মানসিক চাপ (anxiety) কী? কেন হয় এবং এটি থেকে কিভাবে পরিত্রাণ পাবেন। এই সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করা হয়েছে। বিস্তারিত জেনে নিন-
মানসিক চাপ কী কেন হয় এবং এটি থেকে কিভাবে পরিত্রাণ পাবেন |
বর্তমান সারা পৃথিবীতে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল যার মানসিক চাপ( Anxiety) নাই। মানুষের মাঝে এটি এমনভাবে ছড়িয়ে গেছে যে, মানুষ এখন এটিকে কোন সমস্যাই মনে করেন না। অথচ সকল রোগের মূল হচ্ছে এই উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপ। এছাড়াও যারা মারাত্বকভাবে মানসিক চাপে থাকেন তাদের শরীরে নিজের অজান্তেই নানা সমস্যা তৈরি হয়। ফলে সুস্থভাবে জীবন-যাপন করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
আমরা যারা সাধারণ জনতা, তারা এটিকে পেরেশানি বা হয়রানি হিসাবে বেশি চিনি। আর বেশি চেনার কারণও রয়েছে। কেননা ভাইয়ে ভাইয়ে বিবাদ করে দেওয়ানী, দরবারী, বিচার-সালীশ করে যখন ফায়দা পায়না তখন আরো বেশি পেরেশান হয়ে মামলা-মোকদ্দমায় ঘুরতে ঘুরতে নিঃস্ব হয়ে যায়।
এই রকম চিত্র আমাদের দেশে ভুড়ি ভুড়ি। তাই আমরা পেরেশান বা হয়রানি হিসাবে খুব পরিচিত। তবে বিবাদ ছাড়াও যে, আমাদের মাঝে মারাত্বক Anxiety রয়েছে তা আমরা কজন জানি?
সুস্থভাবে জীবন-যাপন করতে হলে এবং জীবনের স্বার্থকতা বা সফলতা অর্জন করতে হলে মানসিক চাপ মুক্ত জীবন শুরু করা আবশ্যক। কেননা যারা Anxiety বা মানসিক চাপে থাকেন তারা কখনই সফল হতে পারেন না কিংবা সুস্থভাবে বেঁচে থাকা তার পক্ষে সম্ভব হয় না।
কিভাবে আপনি মানসিক চাপমুক্ত জীবন গড়বেন এই লেখায় আমি সেটি তুলে ধরার চেষ্টা করছি। উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপ (Anxiety) থেকে পরিত্রাণের উপায় বা মানসিক চাপ রোধের উপায়গুলো আলোচনা করেছি।
What is anxiety? মানসিক চাপ কি?
Anxiety অর্থ উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ। আর উদ্বেগ, উৎকন্ঠা মূলক ব্যাধি হলো এক ধরনের মানসিক ব্যাধি। এর বৈশিষ্ট্য হলো শরীরে উদ্বেগ ও ভয়ের গুরুত্বপূর্ণ অনুভূতি। উদ্বেগ হলো ভবিষ্যতের ঘটনা গুলির বিষয়ে দুশ্চিন্তা আর ভয় হলো বর্তমান ঘটনাগুলির উপরে প্রতিক্রিয়া।
সুতরাং উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপ হচ্ছে একধরণের মানসিক রোগ এবং এটি সুস্থভাবে জীবন-যাপন করতে কিংবা মানুষকে সফল হতে দেয় না ।
সাধারণত মানসিক চাপ মানুষকে অস্তির কিংবা
পেরেশানি করে তোলে। ব্রেন তখন দেহের সকল কাজ সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। ফলে
শরীরে নানা সমস্যা সৃষ্টি হতে শুরু করে।
এছাড়াও Anxiety কারণে শরীরে উদ্বেগ উত্তেজনা বোধ, অতিরিক্ত ঘাম, অস্থিরতা এবং দ্রুত হার্টবিট বাড়াতে পারে। এটির কারণে অনেকের হার্ট এটাক এর মতো জটিল সমস্যাও তৈরি হতে পারে।
মানসিক চাপ (anxiety) কেন হয় ?
Anxiety, বা দুশ্চিন্তা এটি বিভিন্ন কারনে হয়ে থাকে। Cartisol নামক এক ধরনের Hormone আমাদের শরীরে বিদ্যমান রয়েছে। এ Hormone পরিমান যত বাড়বে দুশ্চিন্তা পরিমাণ তত বাড়বে।
সাধারণত একাকিত্ব, পারিবারিক সমস্যা, নির্যাতনের শিকার, সকল ক্ষেত্রে সফল হওয়ার অভিপ্রায় এবং জিনগত কারণে মাত্রাতিরিক্ত দুশ্চিন্তা হয়ে থাকে।
কিভাবে Anxiety বা দুশ্চিন্তা রোধ করবেন?
সৃষ্টিকর্তার প্রতি অবিচল বিশ্বাস ও আস্থা
রাখুন। নিজেকে দক্ষ করে তোলার চেষ্টা করুন। সর্বদা আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন। কোন কাজ
বিফলে গেলে বলুন আল্লাহ আমাকে পরীক্ষা করছেন, আমি সফল হওয়া চেষ্টা করবো, তবে আমার কি
কি ভুল রয়েছে তা আগে সংশোধন করে নিব।
আপনার যদি খুব মারাত্বক আকারে এংজাইটি
হয় এবং নিজেকে কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে না পারেন, তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে
হবে।
বিপদের সময়ও আপনার মানসিক চাপ হতে পারে,
তাই এই সময় ধর্য্য ধারণ করুন এবং আল্লাহর উপর ভরসা করুন। ধর্য্য ধারণ করা মানুষের শুধু
মহৎ গুণ নয় এটি একটি বড় ইবাদতও বটে।
দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপ দূর করা যায়?
জ্বী, চিকিৎসার মাধ্যমে কি উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা
বা মানসিক চাপ দূর করা সম্ভব। এজন্য আপনাকে
একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
আমি যতটুকু জানি, চিকিৎসার মাধ্যমে এংজাইটি
দূর করার পর আবার আপনার এটি হতে পারে। এজন্য মানসিক চাপ রোধের উপায় গুলো অনুসরণ করা
জরুরী। নিচে anxiety রোধের উপায়গুলো আলোচনা করা হলো।
আরও পড়ুন :
হার্ট অ্যাটাক কি ? হার্ট অ্যাটাক কেন হয়? হার্ট অ্যাটাক থেকে বাচার উপায়
মানসিক চাপ রোধের উপায় গুলো কি কি?
বেশ কিছু উপায় রয়েছে যেগুলো আপনি পালন
করলে মানসিক চাপ মুক্ত থাকতে পারবেন। পৃথিবীতে সকল জ্ঞানী ব্যাক্তিরা এই উপায়গুলো অনুসরণ
করে থাকেন। যারা বিখ্যাত হয়েছেন তারা প্রায় সবাই এগুলো উপায় অবলম্বন করে জীবন-যাবন
করেছেন। সেই উপায়গুলো কি কি নিচে দেওয়া হলো।
সর্বদা নিজেকে ব্যস্ত রাখুনঃ
দুশ্চিন্তা থেকে দূরে থাকতে হলে সবসময় নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। আপনার মস্তিষ্ক এবং হাত ব্যস্ত থাকে এমন কোন কাজ করুন। যখন আপনার হতে কোন কাজ থাকে
না তখন বই পড়া, খেলাধুলা করা কিংবা শরীর চর্চা মতো কাজে নিয়োজিত হোন। এতে আপনার দুটি
লাভ হবে।
খেলাধূলায় বা শরীর চর্বা কিংবা ব্যায়াম করলে দেহের সুস্থতা বৃদ্ধি পাবে আর বই পড়লে জ্ঞান বাড়বে।
মন থেকে ক্ষোভ ঝেড়ে ফেলুনঃ
মনের মধ্যে ক্ষোভ জমে থাকলে তা ঝেড়ে ফেলুন। ক্ষোভ জমা করে রাখলে মানসিক চাপ বেড়ে যায়। ডক্টর সিমন্স বলেন, আপনি ভাবতেই পারবেন না মনের মধ্যে ক্ষোভ জমা থাকলে তা কত দ্রুত এবং দীর্ঘ সময় ধরে শরীরের ক্ষতি সাধন করে।
এছাড়া যে ব্যক্তি কারো প্রতি ক্ষোভ রাখে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না। ইসলামী বিশেষজ্ঞদের মুখ থেকে এমনটি শোনা যায়। তাই মন থেকে ক্ষোভ ঝেড়ে ফেলুন। তাহলে অনেকটা দুশ্চিন্তা থেকেই দূরে থাকতে পারবেন।
অধিক বাস্তববাদী হওয়া থেকে বিরত থাকুনঃ
কিছু মানুষ ভবিষ্যতে কি ঘটতে পারে এই আশংকায় নিয়ে অযথা উৎকন্ঠিত ও চিন্তিত হয়ে পড়েন, হায় হুতাশ করেন। আমাদের মনে রাখতে হবে জীবন মানে কিছু সমস্যা থাকবে এবং এমন কিছু ঘটনা ঘটতে পারে যা জীবনে কাম্য নয়।
সব সমস্যার সমাধান রয়েছে ও সময়ের সাথে সাথে সব কিছু ঠিক হয়ে যায়। জীবন মানেই দুঃখ আর কষ্ট উভয়ের মেলামেশা। তবে কষ্টের পরই সুস্থি রয়েছে। কাজেই বাস্তব পরিস্থিতি মেনে নিয়ে তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলার মানসিকতা গ্রহণ করতে হবে।ফলে দুশ্চিন্তা কিছুটা কমে যাবে।
নির্ভুল হওয়া চিন্তা বা ধারণা করা পরিহার করুনঃ
অধ্যাপক ইসলামী হেফনারের মতে,এ ধরনের অতিরিক্ত খুঁতখুঁত মনোভাব তৈরী করে। স্কলারদের থেকে জানা যায়,
ইসলামে ধারণা করা থেকে নিষেধ করা হয়েছে। তাই কোন মুসলমানে অধিক ধারণা করা উচিৎ নয়।
যদি ইসলাম মানেন তাহলে অধিক ধারণা করতে পারেন না।
গবেষণায় থেকে জানা যায়, শত্রুভাবাপন্ন মনোভাব উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার মূল কারন। যা হৃদরোগ ডেকে আনে।তাই সব সময় ভালো চিন্তা করুন। এবং সবার সাথে ভালো ব্যবহার করুন।এতে anxiety থেকে অনেক টা নিরাময় পাওয়া যায়।
ক্যাফেইন জাতীয় খাবার কমিয়ে দিনঃ
ক্যাফেইন খুব দ্রুত আপনার ইন্দ্রিয় কে সজাগ করে তুলবে এবং মানসিক চাপ বর্ধক হরমোনের পরিমান বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই ঘন ঘন চা কফি খাওয়ার অভ্যাস ছাড়ুন।
কেননা এসব খাবারে প্রচুর পরিমাণে ক্যাফেইন থাকে। এমনকি জিরো ক্যালরি কিংবা চিনিহীন বলে বাজারজাত করা, কোমল পানীয় থেকেও নিজেকে দূরে রাখুন।
দুশ্চিন্তার কারণ তালিকা করুনঃ
আপনার মনে এমনও হতে পারে যে, আপনি শত শত সমস্যা ভুগছেন। তাই আপনার দুশ্চিন্তার কারন গুলোর একটা তালিকা তৈরি করুন। দেখবেন এর মধ্যে কিছু সমস্যা থাকবে যেগুলো কম বেশি সবার থাকে।
আপনি উপলব্ধি করবেন যে আপনার আসলে দুশ্চিন্তা করার খুব বেশি কারন নেই।এটা আপনার দুশ্চিন্তা কমাতে এবং আপনাকে মানসিক ভাবে শান্তি দিতে সহায়তা করবে।
মাঝে মাঝে বন্ধুদের সাথে সময় কাটানঃ
এমনকি আপনার শরীরে কখন হৃদরোগ ধরা না পড়লে ও ক্ষতির আশংকা থেকে যায়। তাই একাকি ঘরে বসে না থেকে বন্ধুদের সঙ্গে বের হয়ে পড়ুন।
সামাজিক পরিবেশ উপভোগ করুন। চারপাশের অবস্থা জানুন। প্রকৃতির সুন্দর সুন্দর নানা বৈচিত্র দেখে তৃপ্তি অনুভূব করুন।
প্রান খুলে হাসুন:
প্রাণ খুলে হাসার অনেক টিপস রয়েছে। আপনার
গিন্নি বা হাজবেন্ডকে কাতুকুতু দিতে শুরু করুন। দেখবেন আপনার কাতুকুতুতে সে হাসতে শুরু
করবে। তার দেখাদেখি আপনিও প্রাণ খুলে হাসতে পারবেন। তবে আমার মতো যারা এখনো অবিবাহিত
রয়েছেন, তারা চোখ বন্ধ করে হাসুন যাতে কেউ না দেখে। বাকি টিপসগুলো নিজে নিজে প্রাকটিস
করুন।
হাসি নিয়ে ২০০৫ সালে একটি গবেষণায় হয়েছে। সেখান থেকে জানা যায়, সবসময় গম্ভীর থাকার বদলে প্রাণ খুলে হাসলে শরীরের শতকরা বিশভাগেরও বেশি ক্যালরি পোড়ানো যায়।
নিয়মিত আমোদ প্রমোদ হৃদস্পন্দনের হার বাড়িয়ে দেয়। মনকে উৎফুল্ল করে তোলে।
তাই ঠোঁটের কোনে সবসময় এক চিলতে হাসি রাখুন কিংবা পারলে মন খুলে হাসুন কিংবা চোখ বন্ধ করে
হলেও হাসুন।
ডায়েরি লিখুন বা লেখার অভ্যাস করুনঃ
আপনি হয়তো কখনো ডায়েরি লেখননি,যে বিষয়টি আপনাকে কষ্ট দিচ্ছে সেটি একটি ডায়েরি নোট করে ফেলুন। ডায়েরি লিখার অভ্যাসটি আপনাকে মানসিক চাপ কমাতে অনেকটা সাহায্য করবে।
ডায়রিতে না লিখলে আপনার মাথা
থেকে উক্ত বিষয়টি সহজে ছাড়বে না। তাই ডাইরিতে লিখে মনকে বুঝান যে, বিষয়টিতো ডাইরিতে
লিখা রয়েছে। এখন এটি মাথায় ঘুর ঘুর করাতো কোন মানে হয় না।
পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান:
কেননা ঘুম থেকে ভালো stress losser আর কিছু হতে পারে না। তাই যখন কোনো কিছুই আর ভালো লাগবে না মনে হবে, তখন কোন কিছুতেই মন দিতে পারবেন না। তাই একটু নিরিবিলি জায়গায় দেখে ঘুমিয়ে নিন। এতে মনে শান্তি পাবেন
এবং দুশ্চিন্তাও কেটে যাবে।
শেষকথাঃ
আশাকরি, উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা বা মানসিক
চাপ কী? কেন হয় এবং পরিত্রাণ পাবেন
কিভাবে? এই বিষয়ে আপনাকে এই লেখাটির মাধ্যমে বুঝাতে পেরেছি। আমি একজন সুখী মানুষ, আমার
কোন দুশ্চিন্তা নেই, সবসময় হাসিখুশি থাকি। লেখালেখি করতে ভাল লাগে। মাঝে মাঝে বিপদে
পড়লে হতাশা না হয়ে ধর্য্য ধারণ করি।
আপনিও হাসুন, খুশি অনুভূব করুন, সুস্থ ও সুন্দর জীবন উপভোগ করুন। কাছের মানুষের সাথে মাঝে মাঝে আমদপ্রমোদ করুন। লাইফ পার্টনার চিন্তিত থাকলে কাতুকুতু দিয়ে হলেও তাকে একটু হাসান এবং নিজেও হাসুন।