জেনে নিন-কোলন ক্যান্সার হলে শরীরে কোন ধরনের লক্ষণ দেখা দিতে পারে ?

আপনার কি মলদ্বারে ব্যাথা করছে ? কোলন ক্যান্সার হয় নি তো? আপনি কি জানেন Colon Cancer কি এবং কী কারণে হয়ে থাকে ? কোলন ক্যান্সার হলে আপনার শরীরে কোন ধরনের লক্ষণ দেখা যায় ?এটি কিভাবে প্রতিরোধ করবেন ? এ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন –


                        কোলন ক্যান্সার হলে  শরীরে কোন ধরনের লক্ষণ দেখা দিতে পারে

বর্তমান বিশ্বে এখন আমাদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষ কোলন ক্যান্সারের শিকার হচ্ছেন এবং প্রতিনিয়ত এই ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর সেই সাথে মৃত্যুর হারও বেড়ে চলেছে। অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করার কারণে মূলত কোলন ক্যান্সার হয়ে থাকে। আমাদের মধ্যে এমন অনেক মানুষ রয়েছে যারা প্রাথমিক অবস্থায় কোলন ক্যান্সারের লক্ষ্মণ প্রকাশ পাওয়ার পরেও এ সম্পর্কে ঠিকমত বুঝতে পারেন না। এর ফলে কোলন ক্যান্সারের প্রভাব বৃহদান্ত্রের বাইরেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। যার ফলে বাঁচার আশঙ্কা অনেক কমে যায়। এজন্য কোলন ক্যান্সার সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা থাকা অত্যন্ত জরুরি।

এখানে,যা যা থাকছে.......

  •   Colon Cancer কি ?কোলন ক্যান্সার কাদের হয় ?
  • কী কী কারণে আপনার Colon Cancer হতে পারে ? 
  • Colon Cancer হলে শরীরে কোন ধরনের লক্ষণ দেখা দিতে পারে ? 
  • কোলন ক্যান্সার হলে কী উপায়ে প্রতিকার করবেন ?
  • কীভাবে আপনার কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করবেন ?


আসলে Colon Cancer কি ?

 কোলন ক্যান্সার সম্পর্কে জানতে হলে আমাদেরকে আগে জানতে হবে কোলন কী ? কোলন হল একটি লম্বা নলদ্বার যেটা আমাদের মলাদ্বারকে ছোট অন্ত্রের (ক্ষুদ্রান্ত্রের) সাথে সংযুক্ত করে। আর কোলন এবং মলদ্বার দুটিকে একসাথে আমরা বলি বড় অন্ত্র বা বৃহদান্ত্র। আমাদের অস্বাভাবিক ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি যদি এই কোলনে অনুষ্ঠিত হয় তখন ঐ অবস্থাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় আমরা বলে থাকি কোলন ক্যান্সার।

কোলন ক্যান্সার  কাদের হয় ?

 Colon Cancer নারী ও পুরুষ উভয়ের মধ্যে দেখা দিতে পারে এবং এটি আপনার জীবদ্দশার যে কোন সময়েই দেখা দিতে পারে। তবে কোলন ক্যান্সারে পুরুষের আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা নারীদের তুলনায় অনেক বেশি এবং যারা মধ্যবয়স্ক রয়েছেন তারাই তাদের মধ্যে আক্রান্তের প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যায়।

কোলন ক্যান্সার কয় ধরনের হয়ে থাকে ?

সাধারণত আমাদের শরীরে পাঁচ ধরনের Colon Cancer দেখা দিতে

পারে। সে গুলো হল –

 Adenocarcinomas (অ্যাডিনোকার্সিনোমাস)

 Lymphomas (লিম্ফোমাস)

 Sarcoma (সারকোমা)

 Carcinoid (কার্সিনয়েড)

 Gastrointestinal Stromal Tumour (গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল স্ট্রোমাল টিউমার)।

কী কী কারণে আপনার Colon Cancerহতে পারে ?

আমাদের কোলন ক্যান্সার হওয়ার পেছনে রয়েছে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কারণ। কারণগুলো সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত জেনে নিন :

জেনেটিক পরিবর্তন :

আপনার শরীরে যদি কোন জেনেটিক পরিবর্তন বা জিনগত ত্রুটি থাকে তাহলে আপনার কোলনের ভিতরে কোষগুলোর বৃদ্ধি অস্বাভাবিকভাবে হতে পারে। এই কোষগুলো তখন জমাট বেঁধে টিউমার বা পিন্ডের এর মত তৈরী করে। যেটা আমাদের কাছে পলিপ (Polyp) নামেও পরিচিত। যার থেকে পরবর্তীতে আপনার কোলন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

বংশগত কারণে :

আপনার পরিবারের কোন সদস্য যদি আগে থেকে কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত থাকেন তাহলে আপনার শরীরে ও কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।

কোলনে প্রদাহ বা রোগ থাকলে :

আপনার কোলনে ব্যাথা বা প্রদাহ থাকে অথবা আপনি যদি আগে থেকে পলিপে আক্রান্ত থাকেন তাহলে আপনার কোলন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।

স্থলতায় ভুগলে :

আপনি যদি স্থুলতায় ভুগে থাকেন তাহলে আপনার শরীরে কোলন ক্যান্সার দেখা দেয়ার চরম সম্ভাবনা রয়েছে।

ডায়াবেটিস থাকলে :

আপনি যদি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত থাকেন এবং দীর্ঘদিন ধরে যদি আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকে তাহলে আপনার Colon Cancer হওয়ার মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে।

পড়ুন :অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস হলে আপনার শরীরের যে সব অঙ্গ-প্রতঙ্গের ক্ষতি হতে পারে ?

ধূমপান করলে :

আপনি ধূমপান করলে সিগারেটের ভিতরে থাকা ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ আপনার বৃহদান্ত্র বা মলদ্বারকে বিষাক্ত করে তুলতে পারে। যার ফলে কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

অ্যালকোহল জাতীয় দ্রব্য গ্রহণ করলে :

আপনি যদি মদ্যপান এবং অ্যালকোহল জাতীয় দ্রব্য গ্রহণ করেন তাহলে এর ভিতরে থাকা উচ্চ মাত্রার অ্যালকোহল জাতীয় দ্রব্য আপনার মলাশয় বা কোলনের ভিতরে কোষগুলোর অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দেয়। যার ফলে কোলন ক্যান্সার সৃষ্টি হতে পারে।

তৈলাক্ত খাবার খেলে :

আপনি শাক-সবজী বাদ দিয়ে যদি তেল-চর্বি জাতীয় খাবার বেশি খান সেক্ষেত্রে আপনার কোলন ক্যান্সার হতে পারে।

ব্যায়াম ও শরীরচর্চার অভাব :

আপনার ব্যায়াম ও শরীরচর্চার অভাব থাকার কারণে ও আপনার এই ক্যান্সার হতে পারে।

বিকিরণ রশ্মি :

আপনি যদি বিকিরণ রশ্মির কাছে যান তাহলে আপনার কোলন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

কোলন ক্যান্সার হলে যে সব লক্ষণ দেখা দিতে পারে ?


                           কোলন ক্যান্সার হলে শরীরে যে সব লক্ষণ দেখা দিতে পারে ?


সাধারণত কোলন ক্যান্সার হলে আপনার শরীরে নিম্নলিখিত লক্ষ্মণগুলো দেখা দিয়ে থাকে। লক্ষ্মণ গুলো দেখা দিলে আপনাকে সতর্ক হয়ে যেতে হবে। লক্ষ্মণ গুলো হল –

কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দেয়া :

কোলন ক্যান্সার হলে আপনার শরীরের ভিতরে পানির পরিমাণ অনেক কমে যেতে পারে। এর ফলে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা হতে পারে।

ডায়রিয়া :

কোলন ক্যান্সারের সময় আপনার ঘন ঘন ডায়রিয়া সমস্যা ও দেখা দিতে পারে।

মলের সাথে রক্ত পড়া :

আপনার মলের সাথে রক্ত পড়তে পারে যদি আপনার শরীরে কোলন ক্যান্সারের অবস্থান খারাপের দিকে যায়।

মলত্যাগে অস্বাভাবিকতা :

কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ফলে আপনার স্বাভাবিক মলত্যাগের গতি ব্যাহত হতে পারে।

পেটে ব্যাথা করা :

আপনার কোলন ক্যান্সার হলে পেটের চারপাশ ঘিরে অসম্ভব যন্ত্রণা বা ব্যাথা করতে পারে। ধীরে ধীরে যদি আপনার শরীরে এই ব্যাথার প্রবণতা প্রবল আকার ধারণ করলে তাহলে পিঠে ছড়িয়েও পড়তে পারে।

ক্লান্তি অনুভব করা :

কোলন ক্যান্সার হলে আপনার এ সময় ক্লান্তি ভাব বা দূর্বল ভাব দেখা দিতে পারে।

ওজন হ্রাস পাওয়া :

আপনার দেহের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি হ্রাস পেতে থাকে আপনার শরীরে কোলন ক্যান্সারের প্রভাব বেড়ে গেলে।

বৃহদান্ত্রে পূর্ণ অনুভূতি :

কোলন ক্যান্সারের সময় আপনার মলত্যাগের পর অন্ত্র কোন সময় খালি হয় না এমন অনুভূতি থাকে।

কোলন ক্যান্সার হলে কোন ধরনের পরীক্ষা-নীরিক্ষা করা হয় ?

আপনার মলাশয় বা কোলন এ ক্যান্সারের অবস্থান ও ধরণ অনুযায়ী চিকিৎসক নিম্ন লিখিত পরীক্ষা-নীরিক্ষা গুলো করে থাকেন। পরীক্ষা-নীরিক্ষা গুলো হল –

* Stool Test (মল পরীক্ষা)

* Sigmoidoscopy (সিগময়েডোস্কোপি)

* Colonoscopy (কলোনোস্কোপি)

* Imaging Test (ইমেজিং পরীক্ষা)

* Biopsy (বায়োপসি)

উপরিউক্ত পরীক্ষা-নীরিক্ষাগুলো করার আগে অবশ্যই আপনাকে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

 কোলন ক্যান্সার প্রতিকার করার উপায়

কোলন ক্যান্সার হলে সর্বপ্রথমেই আপনাকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এরপর চিকিৎসক আপনার শরীরে ক্যান্সারের অবস্থানের উপর ভিত্তি করে প্রয়োজন বোধে নিচের পদ্ধতিতে চিকিৎসা করে থাকেন। পদ্ধতি গুলো হল –

অস্ত্রোপচার বা সার্জারি :

কোলন ক্যান্সার প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে অর্থাৎ অন্ত্রের প্রাচীরের সাথে সংযুক্ত না থাকলে সাধারণত চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ক্যান্সার কোষ বা পলিপ অপসারণ করে ফেলেন।

বিকিরণ থেরাপি :

এই পদ্ধতিটি কোলন ক্যান্সার সার্জারির পরে দেয়া হয়। এই পদ্ধতি আপনার কোলন ক্যান্সারের কোষগুলো ধ্বংস করতে ব্যাবহার করা হয়।

কেমোথেরাপি :

এই পদ্ধতির মাধ্যমে কোলন ক্যান্সারের কোষগুলোকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে ফেলা হয়।

টার্গেটেড থেরাপি :

এই পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ আপনার শরীরে প্রয়োগ করিয়ে কোলন ক্যান্সারের কোষগুলোর অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি একেবারে বন্ধ করে দেয়া হয়।

কীভাবে আপনার কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করবেন ?

কোলন ক্যান্সার থেকে বাঁচতে হলে আপনাকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি মনোযোগ দিতে হবে এবং সেগুলো ঠিক মত পালন করতে হবে। বিষয়গুলো হল –

জীবনযাত্রার পরিবর্তন করা :

আপনাকে কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করার জন্য সবার আগেই জীবনযাত্রার মানের পরিবর্তন করা দরকার। রোগ-ব্যাথি সম্পর্কে সব সময় সচেতন থাকতে হবে। অসুখ- বিসুখ দেখা দেয়ার সাথে সাথে হেলা-ফেলা না করে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

জাঙ্ক ফুড ত্যাগ করা :

কোলন ক্যান্সার থেকে বাঁচতে হলে আপনাকে অবশ্যই বাইরের তৈরি অস্বাস্থ্যকর খাবার বা জাঙ্ক ফুড বর্জন করতে হবে।

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা :

কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করার জন্য আপনার শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত জরুরি। এজন্য আপনাকে তেল-চর্বি জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।

দৈনন্দিন ব্যায়াম বা শরীরচর্চা করা :

আপনি যদি নিয়মিত যদি শরীরচর্চা এবং ব্যায়াম করেন তাহলে কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে অধিক কার্যকরী ফল পেতে পারেন। তাই প্রতিদিন অন্তত আপনার ৩০ মিনিট শারীরিক ব্যায়াম করা উচিত।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা :

আপনার ডায়াবেটিস থাকলে Colon Cancer থেকে নিজেকে বাঁচাতে হলে অবশ্যই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এই জন্য আপনাকে সব ধরণের মিষ্টিজাতীয় খাবার খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিতে হবে।

ধূমপান এবং মদ্যপান ত্যাগ করা :

কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে হলে সবার প্রথমেই আপনাকে ধূমপান এবং মদ্যপান করা বন্ধ করে দিতে হবে। এর ফলে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থগুলো আপনার বৃহদান্ত্রের ভিতরে প্রবেশ করতে পারবে না এবং কোলনের ভিতরে কোষের বৃদ্ধিও স্বাভাবিক থাকবে।

আঁশজাতীয় খাবার খাওয়া :

আপনাকে কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে হলে ফাইবার বা আঁশজাতীয় খাবার যেমনঃ গাজর, মুলা প্রভৃতি বেশি করে খেতে হবে। এই সব খাবার আপনাকে কোলন ক্যান্সার হওয়া থেকে রক্ষা করবে।

পরিশেষে বলা যায় যে ,

আমরা জানি,  Colon Cancerএকটি মারাত্মক ব্যাধি। কোলন ক্যান্সারের জীবাণু পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়লে বাঁচার আশঙ্কা অনেক কমে যেতে পারে। তাই এর লক্ষ্মণ গুলো সম্পর্কে আমাদের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে এবং লক্ষ্মণ প্রকাশের সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে। কারণ প্রাথমিক অবস্থায় এই রোগের চিকিৎসা করালে আপনি দ্রুতই এই রোগ থেকে সেরে উঠে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবেন। তাই আপনি যদি Colon Cancer থেকে বাঁচতে চান তাহলে অবশ্যই উপরিউক্ত বিষয়গুলোর লক্ষ্য রাখতে হবে এবং সেগুলো মেনে চলতে হবে এবং অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

Post a Comment

Previous Next