এখন চলুন ঋতুস্রাবের কতদিন পর সহবাস করলে সন্তান গর্ভে আসে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই,
ঋতুস্রাবের কতদিন পর সহবাস করলে সন্তান গর্ভে আসতে পারে ?
ঋতুস্রাবের
পর যথাযথ সময়ে সহবাস করলে
সন্তান গর্ভে আসতে পারে। আর
এই সঠিক সময় বোঝার
কয়েকটি পদ্ধতি আছে। পদ্ধতি গুলো
হলো –
* সাদা
স্রাব পর্যবেক্ষণ
* শরীরের
তাপমাত্রা নির্ণয়
* স্ট্যান্ডার্ড
ডে
* ক্যালেন্ডারে
দিন গণণা
* অন্যান্য
পদ্ধতি
১. সাদা স্রাব পর্যবেক্ষণের
মাধ্যমে গর্ভধারণের সময় নির্ণয় করা
:
পড়ুন :
সাদা স্রাব কী? কী কারণে হয় ? ঘরোয়া পদ্ধতিতে প্রতিরোধ করার উপায়
জরায়ুতে সিস্ট কেন হয় ? জরায়ুতে সিস্ট হলে কি করণীয় ?
২.শরীরের তাপমাত্রা নির্ণয়ের মাধ্যমে গর্ভধারণের সময় জানা
* ডিম্বস্ফোটনের
জন্য তাপমাত্রা বাড়ছে কিনা তা বোঝার
সহজ নিয়ম হল, ৬
দিন একটানা তাপমাত্রা কম থাকার পরে
৩ দিন একটানা বেশি
তাপমাত্রা থাকতে হবে অর্থাৎ একদিন
তাপমাত্রা এসে সেটা আবার
চলে গেলে হবে না।
একটানা বেশি তাপমাত্রা থাকা
অবস্থায় ৩য় দিন পর্যন্ত
ফার্টাইল উইন্ডো (Fertile Window) বা গর্ভধারণের সবচেয়ে
সম্ভাবনা ময় সময় থাকে।
এই সময়টিতে সহবাস করলে সন্তান গর্ভে
আসার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে।
৩. স্ট্যান্ডার্ড ডে পদ্ধতি অবলম্বন করে গর্ভধারণের সময় নির্ণয় করা :
* এই
পদ্ধতিটি অন্য পদ্ধতির তুলনায়
অনেকটা সহজ। আপনার পিরিয়ড
যদি নিয়মিত হয় তাহলে এই
পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন। তার
মানে হল আপনার পিরিয়ড
সাইকেল যদি ২৬ থেকে
৩২ দিনের মধ্যে থাকে তাহলে এই
পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারবেন।
* এই
পদ্ধতি অনুযায়ী, ঋতুস্রাব
শুরু হওয়ার পর ৮ নাম্বার
দিন থেকে ১৯ নাম্বার
দিন পর্যন্ত হল গর্ভধারণের সবচেয়ে
সম্ভাবনা সময়। অর্থাৎ আপনার
যদি ১ তারিখ থেকে
মাসিক শুরু হয় তাহলে
৮ তারিখ থেকে ১৯ তারিখ
পর্যন্ত সময়টাতে আপনার কনসিভ হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকবে। এ
জন্য এই সময়টাতে যৌন
সঙ্গম চালিয়ে যেতে হবে।
আরও পড়ুন :
অনিয়মিত ঋতুস্রাবের কারণে শরীরে যে সব সমস্যা দেখা দিতে পারে ?
মেয়েদের অতিরিক্ত সাদা স্রাব( Leucorrhoea) এর কারণ এবং করণীয় কি ?
পিরিয়ড সাইকেল হিসাব গণণা করার নিয়ম :
গর্ভধারণের
জন্য আপনার পিরিয়ড সাইকেলের হিসাব রাখা অত্যন্ত জরুরি।
কিন্তু অধিকাংশ নারীরাই ঋতুস্রাব চক্রের দিন গণণায় ভুল
করে থাকেন। তাই চলুন পিরিয়ড
সাইকেল হিসাব গণণার নিয়ম জেনে নেই
–
প্রথম
যেদিন মাসিক শুরু হয় সেই
তারিখটা ক্যালেন্ডারের গায়ে দাগ দিয়ে
রাখবেন। এরপর আবার যেদিন
শুরু হবে সে তারিখটা
দাগ দিতে হবে। এই
দুটো তারিখের মধ্যে যত পার্থক্য সেটাই
আপনার মাসিকের সাইকেলের দৈর্ঘ্য। উদাহরণ স্বরূপ ধরে নিন, আপনার
পিরিয়ড ১ তারিখে শুরু
হল, তারপর আবার সেই মাসেরই
২৯ তারিখে পিরিয়ড হল। তাহলে ১
তারিখ থেকে সাইকেল শুরু
হয়ে ২৮ তারিখে শেষ
হয়েছে। আবার ২৯ তারিখ
থেকে নতুন শুরু হল।
তাহলে আপনার পিরিয়ড সাইকেল ছিল ২৮ দিনের।
৪. ক্যালেন্ডারের তারিখ হিসাব রেখে গর্ভধারণের সময়
নির্ণয় করা :
* এই
পদ্ধতিটি একটু জটিল তবে
অনেক ভাল কাজ করে।
এখানে আপনাকে অন্তত ৬ মাস ধরে
মাসিক সাইকেলের হিসাব রাখতে হবে। এতে করে
আপনি ছয়টা থেকে সাতটা
সাইকেলের দৈর্ঘ্য পেয়ে যাবেন। সবগুলোর
দৈর্ঘ্য একই নাও হতে
পারে। কোনটার ক্ষেত্রে ৩৩ দিন আসতে
পারে আবার কোনটার ক্ষেত্রে
২৬ দিনও আসতে পারে।
যখন আপনি ৬টা দৈর্ঘ্য
আপনি পেয়ে যাবেন তখন
তার মধ্য থেকে সবচেয়ে
লম্বা ও সবচেয়ে ছোট
সাইকেল দুটো নিবেন।
* এবার
এই সবচেয়ে ছোট সাইকেল থেকে
১৮ বিয়োগ দিলে যে সংখ্যাটি
আপনি পাবেন সেই দিন থেকে
আপনার ফার্টাইল উইন্ডো শুরু। আর সবচেয়ে লম্বা
সাইকেল থেকে ১১ বিয়োগ
দিলে যে সংখ্যাটি পাবেন
সেই দিন হল আপনার
ফার্টাইল উইন্ডো এর শেষ দিন।
* একটা
উদাহরণের মাধ্যমে বুঝে যাক ধরুন,
আপনার সবচেয়ে ছোট সাইকেল হল
২৬ দিন। এখান থেকে
১৮ দিন বিয়োগ দিলে
হল ৮ অর্থাৎ আপনার
মাসিক সাইকেলের ৮ম দিন থেকে
ফার্টাইল উইন্ডো শুরু হল। এরপর
ধরুন, আপনার সবচেয়ে লম্বা সাইকেল হল ৩৩ দিনের।
এখান থেকে ১১ বিয়োগ
দিলে হয় ২২ অর্থাৎ
এই ২২তম দিন হল
আপনার পিরিয়ড সাইকেলের শেষ দিন।
* তাহলে
মাসিক শুরু হওয়ার ৮
নম্বর দিন থেকে ২২
নম্বর দিন পর্যন্ত হল
আপনার ফার্টাইল উইন্ডো। এর যে কোন
একদিন আপনার ওভারি বা ডিম্বাশয় থেকে
ডিম্বাণু বের হওয়ার সম্ভাবনা
আছে। তাই এই সময়টাতে
যদি আপনি সহবাস করেন
তাহলে শুক্রাণু আগে আগে গিয়ে
ডিম্বাণুর জন্য অপেক্ষা করতে
পারবে। সুতরাং এই সময়টা হল
আপনার গর্ভধারণের সবচেয়ে সম্ভাবনা ময় সময়।
৫. অন্যান্য পদ্ধতির মাধ্যমে গর্ভধারণের সময় জানা :
গর্ভবতী
হওয়ার সময় জানার আরও
কিছু পদ্ধতি আছে। সে গুলো
হল –
* বাজারে Ovulation Test Kit পাওয়া যায় যেগুলো দেখতে কিছুটা প্রেগন্যান্সি টেস্টের মতো। এটি আপনার প্রসাবের হরমোন লেবেল মেপে বলে দিবে কখন ডিম্বাণু বের হয়ে আসতে পারে। গর্ভবতী হওয়ার সময় জানার জন্য এগুলোও ব্যবহার করতে পারেন। তবে এর দাম তুলনামূলক বেশি।
* আপনার
মোবাইল ফোনে কিছু অ্যাপ
ডাউনলোড করে নিতে পারেন।
যেমন: Flo, Clue, Glow ইত্যাদি। এই অ্যাপ এ
ঋতুস্রাবের তারিখ বসালে তারা ফার্টাইল উইন্ডো
হিসাব করে দেয়। তবে
সাধারণত এসব অ্যাপ নির্ভরযোগ্য
হয় না। এটি ব্যবহার
করলে শুধুমাত্র আপনার পিরিয়ড সাইকেলের দৈর্ঘ্য সম্পর্কে একটা ধারণা পেতে
পারেন।
* এছাড়াও
ডিম্বাণু বের হওয়ার পরে
আপনার স্তনে, তলপেটে ব্যথা হতে পারে, পেট
ফাঁপা ফাঁপা ভাব লাগতে পারে।
কিন্তু এই লক্ষণগুলো ব্যবহার
করে ফার্টাইল উইন্ডো করা ও সাধারণত
নির্ভরযোগ্য হয় না।
অবশেষে আমরা বলতে পারি যে,
গর্ভে সন্তান ধারণ করা প্রতিটি নারীর কাছে একটি অতি মূল্যবানকর অনুভূতি। আর ঋতুস্রাবের পর উপরিউক্ত নির্দিষ্ট সময় গুলোতে সহবাস করলে আপনার কনসিভ করার পসিবিলিটি বেড়ে যেতে পারে। তবে গর্ভে সন্তান আসার সম্ভাবনা যে শুধুমাত্র এই একটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে এমনটি কিন্তু নয় অনেক গুলো বিষয়ের সাথেই গর্ভবতী হওয়ার বিষয় সম্পর্কিত। গর্ভবতী হওয়ার জন্য যদি আপনি চিকিৎসক বিশেষজ্ঞদের নির্দেশনা অনুযায়ী উপরিউক্ত পদ্ধতি গুলো ঠিক মত অনুসরণ করে অন্তত একদিন অন্তর লাগাতার সঙ্গম করতে পারেন তাহলে আপনার সন্তান ধারণ করতে খুব বেশি হলে ১ বছর সময় লাগতে পারে। আর যদি এই ১ বছরে ফল না পান তাহলে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।