গর্ভপাত বা Miscarriage এড়াতে যে সব সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত? বিস্তারিত
গর্ভপাত
বা Miscarriage এড়াতে কোন ধরনের সতর্কতা
অবলম্বন করা জরুরি ? এ সম্পর্কে জানতে
হলে বিস্তারিত পড়ুন –
এখন চলুন, প্রেগন্যান্সির সময় Miscarriage সম্পর্কিত সতর্কতা অবলম্বন করার উপায় গুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক,
গর্ভপাত(Miscarriage)এড়াতে কোন ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি ?
গর্ভাবস্থার
সময় গর্ভপাত বা Miscarriage এড়াতে যে ধরনের সতর্কতা
অবলম্বন করা দরকার সে
সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা
করা হলো –
ভ্যাকসিন গ্রহণ করা :
গর্ভ
ধারণ করার আগে কোন
কোন ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে এবং
কোন ভ্যাকসিন দেয়া হয় নি
সে সম্পর্কে আপনার পিতা-মাতার কাছ
থেকে জেনে নিন। এরপর
অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে কোন কোন
টিকা নেয়া প্রয়োজন সে
সম্পর্কে জেনে নিন এবং
সন্তান ধারণের পূর্বেই ভ্যাকসিন গুলো আপনাকে নিয়ে
ফেলতে হবে। এতে করে
আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
বৃদ্ধি পাবে এবং গর্ভপাতের
ঝুঁকি কমে যাবে।
গর্ভাবস্থার
আগে স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই এসটিডি বা Sexually Transmitted
Diseases Test করে নিতে হবে। এতে
করে আপনাদের মধ্যে কেউ যৌন রোগে
আক্রান্ত আছেন কিনা সে
সম্পর্কে জানা যাবে। এর
ফলে সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণ করা যাবে। মিসক্যারেজ
এড়ানোর জন্য এই টেস্ট
করা অত্যন্ত জরুরী।
ক্রোনিক
ডিজিজ নিয়ন্ত্রণে রাখা :
আপনি
যদি আগে থেকে কোন
প্রকার ক্রোনিক ডিজিজ যেমনঃ থ্যালাসেমিয়া, মৃগি রোগ, থাইরয়েড
প্রভৃতিতে আক্রান্ত থাকেন তাহলে সন্তান ধারণের পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এই রোগ
গুলো নিয়ন্ত্রণে রাখা দরকার। তা
না হলে পরবর্তীতে এই
সব রোগের কারণে আপনার গর্ভপাতের প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে।
আরও পড়ুন:
গর্ভাবস্থায় হাত পা ফুলে গেলে বা পানি জমলে কি করবেন ?
গর্ভাবস্থায় জ্বালাপোড়া দূর করার উপায়
ফলিক
এসিড গ্রহণ করা :
গর্ভধারনের
পরিকল্পনা শুরু করার এক
থেকে দুই সপ্তাহ আগে
থেকে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে প্রতিদিন প্রায়
৬০০ মিলিগ্রাম ফলিক এসিড গ্রহন
করতে পারেন। এর ফলে আপনার
গর্ভের সন্তানের জন্মগত ত্রুটি সংক্রান্ত ঝুঁকি কমে যাবে।
হালকা
ব্যায়াম বা শরীরচর্চা করা
:
গর্ভাবস্থায়
থাকা কালীন কোন ভাবেই ভারী
এক্সারসাইজ করা যাবে না।
ভারী ব্যায়াম করার ফলে আপনার
শরীর ক্লান্ত হয়ে যেতে পারে
এবং পেটের ওপর চাপ পড়তে
পারে। এর ফলে ভ্রুনের
দেহে রক্ত সঞ্চালনে বাধা
পেতে পারে। তবে প্রতিদিন হালকা
শরীরচর্চা করা স্বাস্থ্যের পক্ষে
ভালো এটি আপনার গর্ভকালীন
অবসাদ দূর করে আপনাকে
প্রফুল্ল রাখতে এবং দেহে রক্ত
সঞ্চালন স্বাভাবিক থাকতে সহায়তা করে।
ক্যাফেইন জাতীয় দ্রব্য কম খাওয়া :
অন্তঃসত্ত্বা
থাকাকালীন সময়ে নিয়মিত চেক-আপ ও টেস্ট
করা অত্যন্ত জরুরী। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ
ছাড়া ঘন ঘন এক্স
রে বা Ultra sonogram করা থেকে বিরত
থাকতে হবে। কারণ Ultra sonogram থেকে নির্গত
ক্ষতিকর রশ্মি আপনার ভ্রুনের অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি
অনেকাংশেই বাড়িয়ে দিতে পারে।
মানসিক
চাপ দূর করা :
অতিরিক্ত
টেনশন বা মানসিক চাপ
গর্ভপাতের অন্যতম কারণ গুলোর মধ্যে
একটি। গর্ভাবস্থায় চলাকালীন সময়ে আপনি যদি
টেনশন করেন তাহলে এই
দুশ্চিন্তার প্রভাব আপনার গর্ভে থাকা সন্তানের উপরেও
পড়তে পারে। এর ফলে আপনার
অকাল গর্ভপাতের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
মানসিক চাপ দূর করতে
হলে আপনাকে পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম
নিতে হবে এবং প্রয়োজনে
চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন। মিসক্যারেজ
ঠেকাতে হলে গর্ভাবস্থার সময়
অবশ্যই আপনাকে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে
রাখতে হবে।
বেশি
করে পানি পান করা
:
প্রেগন্যান্সিতে
ভ্রূণের স্বাস্থ্য রক্ষায় পানির কোন বিকল্প নেই।
গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন আপনার শরীরে পানির পরিমাণ কমে গেলে গর্ভস্থ
শিশু পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পায় না।
এতে করে শিশু যখন
ভূমিষ্ঠ হয় তখন তার
হাত-পা শুঁকিয়ে যেতে
পারে। তাই গর্ভপাতের ঝুঁকি
কমাতে হলে আপনাকে প্রতিদিন
কমপক্ষে ৩ লিটার পানি
পান করতে হবে।গর্ভাবস্থায় মায়েরা যে সব খাবার খেলে সন্তান মেধাবী ও বুদ্ধিমান হতে গুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে
ফাইবার
বা আঁশজাতীয় খাবার খাওয়া :
গর্ভাবস্থা
থাকাকালীন খাদ্য তালিকায় সুষম খাবার গুলোর
মধ্যে ফাইবার বা আঁশ জাতীয়
খাবার অন্যতম। কারণ এসব খাবার
আপনার হজমশক্তি বৃদ্ধি করতে এবং প্রয়োজনীয়
ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করতে সহায়তা
করবে। এতে করে আপনার
গর্ভস্থ শিশুর হজম ও পুষ্টির
চাহিদাও পূরণ হবে। অকাল
গর্ভপাত প্রতিরোধের জন্য প্রেগন্যান্সির সময়ে
আঁশ জাতীয় খাবার যেমনঃ ডাঁটা, বাঁধাকপি, ফুলকপি, ওলকপি, শিম, পটোল, কচু
প্রভৃতি বেশি করে খাওয়ার
চেষ্টা করতে হবে।
গর্ভকালীন
সময়ে মাছ আপনার ও
গর্ভে থাকা সন্তানের পুষ্টির
চাহিদা মেটাতে সাহায্য করে। কারণ মাছের
ভিতরে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড
রয়েছে। যা আপনার গর্ভের
সন্তানের মেধা বিকাশের জন্যে
খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই মিসক্যারেজ এড়াতে
হলে আপনাকে গর্ভাবস্থার সময় আপনাকে বেশি
করে মাছ খেতে হবে।
কোল্ড ড্রিঙ্কস ত্যাগ করা :
গর্ভবস্থায়
থাকাকালীন সময়ে আপনাকে কোল্ড
ড্রিঙ্কস খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। কারণ
কোল্ড ড্রিঙ্কসে অ্যালকোহলের সাথে উচ্চ মাত্রায়
চিনি মিশ্রিত থাকে। এগুলো বেশি খেলে আপনার
ওজন বেড়ে যেতে পারে।
এছাড়াও আপনার যদি আগে থেকে
ডায়াবেটিসের সমস্যা থাকে তাহলে তা
নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
এর ফলে আপনার গর্ভের
সন্তানের ক্ষতি হওয়ার সাথে গর্ভপাত হওয়ার
ঝুঁকি মারাত্মক ভাবে বেড়ে যেতে
পারে।
ধূমপায়ীদের
কাছ থেকে দূরে থাকা
:
ধূমপান
থেকে সৃষ্ট ধোঁয়া আপনার এবং গর্ভের সন্তান
দুজনের স্বাস্থ্যের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকর। ধূমপায়ী ব্যক্তির কাছে থাকলে ঐ
ধোঁয়া নিঃশ্বাসের মাধ্যমে আপনার শরীরে মধ্যে প্রবেশ করে আপনার ভ্রূণের
অকাল মৃত্যু ঘটাতে পারে। এজন্য গর্ভপাত ঠেকাতে হলে সব সময়
ধূমপায়ীদের কাছ থেকে দূরে
থাকতে হবে।
জেনে নিন- সন্তান প্রসবের কতদিন পর সহবাস করতে পারবেন ?
অবশেষে
আমরা বলতে পারি যে,
প্রতিটি গর্ভবতী মায়ের কাছেই তার গর্ভের সন্তান এক অমূল্য সম্পদ। আর এই সময়ে সন্তান সুস্থ ভাবে জন্ম তার একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত। এ জন্য প্রেগন্যান্সি চলাকালীন সময়ে আপনার এবং গর্ভস্থ সন্তানের সুস্থ থাকার জন্য উপরিউক্ত সাবধানতা গুলোর প্রতি আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে এবং অবশ্যই সেগুলো নিয়মানুযায়ী পালন করতে হবে তা না হলে আপনি অকাল গর্ভপাতের সম্মুখীন হতে পারেন।
সুস্থভাবে
সন্তান জন্ম দিতে হলে
আপনাকে অবশ্যই গর্ভকালীন পরিচর্যা সম্পর্কে জানতে হবে আর সে
জন্য একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের
গাইডলাইন নিতে হবে। এতে
করে আপনার গর্ভাবস্থা সংক্রান্ত জটিলতা গুলো দূর হবে।
তাই আপনি যদি মিসক্যারেজ
বা গর্ভপাত এড়াতে চান তাহলে আপনাকে
অবশ্যই উপরিউক্ত সর্তকতা গুলো সঠিক সময়ে
অবলম্বন করতে হবে এবং
অবশ্যই নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।