যে সব খাবার গর্ভের সন্তান নষ্টের কারণ হতে পারে?

আজকের আর্টিকেলে আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে যেসব খাবার গর্ভের সন্তান নষ্টের কারণ হতে পারে সেই সকল খাবার নিয়ে। আপনারা যদি আমাদের এই পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়েন তবে অবশ্যই বেশ গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য পাবেন। যেগুলো আপনাদের উপকারে আসতে পারে। চলুন জেনে নিই যেসব খাবার গর্ভের সন্তান নষ্টের কারণ হতে পারে সেই সকল খাবার গুলো সম্পর্কে।

যে সব খাবার গর্ভের সন্তান নষ্টের কারণ হতে পারে ?
ছবি :সংগৃহিত

গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে যাওয়া প্রতিটি মায়ের কাছেই অত্যন্ত বেদনাদায়ক একটি অনুভূতি। বর্তমান সময়ে  Miscarriage বা গর্ভপাতের সমস্যায় ভুক্তভোগী নারীর সংখ্যা ক্রমাগতভাবে বেড়েই চলেছে। সাধারণত গর্ভাবস্থার সময় প্রেগন্যান্সি সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকার কারণে অধিকাংশ নারীরই গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে যায়, এমনটি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

প্রেগন্যান্সি চলাকালীন সময়ে অনাগত সন্তানের কথা ভেবে কিছু নির্দিষ্ট কিছু খাবার আছে যেগুলো আপনাকে এড়িয়ে চলতে হবে। তা না হলে পরবর্তীতে সব খাবার গ্রহণের কারণে আপনার গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

গর্ভাবস্থার সময় এড়িয়ে  চলা খাবার গুলো সম্পর্কে বেশিরভাগ গর্ভবতী মায়েরাই জানে না যার কারণে গর্ভপাতের সমস্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য প্রেগন্যান্সিতে থাকাকালীন সময়ে এড়িয়ে চলা খাবার গুলো সম্পর্কে আমাদের বিস্তারিত ধারণা থাকা খুবই জরুরি।

কোন কোন খাদ্য গ্রহণের ফলে আপনার গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে যেতে পারে?

গর্ভাবস্থার সময় যে সব খাবার খেলে আপনার গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে যেতে পারে সে সব খাবার সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো

পেঁপে

যে সব খাবার খেলে আপনার গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে যেতে পারে
ছবি :সংগৃহিত

যে সব খাবারের কারণে গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে যেতে পারে তার মধ্যে পেপে অন্যতম। প্রেগন্যান্সি চলাকালীন সময়ে কাঁচা বা পাকা যে কোন ধরনের পেঁপে খেলে আপনার গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। কারণ পেঁপে খেলে আপনার শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে। পেঁপে ল্যাটেক্সসমৃদ্ধ একটি ফল।

এটি আপনার জরায়ুর সংকোচন, রক্তপাত গর্ভপাত ঘটার কারণ হতে পারে। পেঁপে খাওয়ার কারণে ভ্রূণের বিকাশ বাঁধাগ্রস্ত হতে পারে। তাই পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি ভিটামিন থাকা সত্ত্বেও গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন সময়ে আপনার কাঁচা বা পাকা পেঁপে খাওয়া এড়িয়ে চলাই উত্তম।

 আনারস

গর্ভের সন্তান নষ্টের কারণ হতে পারে আনারস
ছবি :সংগৃহিত

প্রেগন্যান্সির প্রথম তিন মাস আনারস খাওয়া যাবে না। কারণ আনারসের ভিতরে ব্রোমেলাইন থাকে। এটি একটি এনজাইম, যা প্রোটিনকে ভেঙে ফেলে। এই আনারস খাওয়ার কারণে আপনার জরায়ুতে তীব্র সংকোচন হতে পারে পরবর্তীতে এর থেকে আপনার অকাল প্রসব বা গর্ভপাতের আশঙ্কা দেখা দিতে পারে। এজন্য প্রেগন্যান্সি চলাকালীন সময়ে আপনাকে আনারস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

অপাস্তরিত দুধ

প্রেগন্যান্সির সময়ে সব ধরণের খাবারই স্বাস্থ্যসম্মত নিয়মে খাওয়া উচিত। কারণ এসব খাবার থেকে ব্যাকটেরিয়া ছড়াতে পারে। দুধ থেকে ব্যাকটেরিয়া ছড়ানোর প্রবণতা সব থেকে বেশি থাকে এজন্য সব সময়ই দুধ ভাল করে ফুটিয়ে খাওয়া উচিত। তা না হলে অপাস্তরিত দুধ থেকে সৃষ্ট ব্যাকটেরিয়ার কারণে ভ্রূণের বিকাশ ব্যহত হতে পারে। এর ফলে আপনার গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে যেতে পারে।


অ্যালার্জিজনিত খাবার

গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন সময়ে আপনাকে অ্যালার্জিজনিত খাবার যেমনঃ চিংড়ি, কাঁকড়া অথবা Mollusc (খোলস জাতীয়) sea food খাদ্য তালিকা থেকে একেবারে বাদ দিতে হবে। কারণ এসব খাবার খেলে আপনার অ্যালার্জি হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে এবং পরবর্তী সময়ে এর প্রভাব আপনার শরীরে বেড়ে গেলে মিসক্যারেজ ঘটাতে পারে।

প্রক্রিয়াজাত মাংস

প্রেগন্যান্সিতে Processed meat বা প্রক্রিয়াজাত মাংস খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকর। এটি আপনার ক্যান্সার পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে। এর ফলে আপনার গর্ভের সন্তানের মারাত্নক ক্ষতি হতে পারে।

কাঁচা ডিম

গর্ভাবস্থায় কাঁচা কোন কিছুই আপনার শরীরের জন্য ঠিক না। আপনি যদি ডিম হাফ বয়েল বা পোচ করেও খান তাহলে এটি আপনার পেটের বাচ্চার ক্ষতি করতে পারে। এজন্য ডিম সব সময় সেদ্ধ বা ভাজি করে খেতে হবে।


চিজ

যে সব খাবারের কারণে গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে যেতে পারে তার মধ্যেএকটি হলো চিজ। চিজ খেলে আপনার শরীরে ফ্যাট জমতে পারে। আর জরায়ুতে যদি ফ্যাট জমে তাহলে শিশুর বিকাশে সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর ফলে আপনার গর্ভপাতের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।

কলা

গর্ভাবস্থায় কলা খেলেও মিসক্যারেজ হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। কলাতে চিটিনেস রয়েছে। আর এটি একটি ল্যাটেক্স জাতীয় উপাদান। এটি আপনার শরীরের তাপ বাড়ায়। আর আপনার যদি অ্যালার্জি বা ডায়াবেটিসের সমস্যা থাকে তাহলে গর্ভাবস্থায় এটি আপনার সন্তানের ক্ষতি করতে পারে। এজন্য প্রেগন্যান্সি চলাকালীন সময়ে কলা খেতে নিষেধ করে থাকেন চিকিৎসকরা।

তরমুজ

তরমুজ আমাদের শরীরেকে ঠান্ডা রাখে এবং এর সাথে শরীর থেকে সব ধরনের বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে পারে। তবে তরমুজের অনেক গুণ থাকা সত্ত্বেও গর্ভাবস্থায় আপনি যদি তরমুজ খান তাহলে এটি আপনার শরীরের সব ধরনের টক্সিন ধ্বংসের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান গুলো শরীর থেকে বের করে দিতে পারে। এর ফলে আপনার ভ্রুণের ক্ষতি হতে পারে। এর কারণে মিসক্যারেজ ঘটতে পারে।

খেজুর

খেজুর একটি পুষ্টিকর ফল হওয়া সত্ত্বেও গর্ভাবস্থায় খেজুর খেতে নিষেধ করেছেন ডাক্তাররা। এর প্রধান কারণ হল এই ফল আপনার শরীরকে উত্তপ্ত করে তুলতে পারে। এটি আপনার জরায়ুর পেশীগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে জরায়ুতে সংকোচনের ঘটাতে পারে। এর ফলে আপনার গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। তাই প্রেগন্যান্সি চলাকালীন সময়ে আপনাকে খেজুর খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

ফ্রিজ জাত বা হিমায়িত খাবার

গর্ভবতী নারীদের দীর্ঘ সময় ধরে থাকা ফ্রিজ জাত বা হিমায়িত কোনো খাবার খাওয়া একেবারে উচিত না। কারণ এসব ফ্রিজ জাত খাবারে ফরমালিন বা প্রিজারভেটিভ থাকতে পারে। জন্য ধরনের খাবার গর্ভাবস্থায় না খাওয়াই ভালো। কারণ এটি আপনার এবং গর্ভে থাকা সন্তান উভয়েরই ক্ষতি করতে পারে। প্রেগন্যান্সি চলাকালীন সময়ে আপনার সব সময় টাটকা বা তাজা ফলমূল, শাক-সবজি খাওয়া উচিত।

বার্লি

বার্লির অনেক ভাল গুণ রয়েছে। কিন্তু তার পরেও গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে বার্লি খেতে ডাক্তাররা নিষেধ করেন। কারণ প্রেগন্যান্সির শুরুতে বার্লি খেলে আপনার গর্ভপাত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।

আধোয়া শাক-সবজি

শাক-সবজি রান্না করার আগে না ধুয়ে রান্না করলে এর ভিতরে থাকা বিষাক্ত জীবাণু আপনার শরীরে প্রবেশ করে আপনার গর্ভের শিশুর ক্ষতি করতে পারে। কাঁচা সবজি যেমনঃ টমেটো, শশা, পেঁয়াজ, গাজর, কাঁচা মরিচ, লেবু প্রভৃতি খাওয়ার আগে যদি আপনি না ধুয়ে খান তাহলে এসব আধোয়া সবজির গায়ে লেগে থাকা বিষাক্ত জীবাণুর কারণে আপনার মিসক্যারেজ হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। তাই শাক-সবজি রান্না করা বা খাওয়ার আগে অবশ্যই ভালো করে ধুয়ে নিবেন।

আঙুর

যে সব খাবারের কারণে গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে যেতে পারে তার মধ্যে আঙুর অন্যতম

ছবি :সংগৃহিত

যেসব খাবারের কারণে গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে যেতে পারে তার মধ্যে আঙ্গুর অন্যতম। গর্ভাবস্থায় সবুজ ও কালো উভয় ধরনের আঙ্গুরই আপনার ও গর্ভে থাকা সন্তানের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। কারণ আঙ্গুরের ভেতরে যৌগিক রেজভেরট্রোল রয়েছে যা গর্ভবতী মায়েদের জন্য বিষাক্ত হতে পারে। গর্ভাবস্থায় কালো আঙ্গুরের চামড়া আপনার জন্য হজম করা কষ্ট আর হতে পারে। কারণ এই সময় হজম ব্যবস্থা দুর্বল থাকে। তাই গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন সময়ে আপনার আঙ্গুর খাওয়া বন্ধ রাখাই শ্রেয়।

পরিশেষে বলা যায় যে,

আমরা জানি গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে যাওয়া প্রতিটি বিবাহিত দম্পতির কাছে একটি দুঃস্বপ্নের মত। তবে সময় হতাশ না হয়ে আপনাকে পরবর্তীতে সন্তান নেয়ার সময় নিজের এবং সন্তানের প্রতি সব সময় সচেতন থাকতে হবে। আপনার এবং গর্ভে থাকা সন্তানের মঙ্গলের জন্য উপরিউক্ত খাবার গুলো খাওয়া থেকে অবশ্যই নিজেকে বিরত রাখতে হবে।

গর্ভকালীন সঠিক পরিচর্যা সম্পর্কে জানতে হলে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে তাহলে আপনার সুস্থভাবে সন্তান জন্ম দিতে কোন প্রকার অসুবিধা হবে না। তাই আপনি যদি গর্ভপাত হওয়া থেকে রক্ষা পেতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই উপরিউক্ত বিষয়গুলো বিশেষ নজরে রাখতে হবে এবং অবশ্যই সময় মতো চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। 

Post a Comment

Previous Next