শীতকালে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবেন যেভাবে বিস্তারিত
শীতকালে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবেন যেভাবে
এই বিষয়ে ঢাকা শিশু হাসপাতালের 'শিশুস্বাস্থ্য 'ও শিশু কিডনি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড.শিরিন আফরোজ বলেন 'শীতকালে ফ্লুয়ের প্রবনতা বেড়ে যায়। বাইরের তাপমাত্রা কমে যায় ফলে দেহে তাপমাত্রা কমে আসে।এর ফলে শিশু দুর্বল হয়ে পড়ে এবং সংক্রামনের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
শীতকালে
শিশুদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে মনোয়ারা শিকদার
মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দায়িত্বরত
সহকারী অধ্যাপক মো সাঈদুল হক
বলেন শীতকালে শিশুরা শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত
হয়। যেমন সর্দি-কাশি,
জ্বর থেকে শুরু করে
নিউমোনিয়া বা আজমার মত
জটিল সমস্যা হতে পারে।কান বা
গলায় সমস্যা, টনসিল
ফুলে যাওয়া ইত্যাদি।
শীতে ৬ মাস বয়সী শিশুরক রোটা ভাইরাস জনিত ডাইরিয়ায় আক্রান্ত বেশি হয়।তাছাড়া ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। তিনি আরো বলেন শীতকালে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে নবজাতকেরা।কারন তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অপরিপক্ব। এদের চামড়া পাতলা হওয়ায় শরীরের তাপমাত্রা ধরে রাখতে পারে না।
অন্যদিকে
ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের শিশু বিশেষজ্ঞ আ্যড্রিয়েন লিওদিস বলেন 'যেসব ব্যবস্থা শিশুদের প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করে তোলে তার বেসিরভাগই হলো আমাদের সাধারণ জ্ঞান।তাই আপনাদের বাচ্ছাকে অসুস্থ হওয়া এড়াতে উচিত সঠিক অভ্যাস গোড়ে তুলতে সাহায্য করা এবং ছোট থেকে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য পদক্ষেপ নেওয়া।
শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায়
শীতকালে শিশুদের ঠান্ডা খাবার থেকে দূরে রাখুন।ফ্রিজের খাবার খাওয়াতে হলে ভালোভাবে গরম করে নিন তবে বাচ্চাদের ফ্রিজের খাবার না খাওয়ানোই ভালো।
শীতকালে আবহাওয়া শুস্ক থাকে তাই বাচ্চাদের কুসুম-গরম দুধ, পানি,স্যুপ জাতীয় খাবার খাওয়াতে হবে। এতে শিশুর ঠান্ডার উপশম হবে।শীতকালে শিশুদের মৌসুমি ফল ও ভিটামিন সি জাতীয় ফল যেমন লেবু কমলালেবু, মালটা ইত্যাদি খাওতে হয়।
পারিবারিক
পুষ্টি বইয়ের লেখক আইস উইলিয়াম
সিয়ার্স বলেছেন ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস শরীরের সংক্রামনের বিরুদ্ধে লড়াইকারী শ্বেত রক্ত কনিকা ইন্টারফেরন
এবং কোষের পৃষ্টকে আবরন করে এমন
আ্যন্টিবডির সংখ্যা বৃদ্ধি করে।এতে ক্যান্সার এর মত দীর্ঘস্থায়ী
রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া
যায়। অতএব আপনার সন্তানকে
প্রতিদিন ফল এবং শাকসবজি
খাওয়ানোর চেষ্টা করুন।
যেহেতু মায়ের দুধের বিকল্প নেই এবং মায়ের দুধে বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে সেহেতু নবজাতককে মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে।বাচ্চাদের খাবারে দই থাকলে স্বাস্থ্যের উন্নতি হয় বলে মত বিশেষজ্ঞদের।বাচ্চাদের খাবারে অবশ্যই শাক রাখবেন এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।
আরও পড়ুন:
শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর যে উপকারিতা
শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী ডিম। শিশুদের বিভিন্ন ধরনের মুখরোচক খাবার না দিয়ে ডিম বা ডিমের তৈরি খাবার দিতে পারেন এতে স্বাস্থ্য ও ভালো হবে অন্যদিকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।এছাড়া বাইরের খাবার না খাইয়ে ঘরে তৈরী খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন।এতে বাচ্চাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি কম থাকে।
শীতকালে শিশুর ত্বকের যত্ন-
শিশুদের
ত্বক বড়দের তুলনায় অধিক পাতলা থাকে
তাই শিশুদের ত্বকের যত্ন নেওয়ায় সাবধানতা
অবলম্বন করা উচিত।
শিশুদের সরিষার তেল দেয়া থেকে বিরত থাকুন। এতে শরীরে ময়লা আটকে যায়। এ থেকে এলার্জি বা র্যাস হতে পারে। শীতকালে বাচ্চাদের শরীরে সরিষার তেলের বদলে অলিভ অয়েল দিতে পারেন।
তাছাড়া
হাত-পা ফেটে গেলে
বেবি লোশন বা ক্রিম
ব্যবহার করতে পারেন।তবে সেটা
আগে দেখে নিতে হবে
বাচ্চার ত্বকের সাথে খাপ খাওয়াই
কিনা।
শীতকালে
শিশুদের পোশাক -
শীতকালে শিশুদের সবসময় গরম জামাকাপড় পরানো উচিত।বিশেষ করে বুক ও হাত পা যেন ঢাকা থাকে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।বাচ্চাদের পোশাকে ময়লা থাকলে দেহে নানা রোগের সংক্রমণ হতে পারে। তাই বাচ্চাদের পোশাক সর্বদা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
শীতকালে
শিশুদের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা -
আমরা
অনেকেই ভাবি শীতকাল শিশুদের
প্রতিদিন গোসল করালে তারা
অসুস্থ হয়ে পড়ে এটা একদম আমাদের
ভুল ধারনা।
শীতকালে শিশুদের প্রতিদিন গোসল করানো উচিত।এর ফলে বাচ্চারা সুস্থ থাকে। তবে একদিন পর পর গোসল করালে অবশ্যই পানিতে কাপড় ভিজিয়ে মুছিয়ে দেয়া উচিত।এতে কোন ময়লা শরীরে জমে থাকবে না।অন্যদিকে শিশুদের খোলা জায়গায় বা অনেকের মাঝে বা ধুলোবালিতে খেলতে দেয়া যাবেনা।
টিকা-
শিশুদের
জন্মের পর থেকে যে
সকল টিকা দেয়া হয়
সেগুলো থেকে এড়িয়ে যাবেন
না। যথাযথ সময়ে টিকা দেবেন।কেননা
এগুলো অনেক রোগ প্রতিরোধ
ক্ষমতা রাখে।
জেনে নিন-বাচ্চাকে কখন কিসের টিকা দিতে হয়
অসুস্থ হলে করনীয় -
বাচ্চারা অসুস্থ হলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে গিয়ে পরামর্শ নিতে হবে। তবে এন্টিবায়োটিক থেকে বাচ্চাদের দূরে রাখার চেষ্টা করবেন।-কেননা এখন বাচ্চা হোক বা প্রাপ্তবয়স্ক অসুস্থ হলেই এন্টিবায়োটিক ওষুধ দেয়া হয় আর এই এন্টিবায়োটিক দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করে ঠিকই কিন্তু সাথে সাথে শরীরের উপকারী ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলে।সেইজন্য এন্টিবায়োটিক ছাড়া যদি বাচ্চা সুস্থ হয়ে যায় তবে এটা এড়িয়ে যাওয়া উচিত হবে।
বাচ্চাকে অসুস্থ রোগীদের থেকে সাবধানে রাখা এমনকি বাচ্চার মা অসুস্থ হলে সাবধানতা অবলম্বন করা।বাচ্চাদের নিয়মিত হাত মুখ ধোয়ানোর অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।যেমন খাবার আগে, বাইরে থেকে ঘরে আসলে,বিভিন্ন পোষা প্রাণী ধরার পর।হাচি ও কাশিতে টিস্যু বা রোমাল ব্যবহার করা।
পরিবারের কোন সদস্য যদি ধুমপান করে তাহলে ছেড়ে দিন কেননা এতে ৭০০০ ক্ষতিকর রাসায়নিক রয়েছে। যার মাঝে কিছু কিছু শরীরে বিভিন্ন কোষ নষ্ট করে দিতে সক্ষম।তাছাড়া শুধু ধুমপানের ধোয়া না বাচ্চাদেরকে সকল ধরনের ধোঁয়া হতে দূরে রাখাই উত্তম।