আসে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর মাধ্যমে। কারণ মায়ের বুকের দুধ খেলে শিশুর শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ যা শিশুর শরীরে  রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। যার জন্য শিশুর স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। আর শিশুকে ব্রেস্ট ফিডিং করানো শুধুমাত্র তার শিশুর জন্যই উপকার বহন করে না, এর ফলে একজন মা প্রসবের পরে বিভিন্ন ধরনের শারিরীক দুর্বলতা দ্রুত কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়। কিন্তু কেন খাওয়াতে হবে এবং খেলে কি উপকার পাওয়া যাবে সে সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি না। সে জন্য শিশুর জন্মের পরে অনেক মা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে চান না। যার ফলে মা শিশু দুজনকেই বিভিন্ন ধরনের জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়। সে জন্য আমাদের এই বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা খুবই জরুরি। 

 তাই চলুন আমরা, শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো সম্পর্কিত বিষয় গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই, 

ব্রেস্ট ফিডিং (Breast feeding) কি ?

ব্রেস্ট ফিডিং বা বুকের দুধ খাওয়ানো হল এক ধরনের স্বাস্থসেবা মূলক পদ্ধতি। মাতার স্তন্য দুধ দিয়ে সদ্যজাত শিশু এবং বাচ্চাদের লালন পালন করার  প্রক্রিয়াকে ব্রেস্ট ফিডিং চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ব্রেস্ট ফিডিং বলে। একজন নবজাতক শিশুকে তার জন্মের পর থেকে মাস পর্যন্ত শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধ খাওয়াবেন। অন্য কোন খাবার দিবেন না। মাস পর থেকে বুকের দুধের পাশাপাশি নরম খাবার দিবেন।

শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ালে যে ধরনের উপকার পাবেন ?

শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ালে যে উপকারিতা গুলো পাওয়া যাবে সে সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো

শিশুর ক্ষেত্রে :

শিশু নিয়মিত বুকের দুধ খেলে তার ক্ষেত্রে যে ধরণের সুবিধা দেখা যাবে তা নিম্নরূপ :

শিশুর দৈহিক মানসিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করা :

মায়ের বুকের দুধে সকল ধরনের পুষ্টিমান নিশ্চিত থাকে যা আপনার শিশুর দৈহিক বৃদ্ধি মানসিক বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মায়ের বুকের দুধে বিভিন্ন ধরনের কার্যকরী উপাদান যেমন : লিনোলেনিক এসিড, ওমেগা- ফ্যাটি এসিড এবং কোলেস্টরল প্রভৃতি সহ প্রায় ২০০ ধরণের উপাদান রয়েছে। যার প্রতিটি উপাদানই শিশুর জন্য একান্ত প্রয়োজনীয়, যা আপনি অন্য কোনো ফর্মুলা দুধে পাবেন না আপনি যদি শিশুকে নিয়মিত ব্রেস্ট ফিডিং করান তাহলে এতে থাকা উপাদান গুলো শিশুর মস্তিষ্ক গঠনে সাহায্য করবে। এর ফলে আপনার শিশু একজন মেধাবী বুদ্ধিমান মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে বিশেষজ্ঞ দের মতে, জন্মের পর থেকে যেসব শিশু নিয়মিত মায়ের বুকের দুধ খায় তাদের বুদ্ধির বিকাশ অন্য শিশুদের তুলনায় প্রায় গুণ বেশি হয়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা :

চিকিৎসক বিশেষজ্ঞ দের মতে, মায়ের দুধ হল বিশুদ্ধ বা খাঁটি এবং পরিচ্ছন্ন। এতে  কোন প্রকার ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া থাকে না। তারা আরও বলেছেন যে, ব্রেস্ট ফিডিং না করা বাচ্চাদের তুলনায় ব্রেস্ট ফিডিং করা বাচ্চাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকে। অর্থাৎ তাদের শরীরে রোগ জীবাণু সহজে এ্যাটাক করতে পারবে না।

আরও পড়ুন:শীতকালে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবেন যেভাবে 

আপনি যদি শিশুকে নিয়মিত বুকের দুধ খাওয়ান তাহলে দুধ থেকে তার বডিতে এনজাইম, অ্যান্টিবডি এবং ভিটামিন প্রভৃতি উৎপন্ন হবে। যা আপনার বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে অনেক বেশি বাড়িয়ে দিবে। তার মানে হল যখন শিশুর শরীরে কোন জীবাণু প্রবেশ করে তখন মায়ের বুকের দুধ খাওয়ার জন্য তার শরীরে যে এন্টিবডি তৈরি হয়েছে এন্টিবডি ক্ষতিকর জীবাণু গুলোকে মেরে ফেলবে। এতে করে আপনার সন্তান বিভিন্ন ধরণের সংক্রামক রোগ যেমন : নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, কানপাকা মেনিনজাইটিস প্রভৃতি হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবে।

জটিল রোগ হওয়ার থেকে রক্ষা পাওয়া :

গবেষণায় দেখা গেছে যে,  যেসব বাচ্চারা রেগুলার ব্রেস্ট ফিডিং করে তাদের ক্ষেত্রে  পরবর্তীতে বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগ যেমন : উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং স্থুলতা প্রভৃতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা তুলনামূলক ভাবে অনেক কম থাকে।  এছাড়া নিয়মিত ব্রেস্ট ফিডিং করা বাচ্চারা বিশেষ কিছু রোগ যেমন : দাঁতের অসুখ হাঁপানি, এলার্জি, এক্সিমা, প্রভৃতি হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পায় সে জন্য আপনার শিশুকে জন্মের পর থেকে ছয় মাস পর্যন্ত শুধুমাত্র ব্রেস্ট ফিডিং করানোর চেষ্টা করবেন। এতে করে আপনার শিশু উক্ত রোগ ব্যধি হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবে।

ভিটামিনের অভাব পূরণ করা :

আজকাল অধিকাংশ বাচ্চাদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, তারা খুবই অল্প বয়সে অন্ধত্ব স্কার্ভি ইত্যাদি রোগে ভোগে। যা মূলত হয় ভিটামিন ভিটামিন সি অভাবের কারণে। জন্মের পর থেকে তাদের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন না থাকার কারণে তাদের শরীরে এসব রোগ দেখা দিয়েছে। কিন্তু যেসব বাচ্চারা নিয়মিত মায়ের বুকের দুধ খায় তাদের শরীরে  থাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এবং ভিটামিন সি থাকে। সে জন্য তারা তুলনামূলক ভাবে এসব রোগে কম আক্রান্ত হয়। তাই ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করতে হলে আপনার শিশুকে মাস পর্যন্ত নিয়মিত ব্রেস্ট ফিডিং করান এর ফলে আপনার শিশু অন্ধত্ব স্কার্ভি রোগ হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবে।

ভ্যাকসিন হিসেবে কাজ করা :

জন্মের পর নবজাতককে সবার প্রথমে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো হয়। আর এই দুধকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় শাল দুধ বলা হয়ে থাকে। আর এই শাল দুধ নবজাতকের জন্য First Natural Vaccine বা প্রথম প্রাকৃতিক টিকা হিসেবে কাজ করে। সে জন্য বাচ্চার জন্য শাল দুধ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তাই সন্তান জন্মের এক ঘন্টার মধ্যেই তাকে শাল দুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন।

আরও জানুন:শাল দুধ কি ? কেন শিশুকে শাল দুধ খাওয়াবেন ?

দ্রুত স্বাস্থ্যবান হয়ে উঠতে সাহায্য করা :

মায়ের বুকের দুধ হল শিশুর জন্য একটি আদর্শ খাবার। কারণ এতে সকল ধরনের পুষ্টি উপাদানে পরিপূর্ণ রয়েছে। যার জন্য শিশুর পুষ্টির কোন চাহিদা থাকবে না। এর ফলে সে দ্রুত স্বাস্থ্যবান হয়ে বেড়ে উঠবে। তাই শিশুর পুষ্টির চাহিদা পূরণের জন্য তাকে ঠিক মতো দুধ পান করান। এতে করে সে তাড়াতাড়ি স্বাস্থ্যবান হয়ে বেড়ে উঠবে।

মৃত্যুহার কমানো :

গবেষণায় দেখা গেছে যে, জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যেই যদি শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানো যায় তাহলে নবজাতক মৃত্যুর হার প্রায় ২২ শতাংশের মত কমানো সম্ভব হবে। তাই নবজাতক শিশুর মৃত্যুহার ঠেকাতে হলে তার জন্মের হক ঘন্টার মধ্যেই তাকে বুকের দুধ খাওয়ান।

শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ালে মায়ের যত উপকারিতা

শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ালে একজন মায়ের ক্ষেত্রে যে ধরণের সুবিধা দেখা যাবে তা নিম্নরূপ :



শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর যে উপকারিতা
শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর যে উপকারিতা


প্রসব পরবর্তী রক্তপাত নিয়ন্ত্রণ করা :

সিজারিয়ান ডেলিভারি বা নরমাল ডেলিভারি যাই হোক না কেন প্রসবের পরে আপনার যোনিপথ দিয়ে প্রচুর পরিমাণে রক্তপাত হয়। চিকিৎসক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুকে নিয়মিত ব্রেস্ট ফিডিং করানো হলে মায়ের শরীরের রক্তপাত দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আসবে। সে জন্য আপনি যদি শিশুকে নিয়মিত বুকের দুধ খাওয়ান তাহলে আপনার এর জন্য শরীরে অতিরিক্ত তরল পদার্থ বেরিয়ে যাবে এবং রক্তপাত নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

প্রসব পরবর্তী ওজন কমাতে সাহায্য করা :

প্রসবের পরবর্তী সময়ে অধিকাংশ মায়ের ওজন বেড়ে যায় মুটিয়ে যান। যা সহজে কমানো সম্ভব হয় না। কিন্তু সময় যদি আপনি শিশুকে নিয়মিত বুকের দুধ পান করান তাহলে আপনার শরীর থেকে অতিরিক্ত ফ্যাট জাতীয় পদার্থ বুকের দুধের মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে গিয়ে শিশুর শরীরে ফ্যাটের চাহিদা পূরণ করবে। যার ফলে আপনার প্রসব পরবর্তী সময়ে ওজন অনেকাংশে কমে যাবে।

জেনে নিন-সিজারের পর পেটের মেদ কমাবেন কিভাবে

মাসিক চক্র ঠিক রাখা :

বাচ্চাকে নিয়মিত ব্রেস্ট ফিডিং করালে মাসিক শুরু হতে দেরি হয় বটে। প্রসবের পরে যদি আপনি বাচ্চাকে নিয়মিত বুকের দুধ খাওয়ান তাহলে আপনার মাসিক শুরু হতে চার থেকে ছয় মাস এর মত সময় লেগে যেতে পারে। তবে এটি আপনার মাসিক চক্রকে ঠিক রাখতে সাহায্য করবে। অর্থাৎ প্রতি মাসে পিরিয়ড নিয়মিত হবে বা পিরিয়ড সাইকেলকে নিয়মিত রাখতে সাহায্য করবে।

গর্ভকালীন ধকল কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করা :

প্রসবের পরে আপনার শরীরে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন যেমন : জরায়ু মুখ বড় হয়ে যাওয়া, সেলাই,  কাটা-ছেঁড়া প্রভৃতি ঘটে থাকে। এমতবস্থায় আপনি যদি শিশুকে রেগুলার ব্রেস্ট ফিডিং করান তাহলে আপনার শরীরের হরমোন, রক্ত চলাচল প্রভৃতি কার্যক্রম সক্রিয় থাকবে। যার জন্য জরায়ুর মুখ দ্রুতই তার স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরে আসবে। এতে করে আপনি গর্ভকালীন ধকল দ্রুত কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবেন।

পুনরায় গর্ভধারণ রোধ করা :

প্রসবের পরে আপনি যদি পুনরায় গর্ভবতী হতে না চান তাহলে আপনার শিশুকে নিয়মিত বুকের দুধ খাওয়াবেন এবং চার ঘণ্টা পর পর শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াবেন। এটি আপনার পুনরায় গর্ভধারণ হওয়াকে রোধ হবে।

জটিল রোগ হওয়া থেকে মুক্তি পাওয়া :

আপনি যদি বাচ্চাকে নিয়মিত বুকের দুধ খাওয়ান তাহলে শরীরে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকবে। এর জন্য দেহের অঙ্গ প্রতঙ্গ গুলো সক্রিয় থাকবে। এতে করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। যার জন্য আপনি বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগ যেমন : ব্রেস্ট ক্যান্সার এবং ইউটেরাস ক্যান্সার প্রভৃতি হওয়া থেকে রক্ষা পাবেন।

 মা শিশুর পারস্পরিক বন্ধন সুদৃঢ় হওয়া :

আমরা সবাই জানি, সন্তানের সঙ্গে মায়ের নারীর সম্পর্ক রয়েছে। যা খুবই আবেগীয় একটি বিষয়। আর সন্তান জন্মের পরে সে সব সময় তার মায়ের কাছেই থাকে। আর এমতনস্থায় বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ালে এটি বাচ্চা মায়ের মধ্যে একটি ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে তোলে।

অর্থাৎ যদি আপনি সন্তানকে নিয়মিত বুকের দুধ খাওয়ান তাহলে এটি আপনার সঙ্গে শিশুর মনের সম্পর্ককে আরও বেশি গভীর করে তোলার পাশাপাশি এটি আপনার সঙ্গে সন্তানের পারস্পরিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করে তুলতে সাহায্য করবে।

কৌটার দুধের ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়া :

শিশুকে কৌটার দুধ খুবই ঝামেলার একটি বিষয়। এর জন্য আপনাকে বিভিন্ন ধরনের প্রস্তুতি যেমন : বোতল ধোয়া, দুধ ঠিক মতো বানানো, পানি গরম করা প্রভৃতি করতে হয়। কৌটার দুধ বানানোর অভ্যাস না থাকলে আপনি অনেক সময় দুধ বেশি ঘন বা বেশি তরল হয়ে যেতে পারে। এতে করে শিশুর প্রয়োজনীয় পুষ্টির ঘাটতি হতে পারে।

কিন্তু আপনি যদি শিশুকে নিয়মিত ব্রেস্ট ফিডিং করান তাহলে আপনাকে আলাদা এই সব কৌটার দুধ বানানোর দরকার হবে না। আর আপনি এই সব কৌটার দুধ বানানোরপ্রস্তুতির ঝামেলা থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন এবং এর পাশাপাশি এগুলো কেনার খরচের হাত থেকে রেহাই পাবেন।

পরিশেষে বলা যায় যে,

সুস্থ মায়ের কোলে সুস্থ শিশু আমাদের সকলের কাম্য। আর শিশু যদি নিয়মিত বুকের দুধ খায় তাহলে এই কাম্যতা পূরণ করা খুবই সহজ হয়ে যায়। তাই সন্তান জন্মের পরে বাচ্চা মা দুই জনকে সুস্থ রাখতে হলে অবশ্যই উপরিউক্ত বিষয় গুলো মাথায় রাখবেন এবং শিশুকে নিয়মিত বুকের দুধ খাওয়াবেন   



Post a Comment

Previous Next