জ্বর ঠোসা ( Cold Sore) কি ? কেন হয় এবং সারানোর উপায়


 জ্বর ঠোসা বা Cold Sore কি ? কি কারণে আপনার জ্বর ঠোসা হতে পারে ? কিভাবে ঘরোয়া পদ্ধতিতে দ্রুত আপনার জ্বর ঠোসা প্রতিকার করবেন ?


জ্বর ঠোসা ( Cold Sore) কি  কেন হয় এবং সারানোর উপায়
জ্বর ঠোসা ( Cold Sore) কি  কেন হয় এবং সারানোর উপায়



জ্বর ঠোসা বা Cold Sore আমাদের সবার কাছেই খুব কমন একটি সমস্যা। একে অনেক সময় আমরা জ্বরঠুঁটো বলে থাকি। এটি বছরের যে কোন সময় হতে পারে। তবে শীত কালে সমস্যা বেশি হতে দেখা যায়। সাধারণত জ্বর হওয়ার পরে জ্বরঠুোঁস বেশি হয়ে থাকে বলে আমরা ভাবি এটি জ্বরের কারণে হয়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞ দের মতে, কোল্ড সোর ছোঁয়াচে বা সংক্রমিত একটি রোগ। এটি একটি ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে হয়। সাধারণত এটি হলে অনেক ব্যথা হয় এবং মুখের সৌন্দর্যকে নষ্ট করে দেয়। জ্বরঠুঁটো আপনা আপনিই সেরে যায়, তবে সম্পূর্ণরূপে ভালো হতে একটু সময় লাগে। আমাদের মধ্যে এমন অনেক মানুষই আছেন যারা জ্বর ঠোসা হওয়ার কারণ, দ্রত প্রতিকার প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে জানেন না জন্য ঘন ঘন এই সমস্যায় ভুগতে থাকেন।

এখন চলুন,জ্বর ঠোসা বা Cold Sore সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক,

 জ্বর ঠোসা বা Cold Sore কি ?

জ্বর ঠোসা বা Cold Sore হল আয়তনে ক্ষুদ্র এবং তরলে ভরা এক ধরনের পদার্থ। যা নাকের নিচে অথবা ঠোঁটের আশেপাশে একগুচ্ছ ফুসকুড়ির মত হয়ে থাকে এবং এই ধরণের ফোসকা ফেটে যাওয়ার পরে একটি ক্রপ ফর্মের মত তৈরি করে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে ফিভার ব্লিস্টার (Fiver Blister) বলা হয়ে থাকে।

 আরও পড়ুন :ত্বকের যত্ন কিভাবে নিবেন? ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর উপায় কি?

কি কারণে আপনার জ্বর ঠোসা হতে পারে ?


                          কি কারণে আপনার জ্বর ঠোসা হতে পারে



আমাদের মধ্যে অনেকেই জ্বরের কারণে জ্বর ঠোসা হয়েছে এমনটা মনে বলে করে থাকি। কিন্তু জ্বরঠুঁটো বা ফিভার ব্লিস্টার হওয়ার প্রধান কারণ হল HSV-1 (Herpes simplex virus-1) এর ইনফেকশন। শরীরে এই ইনফেকশন সৃষ্টি হওয়ার কারণেই মুলত আমাদের জ্বর আসে। তবে কখনও কখনও অন্য কোন ইনফেকশনের কারণে যদি আপনার শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে যায় তখন আপনার জ্বর হতে পারে সেখান থেকেও কোল্ড সোর হতে পারে। কিন্তু সাধারণত জ্বরের কারণে ফিভার ব্লিস্টার হয় না।

 ঘরোয়া পদ্ধতিতে কিভাবে  জ্বর ঠোসা প্রতিকার করবেন ?

জ্বর ঠোসা আপনা আপনি সেরে যায়। তবে দ্রুত এর থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কিছু সহজ ঘরোয়া উপায় রয়েছে। উপায় গুলো সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো

নারিকেল তেল :

জ্বরঠুঁটো তাড়াতাড়ি সারাতে নরিকেল তেল অনেক ভাল কাজ দেয়। নারিকেল তেল হল একটি অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এজেন্ট। এর ভিতরে ট্রাইগ্লিসারাইডস রয়েছে, যেমন লৌরিক এসিড এবং ওলিক এসিড, যা HSV-1 কে মারতে পারে এবং আপনার ঠান্ডা কালশিটে দ্রুত অপসারণ করতে পারে। নারিকেল তেল ব্যবহার করার জন্য আপনাকে নারিকেল তেল এবং তার সাথে সুতির কাপড় নিতে হবে। এই সুতির কাপড় নারিকেল তেলে ভিজিয়ে নিতে হবে। এরপর ক্ষতের জায়গায় হালকা চেপে চেপে লাগাতে হবে। রকম করে প্রত্যেক ঘণ্টায় এটি ব্যবহার করুন দেখবেন উপকার পাচ্ছেন।

মধু :

কোল্ড সোর বা ঠান্ডা কালশিটে দূর করতে মধু অনেক কার্যকরী। কারণ মধু অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এজেন্ট সমৃদ্ধ এটি আপনার মুখের ভেতরের অংশকে আর্দ্র রাখতে সাহায্য করবে এবং নতুন কোষ গঠনে সহায়তা করবে। এর পাশাপাশি জ্বরঠুোঁসের ব্যথা ফুলে থাকা কমাতে মধু বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। মধু ব্যবহার করতে হলে আপনাকে আধা চামচ মধু নিতে হবে। এরপর আঙ্গুলের সাহায্যে মধু ক্ষতস্থানে ১০ থেকে ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখতে হবে এভাবে দিনে দুবার ব্যবহার করুন।

এছাড়াও আপনি মধুর সঙ্গে আমলকী কিংবা হলুদের গুঁড়ো একসঙ্গে মিশিয়ে জ্বর ঠোসার ওপর লাগাতে পারেন। উপকার নিজেই বুঝতে পারবেন।

রসুন :

রসুনের অনে গুণের কথা আমরা শুনে থাকি। রসুনের রস Herpes simplex virus-1 কে ধ্বংস করতে সহায়তা করে। ক্ষতস্থানে রসুন ব্যবহারের জন্য একটি ছোট রসুনের কোয়া নিন। এরপর রসুনের কোয়া বেটে সরাসরি আপনার ক্ষততে লাগিয়ে রাখুন। এভাবে দিনে অন্তত দুই থেকে তিন বার লাগাবেন আরও ভালো ফল পাওয়ার জন্য প্রতিদিন সকালে উঠে খালি পেটে কাঁচা রসুন খেতে পারেন।

আইস কিউব :

জ্বর ঠোসায় আইস কিউব ব্যবহারের ফলে এটি আপনার ঠোঁটের ব্যথা ফোলা ভাবকে দূর করতে সাহায্য করে এবং এর পাশাপাশি দ্রুত ঘা থেকে মুক্তি পেতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। আপনি একটি আইস কিউব নিয়ে সেটিকে কিছুক্ষণ ঘাঁয়ের ফোলা অংশের উপর বা ক্ষতস্থানের উপর ধরে রাখুন। এভাবে দিনে কয়েকবার ব্যবহার করে দেখুন আপনার ব্যথা ফোলা ভাব অনেকটাই কমে গেছে।

দুধ :

ফিভার ব্লিস্টার দ্রুত অপসারণ করার জন্য দুধ ব্যবহার করতে পারেন। কারণ দুধের ভিতরে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি ভাইরাল এজেন্ট যা আপনার ভাইরাস ইনফেকশন দূর করতে সহায়তা করবে। দুধ ঘাঁয়ের উপর লাগানোর জন্য আপনাকে কটন বার এবং একটি কাপে সামান্য পরিমাণ দুধ নিতে হবে। এরপর কটন বারটি দুধে ভিজিয়ে নিয়ে ঘাঁয়ের ওপরে লাগিয়ে রেখে কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। এভাবে ঘন্টা দুই পরপর ব্যবহার করতে পারলে দ্রুতই আপনার জ্বরঠুঁটো সেরে যাবে।

অ্যালোভেরা:

কোল্ড সোর দূর করতে অ্যলোভেরার রস অনেক উপকারী। জ্বরঠুঁসের ওপর আপনি অল্প পরিমাণ অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী পাতার রস লাগিয়ে রাখতে পারেন। তাড়াতাড়ি অ্যালোভেরার মধ্যে ব্যথা ফোলার সমস্যা দূর করার শক্তি রয়েছে তাই ঘাঁয়ের স্থানে লাগালে আপনি তাড়াতাড়ি কার্যকরী ফল পেতে পারেন।

অ্যাপেল সিডার ভিনেগার :

ফিভার ব্লিস্টার দ্রুত অপসারণের জন্য অ্যাপেল সিডার ভিনেগার ইউজ করতে পারেন। এটি ব্যবহারের জন্য আপনাকে একটি সুতির কাপড়ে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার ভিজিয়ে নিতে হবে। এরপর ভেজা অংশ ক্ষতের স্থানের ওপর লাগাবেন। এতে করে আপনি দ্রুতই এই রোগ থেকে সেরে উঠতে পারবেন।

তুলসি পাতা:

আদি কাল থেকেই তুলসি পাতার বহু গুণের কথা শুনে আসছি। তুলসি পাতা ব্যবহারের ফলে আপনার জ্বর ঠোসা অনেক দ্রুত সেরে উঠবে। তাই জ্বরঠুঁটো হলে সকালে উঠে সতেজ তুলসি পাতা চিবিয়ে খাবেন। এর ফলে আপনি অতি শীঘ্রই উপকার লাভ করতে পারবেন।

ত্রিফলা:

কোল্ড সোর দূর করতে ত্রিফলা অনেক ভাল কাজ দেয়। ত্রিফলা খাওয়ার জন্য আপনাকে অর্ধেক চা চামচ ত্রিফলা নিতে হবে। এরপর সেগুলো এক কাপ পানিতে মিশিয়ে নিতে হবে। তারপর মিশ্রণ মুখের ভিতর নিয়ে ভাল করে কুলকুচি করতে হবে। মিশ্রণটি যাতে মুখের ভিতর থেকে মিনিট পর্যন্ত থাকে সেরকম চেষ্টা করবেন। এরপর মুখ থেকে পানি ফেলে দেবেন। এমনটা করার ফলে আপনার জ্বরঠুঁটো তাড়াতাড়ি সেরে যাবে।

 পড়ুন :

জেনে নিন ,এলার্জির(Allergies) হওয়ার কারণ, লক্ষণ, প্রতিকার সম্পর্কে

ত্বকের যত্ন কিভাবে নিবেন? ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর উপায় কি?

পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে,

ফিভার ব্লিস্টার বা জ্বর ঠোসার ব্যথাটা যে কতটা যন্ত্রণাদায়ক সেটা আমরা সবাই কম বেশি জানি। বাস্তবে সাধারণত এটি তেমন কোন চিকিৎসা ছাড়াই নিজে থেকেই সেরে যায়। তবে এই জ্বরঠুঁটো ভাইরাস বা সংক্রমণ জনিত রোগ হওয়ার কারণে কখনই ঘাঁয়ের জায়গায় নখ দিয়ে স্ক্রাচ বা খুচানো যাবে না। কারণ খুচালে ভাইরাস আপনার হাতের মাধ্যমে মুখ চোখ সহ শরীরের অন্যান্য অঙ্গে ছড়িয়ে  পড়তে পারে। সে জন্য জ্বর ঠোসা হলে আপনাকে একটু সাবধানতা অবলম্বন করে চলতে হবে তাই জ্বর ঠোসা থেকে দ্রুত মুক্তি লাভ করতে হলে আপনাকে উপরিউক্ত বিষয় গুলোর প্রতি লক্ষ রাখতে হবে এবং সে গুলো ঠিক মত পালন করতে হবে।

 

Post a Comment

Previous Next